Advertisement
০৫ মে ২০২৪
শালতোড়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের নালিশ

মাত্র ছ’দিনেই চার্জশিট জমা দিল পুলিশ

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যখন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে, তখন বেনজির দ্রুততায় ধর্ষণের অভিযোগের চার্জশিট পেশ করল বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার পুলিশ। মাত্র ছ’দিনেই ওই চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২১
Share: Save:

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যখন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে, তখন বেনজির দ্রুততায় ধর্ষণের অভিযোগের চার্জশিট পেশ করল বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার পুলিশ। মাত্র ছ’দিনেই ওই চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।

শালতোড়ার একটি গ্রামের আট স্কুলছাত্রীকে (প্রত্যেকেই শিশু) গত ১৩ জানুয়ারি যৌন নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছিল পুলকারের চালকের বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রীরা পুরুলিয়া নিতুড়িয়া এলাকার একটি স্কুলে পড়ে। ঘটনার দিন স্কুলে পিকনিক ছিল। অভিযোগ, সেখান থেকে ফেরার পথে একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ওই ছাত্রীদের যৌন নিগ্রহ করে তাদের গাড়ির চালক রাজা কাঞ্জিলাল। যদিও পরের দিন শালতোড়া থানায় কেবল একটি ছাত্রীর পরিবারের তরফেই অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ শালতোড়ার শিরপুড়া গ্রামের বাসিন্দা রাজাকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ হওয়ার ছ’দিনের মাথায়, মঙ্গলবার বাঁকুড়া আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে শালতোড়া পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতী দণ্ডবিধির ৩৭৬/৫০৬ ধারা (ধর্ষণএবং ভয় দেখিয়ে হুমকি বা আঘাত করা) ছাড়াও চার্জশিটে ‘প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস (পক্সো) অ্যাক্ট ২০১২-এর ৪/৬/৮/১২ ধারাও দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় মোট ২৪ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করেছে শালতোড়া পুলিশ। নির্যাতিত ছাত্রীর গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে আদালতে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “শালতোড়া থানার ওসি এবং বাকি পুলিশকর্মীরা যে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছেন, তা প্রশংসনীয়। নারী নিগ্রহের মতো ঘটনাগুলিকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখি ও দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীকে সাজা দেওয়ানোর চেষ্টা করি।”

কী ভাবে তদন্ত করল পুলিশ?

জানা যাচ্ছে, যৌন নিগ্রহের ঘটনা জানাজানি হতে গত বুধবার সকালে ওই ছাত্রীদের অভিভাবকেরা গাড়িচালক রাজাকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ওই দিনই নিগৃহীতা এক ছাত্রীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। ওই ছাত্রীর জন্ম শংসাপত্র, ঘটনার সময় পরে থাকা স্কুলের পোশাক এবং রাজার গাড়িটি হেফাজতে নেয় পুলিশ। ওই দিনই বেশ কিছু সাক্ষীর বয়ানও নেয় পুলিশ। পর দিন, বৃহস্পতিবার অভিযুক্তকে বাঁকুড়া আদালতে পাঠানো হয়। গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয় নির্যাতিতার। শুক্রবার আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তকে হেফাজতে পায় পুলিশ। নির্যাতিতা ও অভিযুক্তের মেডিক্যাল রিপোর্টও হাতে পায় পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার ধৃতকে নিয়ে যাওয়া হয় ওই ছাত্রীদের স্কুলে। শিক্ষকেরা পুলিশকে জানান, পিকনিকের দিন রাজার গাড়িতে চেপেই নির্যাতিতা ছাত্রী স্কুলে এসেছিল। স্কুল থেকে ধৃত রাজাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থলে। পুলিশ জায়গাটির স্কেচও বানায়। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ওই দিনই রাজা অপরাধ কবুল করে। কয়েক সপ্তাহ আগে আরও এক নাবালিকাকে সে ধর্ষণ করেছিল বলেও জেরায় স্বীকার করে। এই তথ্য জেনেই সময় নষ্ট না করে শালতোড়া থানার ওসি শেষ কুমার সেই নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নাবালিকার বাবা পুলিশের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়ে জানান, লোকলজ্জা ও পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে ঘটনাটি নিয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করেননি। পুলিশ ওই নাবালিকার বাবারও বয়ান নেয়। রবিবারও চলে বয়ান নেওয়ার পালা। সোমবার আসামিকে বাঁকুড়া আদালতে পাঠিয়ে মঙ্গলবার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম থেকেই দ্রুত তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন ওসি শেষ কুমার। তাঁকে যোগ্য সহায়তা করেছেন ওই থানার এএসআই বিজল বন্দ্যোপাধ্যায়।

এটাই অবশ্য প্রথম নয়, সম্প্রতি ধর্ষণের একাধিক ঘটনায় এক মাসের মধ্যে বাঁকুড়া পুলিশের চার্জশিট পেশ করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে অন্য ঘটনাগুলির থেকেও দ্রুততার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে শালতোড়া। ২০১৩ সালে বেলিয়াতোড়ের এক মুদি দোকানির বিরুদ্ধে এলাকারই একাধিক নাবালিকাকে চকোলেট দেওয়ার নাম করে বাড়িতে ডেকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার ১৮ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দিয়েছিল পুলিশ। গত বছর জুলাইয়ে কোতুলপুরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে পড়শি যুবকের বিরুদ্ধে। ওই সময় কোতুলপুর থানার ওসি ছিলেন শেষ কুমার। ন’দিনের মাথায় ওই ঘটনার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। গত বছর নভেম্বরে সিমলাপালে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এক জুনিয়র কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রেও মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা পড়ে।

বাঁকুড়া জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর রিনা চক্রবর্তী বলেন, “দ্রুত চার্জশিট জমা পড়লে অভিযুক্তকে বিচারাধীন বন্দি রেখেই বিচার চালানো যায়। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তিও হয়।” নিগৃহীতার অভিভাবকেরাও পুলিশের ভূমিকায় খুশি। তবে দোষীর কড়া সাজা চেয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rape girl chargesheet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE