অবরোধে আটকে পড়েছে যানবাহন। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি মদের রমরমা রোখার দাবিতে সোমবার হুড়া থানার লালপুর-মানবাজার রাস্তার মাগুড়িয়া মোড়ে ঘণ্টা খানেক অবরোধ করলেন মহিলারা। পুলিশ এলাকায় পৌঁছলে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। অবশেষে এলাকার যে গ্রামগুলিতে চোলাই ও অবৈধ মদের কারবার চলছে সেখানে অভিযান চালানো হবে পুলিশের এই আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
স্বনির্ভর দলের মহিলাদের অভিযোগ, মাগুড়িয়া, রাহেড়ডি ও পারুলিয়াগোড়া গ্রামে অবৈধ মদের কারবার দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে তাঁদের সংসারে অশান্তি, এলাকায় চুরি লেগেই রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলার কথায়, “দিন আনি দিন খাই সংসার আমাদের। স্বামী দিন মজুরের কাজ করেন। আমাকেও সংসার সামলে এই কাজ করতে হয়। দিনে যে টাকা রোজগার হয় স্বামী তার অনেকটাই এই মদের ঠেকে খরচ করে দিয়ে আসে। এ জন্য সংসারে অশান্তি বাড়ছে। ঘরে ঝগড়া করে কোনও লাভ হচ্ছে না।” আর এক মহিলার অভিযোগ, “বেশি বললে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করছে। ঘরে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাদের উপরে এই ঘটনার প্রভাব পড়ছে।” তাঁরা জানালেন, এ কারণেই সকলে মিলে এলাকায় এই ধরনের অবৈধ মদের ঠেকগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। পুজোর পরে এলাকার স্বনির্ভর দলের মহিলারা একজোট হয়ে পথে নেমে এই ধরনের ঠেকগুলি ভাঙার দাবিতে মিছিল করেছিলেন। পুলিশকেও তাঁরা জানিয়েছিলেন। কবিতা মাহাতো, হিমানী মাহাতোদের কথায়, “আমরা সরব হওয়ার পরে পুলিশ বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছিল। তার ফলে কিছুদিন উপদ্রব কমেছিল। ফের আগের জায়গাতেই ফিরে গিয়েছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের কথায়, “এখন আমাদের কাউকে এমন কথাও শুনতে হচ্ছে যে, পুলিশকে তো জানানো হয়েছিল? কী হল? তাই আমরা একটা সুযোগ খুঁজছিলাম।” এ দিন এক ব্যক্তিকে থলের মধ্যে মদের বোতল নিয়ে যেতে দেখে তাই তাঁরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল প্রায় সাড়ে সাতটা হবে। মাগুড়িয়া মোড় এলাকায় স্বনির্ভর দলের কয়েকজন সদস্যার চোখে পড়ে এক ব্যক্তি সাইকেলে দু’টি থলে নিয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চান, থলেতে কী রয়েছে। ওই ব্যক্তি তা জানাতে অস্বীকার করলে স্বনির্ভর দলের মহিলারা দাবি করেন, এই এলাকায় অবৈধ মদের কারবার বাড়ছে। ফলে থলেতে কী রয়েছে দেখাতে হবে। অন্য কিছু থাকলে তাঁদের কোন বক্তব্য নেই। কিন্তু ওই ব্যক্তি রাজি না হওয়ায় মহিলাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। মহিলাদের দাবি, থলে খুলতেই দেখা যায় অনেকগুলি মদের বোতল রয়েছে। খবর পেয়ে বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের প্রায় শ’খানেক মহিলা জড়ো হয়ে যান। প্রতিবাদে অবরোধ শুরু করেন। অবরোধের খবর পেয়ে এলাকায় এলে পুলিশ বিক্ষোভের মুখে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, কী করে দিনের বেলায় এ ভাবে মদের বোতল ঢোকে? কী করে অবৈধ কারবার চলছে? সব কিছু দেখেও দেখেন না? এ সবের প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ কর্মীরা স্বনির্ভর দলের মহিলাদের কাছে তালিকা চান, কারা এলাকায় এ ধরনের ঠেক চালাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া মহিলারা রাহেড়ডি, মাগুড়িয়া ও পারুলিয়াগোড়া গ্রামের মোট ১২ জনের নামের তালিকা পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাঁদের মধ্যে মাগুড়িয়া-লালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা তৃণমূল প্রধানের নামও উঠে আসে। শাসকদলের এক প্রধানের নামে অভিযোগ উঠতেই অস্বস্তিতে পড়ে যান উপস্থিত পুলিশকর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, “অন্যদের কী বলব। খোদ প্রধানের বাড়ি থেকেই তো মদ বিক্রি হচ্ছে।” মাগুড়িয়া-লালপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সুরজমণি মাণ্ডির প্রতিক্রিয়া, “এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই দিনমজুর। পাথর ভাঙার কাজ করেন। সারাদিন খাটুনির পরে তাঁরা একটু মহুয়া খায়।” হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সুভাষ মাহাতো বলেন, “পারুলিয়াগোড়া গ্রামে এমন অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু প্রধানের বাড়ি থেকে মহুয়া বা চোলাই কোনও ধরনের মদ বিক্রি হয় এ রকম অভিযোগ ঠিক নয়। তবে এ ধরনের ঠেকের শিকার হয়ে কেউ কেউ স্ত্রীর উপরে অত্যাচার করছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। আমরাও বিষয়টি দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy