Advertisement
E-Paper

বেহাল রাস্তায় খন্দ এড়াতে বাস-দুর্ঘটনা

খানাখন্দে ভরা রাস্তা, কোথাও পিচ উঠে গিয়েছে, কোথাও আবার পিচ-বোল্ডার কিছুই নেই। রাস্তা ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। সেই খন্দ পথে দ্রুতবেগে যাওয়ার সময় গর্তে ব্রেক কষতেই গাড়ির সামনের যন্ত্রাংশ ভেঙে রাস্তাতেই উল্টে গেল একটি বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
পিচ উঠে বেরিয়ে পড়েছে গর্ত। তার জেরেই দুর্ঘটনা।—নিজস্ব চিত্র।

পিচ উঠে বেরিয়ে পড়েছে গর্ত। তার জেরেই দুর্ঘটনা।—নিজস্ব চিত্র।

খানাখন্দে ভরা রাস্তা, কোথাও পিচ উঠে গিয়েছে, কোথাও আবার পিচ-বোল্ডার কিছুই নেই। রাস্তা ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। সেই খন্দ পথে দ্রুতবেগে যাওয়ার সময় গর্তে ব্রেক কষতেই গাড়ির সামনের যন্ত্রাংশ ভেঙে রাস্তাতেই উল্টে গেল একটি বাস। মৃত্যু হল এক যাত্রীর, আহত হলেন চালক-সহ ৪৫ জন। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ এই দুর্ঘটনাটি ঘটে খাতড়া থানার সাবুবাইদ মোড় থেকে দহলার মাঝে, খাতড়া-সিমলাপাল রাস্তায়। দুর্ঘটনার পরেই ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুক্ষণের জন্য রাস্তা অবরোধ করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বিজয় সহিস (২২)। তাঁর বাড়ি সিমলাপাল থানার পুখুরিয়া গ্রামে। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় গ্রামের মানুষ এবং খাতড়া থানার আইসি রমেন্দ্রনাথ সিংহ পুলিশবাহিনী নিয়ে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। দুর্ঘটনার জেরে ওই রাস্তায় প্রায় চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ ক্রেন দিয়ে বাসটি রাস্তার পাশে সরানোর পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, “বাস দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু ও ৪৫ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বাঁকুড়া থেকে খাতড়া, সিমলাপাল হয়ে ভূতশহরে ওই বেসরকারি বাসটি যাচ্ছিল। বাসে প্রায় ৫০ জন যাত্রী ছিলেন। খাতড়ার সাবুবাইদ মোড় থেকে কিছুটা দূরে দহলার আগে বাসের সামনের যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। চালক নিয়ন্ত্রণ সামলাতে না পারায় রাস্তার উপরেই বাসটি উল্টে যায়। স্থানীয় দহলা, ধারগ্রাম, সাবুবাইদ, বিরখাম-সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ ছুটে এসে উদ্ধারে নামেন। খবর পেয়ে সেখানে যায় খাতড়া থানার পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়াররা। আহতদের মধ্যে ৪৫ জনকে খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁদের মধ্যে বিজয় সহিসকে চিকিত্‌সক মৃত বলে জানান। প্রাথমিক চিকিত্‌সার পরে ১৯ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত ৯ জনকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে।

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরেই উল্টে রয়েছে বাসটি। যান চলাচল বন্ধ থাকায় রাস্তার দু’পাশে গাড়ির লম্বা লাইন। ওই বাসের আহত যাত্রী অমিত দুলে, কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “হঠাত্‌ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগল। কিছু বুঝে ওঠার আগে মুহূর্তের মধ্যে দেখি বাসটা ঘুরে একবার কাত হয়ে গেল। ফের আরও একবার কাত হল। একে অন্যের গায়ে ছিটকে পড়লাম।”

খাতড়া থেকে সিমলাপাল যাওয়ার রাস্তায় সাবুবাইদ, ধারগ্রাম, দহলা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় রাস্তার অবস্থা খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁদের দাবি, রাস্তার ওই হালের জন্যই এ দিন দুর্ঘটনা ঘটেছে। খাতড়া ও সিমলাপাল ব্লকের ৫টি পঞ্চায়েতের প্রায় ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। এই রাস্তায় দৈনিক গড়ে বাস, ট্রাক, বড় ও ছোট গাড়ি মিলিয়ে শ’খানেক খানেক গাড়ি চলাচল করে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাস্তার অনেক জায়গায় ছোট-বড় গর্ত। দীর্ঘদিন ধরে মেরামতি না হওয়ায় বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে। দু’টি গাড়ি মুখোমুখি হলে পাশ কাটানোর জায়গা থাকে না। তবু রাস্তা সংস্কারে হুঁশ নেই প্রশাসনের।

ধারগ্রামের বাসিন্দা আশিস মল্লিক, দহলা গ্রামের বাবলু কুম্ভকার, ডাকাই গ্রামের ভৈরব রায় বলেন, “বৃষ্টিতে রাস্তার অনেক জায়গা ভেঙে গিয়েছে। পুজোর পরেও রাস্তা সংস্কার করা হয়নি।” গ্রামবাসীর ক্ষোভ, রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। গাড়ি চালকরা জানিয়েছেন, গর্তে পড়ে প্রায়দিনই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে। সাবধানে চালাতে গিয়ে দেরি হওয়ায় সময় মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছনো যাচ্ছে না।

তবে ওই রাস্তার হাল যে বেশ খারাপ তা মানতে চাননি খাতড়ার বিডিও অনুসূয়া ভট্টাচার্য। তিনি দাবি করেছেন, বর্ষার আগে ওই রাস্তায় আংশিক সংস্কার করা হয়েছিল। তা টেকেনি। এখন রাস্তার কিছু জায়গায় গর্ত হয়েছে ঠিকই। তা সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” তাঁর আশা, শীঘ্রই ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ হবে। রাজ্য পূর্ত দফতরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এক আধিকারিক বলেন, “ওই রাস্তাগুলি ভালোভাবে সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।”

khatra bus accident death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy