Advertisement
E-Paper

বন্ধ পুজো বাঁচাতে এগিয়ে এল স্বনির্ভর দল

পুজোর আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। কিন্তু কাজ তো তেমন এগোয়নি। তাই ব্যস্ততার শেষ নেই রূপালী ঘোষ, পূর্ণিমা হাজরা, শান্তা হাজরা, মঞ্জু জমাদারদের। বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা তোলা, হিসেব রাখা, সব ব্যবস্থা ঠিক ভাবে এগোচ্ছে কি না দিনরাত এক করে এ সব কিছুরই তদারকি করছেন ওঁরা।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৬
চাঁদা তুলছেন স্বনির্ভর দলের সদস্যরা।  —নিজস্ব চিত্র

চাঁদা তুলছেন স্বনির্ভর দলের সদস্যরা। —নিজস্ব চিত্র

পুজোর আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। কিন্তু কাজ তো তেমন এগোয়নি। তাই ব্যস্ততার শেষ নেই রূপালী ঘোষ, পূর্ণিমা হাজরা, শান্তা হাজরা, মঞ্জু জমাদারদের। বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা তোলা, হিসেব রাখা, সব ব্যবস্থা ঠিক ভাবে এগোচ্ছে কি না দিনরাত এক করে এ সব কিছুরই তদারকি করছেন ওঁরা। ওঁঁরা মানে, দুবরাজপুরের নিরাময় গিরিডাঙাল আভা মহিলা স্বনির্ভর দলের সদস্যেরা। দুবরাজপুর নিরাময় যক্ষা হাসপাতাল চত্বরে গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকা দুর্গাপুজোর দায়িত্ব এ বার তাঁরাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ঘটনা হল, ওই মহিলারা এগিয়ে না এলে এই প্রথম ওই দুর্গাপুজোর আয়োজন বন্ধ হয়ে যেত।

কেন এমনটা হত?

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে জেলা ও লাগোয়া এলাকার যক্ষা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশিষ্ট চিকিৎসক গুনেন্দ্রনারায়ণ রায়ের হাত ধরে যে বিশাল হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়েছিল, পরে তা-ই ‘নিরাময় টিবি সেনেটারিয়াম’-এ রূপান্তরিত হয়। এবং হাসপাতালের দায়িত্ব নেয় রাজ্য সরকার। পরিকাঠামোর দিক থেকে যথেষ্ট উঁচু মানের ওই হাসপাতাল বছর দশেক ধরে নিজেই ক্ষয় রোগে ভুগছে। বিশেষত স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স ও চিকিৎসকের অভাবে একসময় ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের ইন্ডোর বিভাগ দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। যক্ষা রোগের চিকিৎসায় ডটস্ (ডাইরেক্ট অবজার্ভেশন ট্রিটমেন্ট) চালু হওয়ার পর থেকে অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। যেখানে একসময় ১৪ জন চিকিৎসক, ৭৫ জন নার্স এবং বহু স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন, সেই হাসপাতালে এখন মাত্র দু’জন চিকিৎসক (যাঁদের একজন হাসপাতালের সুপার পদে, অন্য জন অন্য হাসপাতালে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন) আছেন। নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, চতুর্থশ্রেণির কর্মীর মিলিত সংখ্যা কুড়ির নীচে। জরাজীর্ণ হাসপাতালের জানালা, দরজা, ফ্যান, আসবাব এমনকী বিশাল হাসপাতাল চত্বরের গাছ চুরি হওয়াও নিত্য নৈমিত্যিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে হাসপাতালের এমন দৈন দশা, সেখানে কেউ দুর্গাপুজো করার সাহস দেখাবেন কীভাবে?

এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার মিতালি কবিরাজ। তিনি বলেন, “এখানে বহু বছর ধরে হাসপাতালের সকলে মিলেই দুর্গাপুজো করেন। কিন্তু এত কম সংখ্যক স্টাফ ও টাকা নিয়ে দুর্গাপুজো সম্ভব নয়। সেটা ভেবেই এ বার আর তা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছিল।” তিনি জানান, দুর্গাপুজো করার জন্য লোকবল আর অর্থবল, দুটোই ভীষণ দরকার। তাঁর কথায়, “শেষে স্বনির্ভর দলের মেয়েরা যখন আমার কাছে এসে জানালেন, তাঁরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে চান, তখন সব দিক ঠিক ভাবে মেনে পুজো করতে পারলে আমার আপত্তির কিছু নেই বলে জানিয়ে দিই।”

আসলে বহু বছর ধরে দেখে আসা হাসপাতাল চত্বরের ওই পুজো আর হবে না, এই খবরটা পেয়ে ভীষণ মন খরাপ হয়ে গিয়েছিল রূপালীদেবীদের। ওই স্বনির্ভর দলের সদস্যেরা বলছেন, “এত দিন ধরে যে রেওয়াজ চলছে, সেটা হঠাৎ এ ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে! এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি। তাই এগিয়ে এলাম।” তাঁদের আয়োজন করা ওই দুর্গাপুজোতেই এ বার এলাকার ছেলেমেয়েরা আনন্দ করবে। তাঁরাও বাড়িতে না বসে থেকে পুষ্পাঞ্জলি দিতে আসবেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১১ হাজার ১১১ টাকা উঠেছে। স্বনির্ভর দলের মেয়েদের আশা, অঙ্কটা ৪০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছবে। ভাল ভাবেই হবে এ বারের দুর্গাপুজো। তবে, শুধুই স্বনির্ভর দলের মহিলারাই পুজোটা করছেন এমনটা ভাবলে ভুল হবে। নিরাময় সংলগ্ন লোকালয় গিরিডাঙাল, সেখানকার কমবেশি ১০০টি আদিবাসী পরিবার দুর্গাপুজোর আয়োজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ওই মহিলাদের সঙ্গ দিচ্ছেন। প্রত্যেকে সাধ্যমতো চাঁদাও দিচ্ছেন। সোম সরেন, বোয়া টুডু, রাগিনী সরেন, ফুলমণি টুডুরা বলছেন, “আমরা সবাই পুজোয় আনন্দ করি। এমনিতে দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর থেকে জোর কদমে দাশাই পরব শুরু হয়। শেষ হয় দশমীর দিন। তাই আনন্দ করার তফাত খুঁজি না। বোধন থেকে বিসর্জন, সব সময় আমরা পাশে আছি!”

অবশ্য ওই পুজোর জন্য চাঁদা তোলা সীমিত রয়েছে হাসপাতালের কর্মী, চিকিৎসক এবং ওই পাড়ার মধ্যেই। সে ক্ষেত্রে আন্তরিকতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা একটা উদাহরণেই স্পষ্ট। বিধবা সঞ্জু হাজরা প্রতিমার খরচ দিচ্ছেন। সঞ্জুদেবী দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চতুর্থশ্রেণির কর্মী। স্বামী মারা যাওয়ার পর (যিনি নিরাময় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন) তিনি ওই চাকরি পেয়েছে। এ দিন মহিলা বললেন, “ছেলেমেয়েরা আনন্দ করবে, তাই প্রতিমা গড়ার খরচ দিচ্ছি। তা ছাড়া এতদিনের পুজো বন্ধ হবে? সেটা মানব কী ভাবে!”

সকলের এখন একটাই প্রার্থনা, পুজোর মতো এই হাসপাতালও যেন নতুন করে বেঁচে উঠুক!

dayal sengupta pujo dubrajpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy