Advertisement
E-Paper

ভাড়াটে খুনিও থাকতে পারে, দাবি নেপালের

কংগ্রেস কর্মী জয়ন্ত কুমারকে কেন এ ভাবে বাড়ি থেকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হল, বুধবার দিনভর এ প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে বলরামপুরের দেউলি গ্রামে। দু’দিন নিখোঁজ থাকার পরে এ দিন সকালে গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে ইচাডির গভীর জঙ্গলে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০০:২৮
নিহত জয়ন্ত কুমার

নিহত জয়ন্ত কুমার

কংগ্রেস কর্মী জয়ন্ত কুমারকে কেন এ ভাবে বাড়ি থেকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হল, বুধবার দিনভর এ প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে বলরামপুরের দেউলি গ্রামে। দু’দিন নিখোঁজ থাকার পরে এ দিন সকালে গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে ইচাডির গভীর জঙ্গলে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জয়ন্তকে অপহরণের অভিযোগ করে ঘিরে গত দু’দিন ধরেই কংগ্রেস-তৃণমূল চাপানউতোরে এলাকায় উত্তেজনা ছিল। এ বার জয়ন্তর খুনের বিষয়টি সামনে আসায় সেই তরজা আরও তীব্র হয়েছে।

কে ছিলেন এই জয়ন্ত?

এক সাধারণ গ্রাম্য পরিবারের এই যুবক দেউলি গ্রামে দর্জির দোকান চালাতেন। পাশাপাশি, তিনি ছিলেন এলাকার সক্রিয় কংগ্রেস কর্মী। এলাকায় দলের সংগঠন বাড়াতে উদ্যোগীও হয়েছিলেন জয়ন্ত। পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেসের নেতারা জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটে জয়ন্ত কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর হয়ে এলাকায় প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই নেপালবাবুর অভিযোগ, “জয়ন্ত ওই এলাকায় আমাদের কাযর্করী সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছিল। যার জন্যই জমি সংক্রান্ত বিবাদের বিষয়টিকে সামনে রেখে ওকে খুন করা হয়েছে। তৃণমূলের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, “যেভাবে থেঁতলে জয়ন্তকে মারা হয়েছে, তাতে ঘটনায় ভাড়াটে খুনিরা জড়িত থাকতে পারে। পুলিশের এই বিষয়টি তদন্ত করা দরকার।” জয়ন্তকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তাঁর বাবা সোমবার বলরামপুর থানায় ১৫ জনের নামে অভিযোগ করেছিলেন। অভিযুক্তদের অনেকেই এলাকার পরিচিত তৃণমূল কর্মী। কেউ কেউ নেতৃস্থানীয়ও বটে। অভিযুক্তদের মধ্যে পুলিশ এক জনকেই গ্রেফতার করতে পেরেছে। বাকিরা এলাকায় নেই বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য।

নিহত জয়ন্ত কুমারের দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার পথে শিমুলিয়া মোড়ে পুলিশের গাড়ি আটকে
বিক্ষোভ কংগ্রেস কর্মীদের। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।

যদিও বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, তৃণমূলের সুদীপ মাহাতোর দাবি, “জয়ন্ত কংগ্রেস করলেও এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এ কথা আমি আগেও বলেছি। ঘটনায় অহেতুক রাজনীতির রং লাগানো হচ্ছে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতোও বলেছেন, “এই খুনের সঙ্গে গ্রাম্য জমি সংক্রান্ত বিবাদের জের রয়েছে।”

কী বলছে নিহতের পরিবার?

জয়ন্তর দাদা বিকাশ পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ তো আমাকে অপহরণের অভিযোগই তুলে নিতে বলেছিল! এ-ও বলেছিল, নেপালবাবু ও সুভাষবাবুর (ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সুভাষ দাস) সঙ্গ ছাড়তে।” তাঁর আরও অভিযোগ, বলরামপুর থানার এক পুলিশকর্মী তাঁকে বলেছিলেন, অপহরণের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিলে জয়ন্তকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এই সূত্রেই জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রশ্ন তুলেছেন, “তা হলে কি অপহরণকারীদের পাশাপাশি ওই পুলিশ কর্মীও কি জানতেন, জয়ন্ত কোথায় রয়েছে?”

কেন তাঁর ভাইকে এ ভাবে খুন করা হবে, সে প্রশ্নের জবাবে বিকাশ বলেন, “সেটা কী করে জানব? তবে ওই যে আমাদের ঘরে হামলা হওয়ার পরে আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। সেটাও কারণ হতে পারে।” গত সপ্তাহে কিছু লোক বিকাশদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, জয়ন্তই শনিবার তাঁর বৌদিকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন সে ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে। এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে নিবার্চনী ময়দানে নামা ডাকাবুকো যুবক জয়ন্তর আততায়ীদের ‘টার্গেট’ হয়ে যাওয়ার পিছনে এটাও একটা কারণ হতে পারে বলে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে নেপালবাবু বলেছেন, “প্রথমবার যখন জয়ন্ত আর ওর বৌদি পুলিশের কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিল, তখনই পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিলে অপহরণকারীরা ওকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সাহস পেত না।”

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে জয়ন্তর দেহ বুধবার বিকেলে নিয়ে আসা হয় দেউলি গ্রামে। জয়ন্তর দেহ মেলার খবর পাওয়ার পর থেকেই গ্রাম ছিল থমথমে। সকাল থেকেই ছিল পুলিশি টহল। বলরামপুরে কড়া পুলিশি প্রহরায় মরদেহ নিয়ে মিছিল হয়। জয়ন্তর বাবা মহাবীর কুমার এ দিন দেউলি গ্রামে নিজের বাড়িতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাবেই অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলে কংগ্রেস করতেন। তা এলাকার তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীর সহ্য হয়নি। তাই ওকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও শান্তিরাম মাহাতো বলেছেন, “তৃণমূল কখনওই খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। তা হলেই সত্য সামনে আসবে।”

murder of congress supporter prasanta pal deuli balarampur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy