Advertisement
E-Paper

মাকে মেরেছে দাদাই, পুলিশকে জানাল ভাই

পুলিশকে ফোন করে বৌমা জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকে খুন করেছে তাঁর শাশুড়িকে। বাধা দিতে গিয়ে জখম হয়েছেন তাঁর স্বামী। খবরটা পেয়েই আদ্রা রেলশহরের পাশের এলাকা পাঁচুডাঙায় পৌঁছে যায় রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। কিন্তু, নিহত মহিলার স্কুলপড়ুয়া ছোট ছেলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে, তার দাদাই মাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছেন। আর সেটা ঢাকতে ডাকাতির গল্প ফেঁদেছেন বৌদি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৮
লক্ষ্মী ভাটকর।

লক্ষ্মী ভাটকর।

পুলিশকে ফোন করে বৌমা জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকে খুন করেছে তাঁর শাশুড়িকে। বাধা দিতে গিয়ে জখম হয়েছেন তাঁর স্বামী। খবরটা পেয়েই আদ্রা রেলশহরের পাশের এলাকা পাঁচুডাঙায় পৌঁছে যায় রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। কিন্তু, নিহত মহিলার স্কুলপড়ুয়া ছোট ছেলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে, তার দাদাই মাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছেন। আর সেটা ঢাকতে ডাকাতির গল্প ফেঁদেছেন বৌদি।

বৃহস্পতিবার সকালের ওই ঘটনায় পুলিশ নিহত লক্ষ্মী ভাটকরের (৫৫) বড় ছেলে দীপক ও তাঁর স্ত্রী অঞ্জলিকে আটক করেছে। দীপককে রঘুনাথপুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে নিজেকে দাবি করেছে দীপকের ভাই, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বান্টি। পরে পুলিশের কাছে দাদার বিরুদ্ধে মাকে খুন করার অভিযোগও করেছে ওই কিশোর। পুলিশ সূত্রের খবর, লক্ষ্মীদেবীর গলায়, বুকে, পিঠে গভীর আঘাত রয়েছে। রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দীপকের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই ওই মহিলা খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে।” এ দিন বান্টিকে দিয়ে রঘুনাথপুর আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানোর ব্যবস্থাও পুলিশ করিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচুডাঙায় নিজেদের দোতলা বাড়িতে বড় ছেলে দীপক, বৌমা অঞ্জলি ওরফে বিজেতা, ছোট ছেলে বান্টি এবং প্রতিবন্ধী মেয়ে গুড়িয়াকে নিয়ে থাকতেন লক্ষ্মীদেবী। তাঁর স্বামী মুন্না ভাটকর চার বছর ধরে নিখোঁজ। মুন্নার তেজারতির কারবার ছিল। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার পরে পড়শি তথা স্বামীর বন্ধুস্থানীয় এক ব্যক্তির সাহায্যে ওই কারবার চালাতেন লক্ষ্মীদেবী। বড় ছেলে দীপক একই ব্যবসায় যুক্ত। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, দীপকের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল না লক্ষ্মীদেবীর। বাড়ির নীচের তলায় স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে থাকেন দীপক। দোতলায় ছোট ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন লক্ষ্মীদেবী।

ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?

পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ দীপকের স্ত্রী অঞ্জলি রঘুনাথপুর থানায় ফোন করে শাশুড়িকে খুনের কথা জানান। তিনি দাবি করেন, বাড়িতে কিছু দুষ্কৃতী ঢুকে লক্ষ্মীদেবীকে খুন করেছে। বাধা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ধারালো অস্ত্রে জখম হয়েছেন স্বামী দীপকও। তিনি নিজে কোন রকমে বাড়ি ছাদে উঠে পুলিশকে ফোন করছেন। তদন্তে গিয়ে দীপককে জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। তাঁর দুই হাতেই ধারালো অস্ত্রের ক্ষতচিহ্ন। দোতলার একটি ঘরে পড়েছিল লক্ষ্মীদেবীর রক্তাক্ত দেহ।

পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছে বান্টি। —নিজস্ব চিত্র

পরে ঘটনাস্থলে যান, রঘুনাথপুরের এসডিপিও এবং সিআই সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহত মহিলার ছোট ছেলে বান্টি পুলিশের কাছে দাবি করে, এ দিন ভোরে জল আনতে নীচে নেমেছিল সে। তখন সে দেখে দাদা দীপক উপরে উঠছেন। কিছু পরে উপর থেকে আর্তনাদের আওয়াজ শুনে সে দৌড়ে গিয়ে দেখে, ছুরি নিয়ে মাকে কোপ মারছেন দীপক। বান্টির দাবি, “আমি চিৎকার করলে দাদা ছুরি নিয়ে আমার দিকেও তেড়ে আসে। আমি বোনকে নিয়ে কোনও রকমে বাথরুমে ঢুকে পড়ি।”

পুলিশ জানিয়েছে, বান্টির চিৎকারে লোকজন চলে আসে। দীপককে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। অঞ্জলিকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বান্টি ও গুড়িয়াকে আপাতত আদ্রার মনিপুর গ্রামের একটি হোমে রাখা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে ও পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, সম্পত্তি ও ব্যবসার মালিকানা নিয়ে মায়ের সঙ্গে বিরোধ চলছিল দীপকের। তেজারতির কারবারে ভালই আয় করতেন লক্ষ্মীদেবী। ব্যাঙ্কে কয়েক লক্ষ টাকা রয়েছে তাঁর। হাসপাতালে শুয়ে দীপক অবশ্য এ দিন দাবি করেন “তেজারতির কারবার ঘিরে কয়েক জনের সঙ্গে মায়ের বিবাদ চলছিল। তারাই এ দিন সকালে বাড়িতে ঢুকে মাকে খুন করেছে। বাধা দিতে গিয়ে আমি জখম হই।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দীপককে প্রাথমিক ভাবে জেরা করা হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পরে আরও ভাল ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

raghunathpur murder son elder brother
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy