Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মেশিনে ভোট, গ্রামে পরিদর্শকরা

ভোট দেওয়ার তারিখ কবে? জনতা উত্তর দিল ২৩ বৈশাখ। কম বয়সিদের চটপট জবাব ৭ মে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্র কোথায়? জনতার জবাব, গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। কী ভাবে ভোট দেবেন? এবার উত্তর মিলল প্রশ্ন কর্তা পরিদর্শক দলের কাছ থেকেই। এক আধিকারিক বললেন, “এ বার কাগজে ছাপ নয়। মেশিনে বোতাম টিপে ভোট দেবেন। এই যে সেই মেশিন দেখে নিন, কী ভাবে ভোট দিতে হয়।” রবিবার মানবাজারের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভোটারদের ভোটদান সম্পর্কে সচেতন করলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।

মানবাজারের কেশরগড়িয়া গ্রামে ইভিএম দেখাচ্ছেন আধিকারিকরা। —নিজস্ব চিত্র।

মানবাজারের কেশরগড়িয়া গ্রামে ইভিএম দেখাচ্ছেন আধিকারিকরা। —নিজস্ব চিত্র।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০০
Share: Save:

ভোট দেওয়ার তারিখ কবে? জনতা উত্তর দিল ২৩ বৈশাখ। কম বয়সিদের চটপট জবাব ৭ মে।

ভোটগ্রহণ কেন্দ্র কোথায়? জনতার জবাব, গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। কী ভাবে ভোট দেবেন? এবার উত্তর মিলল প্রশ্ন কর্তা পরিদর্শক দলের কাছ থেকেই। এক আধিকারিক বললেন, “এ বার কাগজে ছাপ নয়। মেশিনে বোতাম টিপে ভোট দেবেন। এই যে সেই মেশিন দেখে নিন, কী ভাবে ভোট দিতে হয়।” রবিবার মানবাজারের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভোটারদের ভোটদান সম্পর্কে সচেতন করলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।

কোথাও গ্রামের আটচালায়, কোথাও গাছতলায়, আবার কোথাও কিছুই মেলেনি প্রখর রোদে। পরিদর্শক দলের অভিজ্ঞতাও কম হয়নি। মানবাজার থানার বারি গ্রামের বৃদ্ধা সোমি মাহাতো যেমন কবে ভোট হবে তা জানতেন না। তিনি বলেন, “আমি বুথে যাই বটে, তবে আমার বউমারা আঙুল ধরে ভোট দিয়ে দেয়।” ভোট চাইতে দলবল নিয়ে প্রার্থীদের আসতে দেখেছেন, কিন্তু দলবল নিয়ে ভোট কী ভাবে দেবেন, তা দেখাতে সরকারি আধিকারিকদের গ্রামে আসতে দেখেননি বৃদ্ধ গোপাল মাঝি। সব দেখে তাঁর আশঙ্কা, “ভোট কী ভাবে দিতে হয় বাবুরা দেখাতে এসেছেন কেন? তবে কি এ বার বুথে পুলিশ থাকবে না?” তাঁকে আশ্বস্ত করেন মানবাজারের ওসি শেখর মিত্র। তিনি বলেন, “পুলিশ তো থাকবেই, কিন্তু এ বার মেশিনে ভোট হবে। তাই সে সব সম্পর্কে আপনাদের জানাতে আমরা এসেছি।” জনতাকে বোঝাতে গিয়ে মানবাজার ১ এর বিডিও সায়ক দেব বলেন, “আপনারা বুথে গিয়ে যদি মনে করেন এরা কেউ যোগ্য প্রার্থী নয়, তাহলে আপনি নোটা প্রয়োগ করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রার্থীদের কাউকে পছন্দ নয় বলে জানাবার অধিকার পাচ্ছেন। এই নির্বাচনে প্রথম নোটা-র অধিকার থাকছে।”

বাগডেগা গ্রামের তারু কালিন্দী প্রতিমা কালিন্দী আধিকারিকদের কাছে পেয়ে অভিযোগ করেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে গোলমাল হওয়ায় অনেকেই ভোট না দিয়ে ফিরে যান। এ বারে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে গোলমাল হবে না তো?” তেমনটা হবে না বলে তাঁদের আশ্বাস দেন পরিদর্শক দলের সদস্যেরা। ওই গ্রামের মোড়ে ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে বাস করেন শ্রীমতী মাঝি। পরিদর্শক দলকে দেখে তিনি বলে ওঠেন, “আমি কোনও বারেই ভোট দিতে পারি না। বুথে গেলেই বলে আমার ভোট না কি পড়ে গিয়েছে। ভোট চুরি বন্ধ করতে হবে।” দৃশ্যত খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে যান আধিকারিকরা। তড়িঘড়ি এক বাসিন্দা দাবি করেন, “ওই মহিলার মানসিক সমস্যা রয়েছে।” তবে ওই মহিলা তাঁর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছএন। তিনি এও বলেন, “ওই মহিলা কেন সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না, তা খোঁজ নেওয়া হবে।”

কেশরগড়িয়া গ্রামে পরিদর্শক দলকে আবার বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথাও শুনতে হয়েছে। গ্রামের হরিমন্দির চত্বরে সংকীর্তনের আসর নিয়ে আলোচনা চলছিল। পরিদর্শক দলকে পেয়ে বাসিন্দারা গ্রামের রাস্তার সংস্কার ও সেতুর দাবি জানান। এক বাসিন্দা দেবজিৎ পন্ডা বলেন, “মানবাজার-পুরুলিয়া পাকা রাস্তা থেকে আমাদের গ্রামের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। বেহাল রাস্তার জন্য কোনও গাড়ি এই গ্রামে আসতে চায় না। অথচ মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে বিজয়ডি হাইস্কুল ও কুদা স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। নদীর উপর এক যুগ আগে সেতুর জন্য চারটি স্তম্ভ তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। কাজ আর এগোয়নি। সেতু হয়ে গেলে অন্তত ১২টি গ্রামের বাসিন্দা উপকৃত হতেন।” একধাপ এগিয়ে বাসিন্দা তারারানি মহাপাত্র দাবি করেন, দাবিগুলি না মিটলে গ্রামের মেয়েরা কেউ ভোট দেবেন না। ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে এসে এই ধরনের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে বলে আধিকারিকদের কেউ কেউ হয়তো ভাবেননি। বিডিও বলেন, “নির্বাচনী বিধি থাকার জন্য আমি কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না। তা ছাড়া সেতু নির্মাণের জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে অত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। তবে জেলা পরিষদ থেকে এই ধরনের কাজ করা যেতে পারে।” পরে তিনি জানিয়েছেন, ১০০ দিনের প্রকল্পে যাতে রাস্তা সংস্কার করা হয়, তিনি সে চেষ্টা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sameer dutta manbazar election observer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE