এক আসনে পাশাপাশি বসে ভগবতী(দুর্গা) সরস্বতী ও লক্ষ্মী। দুর্গাপুজো ছাড়া একসঙ্গে তিন দেবী সাধারণত পুজিত হন না। হেতমপুর রাজবাড়ির শতাব্দী প্রাচীন সরস্বতী পুজোয় তেমনই রীতি। শুধু তিনটি মূর্তি নয়, দু’ পাশে রয়েছেন দেবীদের সঙ্গী জয়া-বিজয়া। হেতমপুরে রাজাদের তৈরি রাধাবল্লভ মন্দিরের নিচ তলায় এমনই ধারায় পুজো হয় সরস্বতীর।
ঠিক কবে, কেন, এমন রীতির সরস্বতী পুজোর চল তা সঠিক জানা নেই কারও। বংশ পরম্পরায় হেতমপুর রাজপরিবারের ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব সামলে আসা রায় পরিবারের শঙ্কর রায় জানান, হেতমপুরের রাজ বংশের দুই শরিক মাধবীরঞ্জন চক্রবর্তী এবং সুরঞ্জন চক্রবর্তী(সম্পর্কে মাধবীরঞ্জন কাকা)। তাঁদের ছ’ পুরুষ আগে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এমন পুজোরই প্রচলন করেছিলেন বলে পরিবার সূত্রে শুনেছি। শঙ্করবাবু আরও বলেন, “পূর্ব-পুরুষদের কাছ থেকেই শোনা, বাংলাদেশের ঢাকায় কোথাও এমন রীতির পুজো হয়। সে রীতির এখনও নড়চড় হয়নি। মাধবীরঞ্জন বা সুরঞ্জন কোনও তরফের কেউই আর কলকাতা থেকে আসতে পারেন না। কিন্তু পুজো হয়।”
কারুকার্য সমৃদ্ধ চুনসুরকির তৈরি প্রাচীন রাধাবল্লভ ও সরস্বতী মন্দিরটি ভগ্নপ্রায়। মাথার ছাদ ভেঙে পড়েছে। রাধাবল্লভ বিগ্রহ ওই মন্দির থেকে সরানো হয়েছে। রাজবাড়ির সেই জৌলুস হারিয়েছে। কিন্তু তাঁদের দেওয়া টাকায় এখনও পুজো হয়। কোনও ক্রমে বাঁশ কাপড় দিয়ে আড়াল করে এখনও ওই মন্দিরেই পুজো হয় সরস্বতী-সহ অন্যান্যদেবীর।
তিন দিন থাকার পর, চার দিনের দিন বিসর্জন হয় দেবী মূতির। চার দিন ধরেই চলে ভোগ আরতি। তৃতীয় দিন গ্রামের প্রায় ১০০০ খানেক মানুষ ভোগ খান। একসময় কৃষ্ণনগর থেকে প্রতিমা শিল্পীরা এসে তিন মাস ধরে ঠাকুর গড়তেন। খুব ধুমধাম করে পুজো হত। এখন সে সবই ইতিহাস।
রাজপরিবারে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে মেলা বসার চলও সেই সময় থেকেই। এখনও মেলা বসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু মন্দিরের যা অবস্থা, এভাবে আর কতদিন?
শঙ্কর রায় বলেন, “ভগ্নপ্রায় মন্দিরটিকে নতুন করে সংস্কার কারানোর জন্য রাজি হয়েছেন রাজপরিবারের শরিকেরা। তাহলে হয়তো মন্দিরের স্মৃতিটুকু রয়ে যাবে নতুন প্রজন্মের কাছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy