Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মামলার পরেই গা ঢাকা প্রধানের, ক্ষোভ বিজেপি-র

ভোট কর্মীদের মারধর করে ছাপ্পা ভোটে অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক আগেই ফেরার হয়েছেন। ঘটনার দেড়মাস পরেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে দাবি পুলিশের। এবার সেই সোনামুখীরই তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধান একশো দিনের প্রকল্পে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে গা ঢাকা দিলেন।

বাঁকুড়া ডিএম অফিসে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়া ডিএম অফিসে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০০:৫২
Share: Save:

ভোট কর্মীদের মারধর করে ছাপ্পা ভোটে অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক আগেই ফেরার হয়েছেন। ঘটনার দেড়মাস পরেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে দাবি পুলিশের। এবার সেই সোনামুখীরই তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধান একশো দিনের প্রকল্পে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে গা ঢাকা দিলেন। তিনি সহ-পঞ্চায়েতের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় থানায় এফআইআর করেছেন বিডিও। এ ক্ষেত্রেও তাঁর হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে পুলিশ। বিরোধী দলগুলির মতোই বাসিন্দাদের একাংশও মনে করেছেন, ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক এই ধরনের ঘটনায় রাজনৈতিক দলের কাছে পুলিশের বশ্যতা আরও বেআব্রু হয়ে পড়েছে। যদিও সব ক্ষেত্রেই ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে’’ বলে আর বেশি কিছু বলতে চাননি পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার।

লোকসভা নির্বাচনে বুথে ঢুকে হামলায় প্রথম অভিযুক্ত হন সোনামুখী কেন্দ্রের বিধায়ক দীপালি সাহা। দ্বিতীয় ঘটনায় অভিযুক্ত রাধামোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অঞ্জনা দাস। বৃহস্পতিবার রাতেই ওই পঞ্চায়েতের একশো দিনের প্রকল্পের দু’টি কাজের দ্বায়িত্বে থাকা সুপারভাইজর, পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক ও প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সোনামুখীর বিডিও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “একশো দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছিলাম। তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর যা করার পুলিশ করবে।” পুলিশের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধান-সহ অভিযুক্ত দু’জন সুপারভাইজর ও নির্মাণ সহায়ক সকলেই পলাতক। তাঁদের খোঁজ চলছে।

এ দিকে, শাসকদলের নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়াতেই ছাপ্পা ভোটে অভিযুক্ত বিধায়ক ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানকে পুলিশ ধরছে না বলে অভিযোগ তুলছে বিজেপি। দীপানিকে গ্রেফতারের দাবিতে আগেই পথে নেমেছিল বিজেপি। পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে শুক্রবার জেলা শাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিল বিজেপি। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার অভিযোগ করেন, “পুলিশ তৃণমূলের হাতের পুতুল হয়ে উঠেছে। শাসকদলের কেউ দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার ভোট কর্মীদের পিটিয়ে ছাপ্পা ভোট করে দিনের পর দিন লুকিয়ে থাকছেন। এ রাজ্যে এখন তৃণমূল করলেই তাঁর সাত খুন মাফ।”

যদিও বিজেপির এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, “পুলিশের তদন্তে কখনও আমাদের দল নাক গলায় না। এ সব বাম আমলে হত। আমরা পুলিশকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছি। যাঁরা এই সব অভিযোগ করছেন তাঁরা রাজনৈতিক স্বার্থে কথা বলছেন।”

শুধু দীপালি কাণ্ড বা রাধামোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে একশো দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির ঘটনাই নয়, সম্প্রতি বেলিয়াতোড় যামিনী রায় কলেজে ভর্তির ফর্ম জমা দেওয়া চলাকালীন গাড়ি নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় জনা আটেক দুষ্কৃতী কলেজে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। পুলিশ ওই দুষ্কৃতীদের গাড়ি আটক করে। গাড়ি থেকে বেশ কিছু ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনাতেও নাম জড়ায় তৃণমূলের। কলেজের ছাত্র সংসদের ক্ষমতা ধরে রাখাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় তৃণমূলের বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বেই এই ঘটনা ঘটেছিল বলে কার্যত মেনে নিয়েছিলেন যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তও দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর কয়েক সপ্তাহ কেটে গেলেও পুলিশ ওই দুষ্কৃতীদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকী আটক হওয়া গাড়িটির মালিকের পরিচয়ও উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। পঞ্চায়েতে দুর্নীতি এবং শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে এ দিন দুপুরে পুরুলিয়া শহরের জুবিলি ময়দান থেকে বিজেপি কর্মীরা মিছিল করে। শেষে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেন। দলের জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য জুড়ে শাসকদলের সন্ত্রাস বন্ধ ও জেলায় একশো দিনের কাজে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করার দাবি জানিয়েছি।” জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “একশো দিনের কাজের বিষয়ে তাঁদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE