থাকার জায়গা নিয়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হলেন মা ও মেয়ে। সোমবার রাতে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে আড়শা থানার মিশিরডি গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতেরা হলেন গীতা মুদি (২৭) ও লক্ষ্মী মুদি (১৩)। গীতাদেবীর স্বামী গোপী মুদিকেও পেটে ও হাতে গুলি করে আততায়ীরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
হতাহতেরা যাযাবর সম্প্রদায়ের। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁরা মিশিরডি গ্রামের কাছে থাকছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে থাকার জায়গা নিয়ে যাযাবরদেরই অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে গোপী মুদিদের গোষ্ঠীর বিরোধ বাধে। দিন কুড়ি আগে এই বিরোধের জেরে একটি গোষ্ঠীকে ওই এলাকা ছেড়ে পুরুলিয়া মফস্সল থানার গোলকুন্ডা এলাকায় চলে যেতে হয়। এই গ্রামটি পুরুলিয়া শহর থেকে কিছুটা দূরে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের ধারে। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “তদন্তে আমরা জেনেছি, অন্য গোষ্ঠী মিশিরডি গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে বদলা নেবে বলে হুমকি দিয়ে গিয়েছিল। তার জেরেই খুন কি না, তা খতিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, নিহতদের গোষ্ঠীর এক জন অন্য গোষ্ঠীর ছয় জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন। গুলিবিদ্ধ গোপীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাঁর সঙ্গেও কথা বলা হবে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অন্যান্য দিনের মতো সোমবার রাতেও রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে মিশিরডির যাযাবরেরা তাঁদের তাঁবুতে শুয়ে পড়েছিলেন। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কয়েক জন তাঁদের তাঁবু আক্রমণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলেই গীতাকে গুলি করে মারা হয়। গুলি করা হয় তাঁর স্বামীকেও। তার পর তাঁদের একমাত্র মেয়ে লক্ষ্মীকে তুলে নিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা। রাতেই খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে গোপীকে প্রথমে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এবং সেখান থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করায়। গীতাদেবীর দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয় ময়না-তদন্তের জন্য। তাঁর কানের পাশে ও মাথায় গুলির ক্ষত রয়েছে। দেহে ধারালো অস্ত্রেরও আঘাত রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে এলাকায় তদন্তে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য এবং ডিএসপি (শৃঙ্খলা-প্রশিক্ষণ) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁবুতে থাকা একটি বছর দশেকের বাচ্চা পুলিশকর্তাদের সোমবার রাতের ঘটনা সম্পর্কে জানায়। তার কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে, গীতাদেবীর মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা। তখনও পর্যন্ত লক্ষ্মী নিখোঁজ বলেই জানত পুলিশ। তার খোঁজে এর পরে তল্লাশি চালায় পুলিশ। দুপুরে ওই এলাকা থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি পুকুরের ধার থেকে ওই কিশোরীরও গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ মেলে। লক্ষ্মীর ডান চোখে গুলির আঘাত রয়েছে। তাকে তাঁবু থেকে তুলে দূরে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে গুলি করে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
মিশিরডি এলাকার বাসিন্দা, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুষেণ মাঝি বলেন, “এই যাযাবর দলটি এখানে বেশ কিছুদিন ধরেই রয়েছে। সোমবার রাতে ওদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলার জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। ওরা এই এলাকায় দিনমজুরি ও ভিক্ষে করে দিন চালাত বলে জানতাম। কিন্তু, এদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র কী ভাবে এল, তা পুলিশের খতিয়ে দেখা দরকার।” পুলিশ সুপার বলেন, “কী ভাবে ওদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র এল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”