Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সংস্কারে নামেনি গ্রাম পঞ্চায়েত

রাস্তা সারালেন গ্রামবাসীই

মোরামের কাঁচা রাস্তা। তা-ও খানাখন্দে ভরা। বর্ষার সময়ে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত এক প্রকার বন্ধ হয়ে পড়েছিল। বর্ষার পরেও রাস্তা সংস্কার করেনি স্থানীয় পঞ্চায়েত। প্রশাসনের উপরে আর ভরসা না করে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সারালেন হিড়বাঁধ ব্লকের মশিয়াড়া পঞ্চায়েতের চাকাডোবা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। গ্রামের একটি ক্লাবের উদ্যোগে সোমবার এই রাস্তা সংস্কার করা হয়।

রাস্তার গর্তে মাটি ফেলে ভরাট করছেন বাসিন্দারা।নিজস্ব চিত্র

রাস্তার গর্তে মাটি ফেলে ভরাট করছেন বাসিন্দারা।নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিড়বাঁধ শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২০
Share: Save:

মোরামের কাঁচা রাস্তা। তা-ও খানাখন্দে ভরা। বর্ষার সময়ে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত এক প্রকার বন্ধ হয়ে পড়েছিল। বর্ষার পরেও রাস্তা সংস্কার করেনি স্থানীয় পঞ্চায়েত। প্রশাসনের উপরে আর ভরসা না করে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সারালেন হিড়বাঁধ ব্লকের মশিয়াড়া পঞ্চায়েতের চাকাডোবা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। গ্রামের একটি ক্লাবের উদ্যোগে সোমবার এই রাস্তা সংস্কার করা হয়।

হিড়বাঁধ ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম চাকাডোবা। ব্লক সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে একশোটির বেশি পরিবারের বসবাস। তার মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। পাশেই বিজারডিহি গ্রাম। এই দুই গ্রামের মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার মোরাম রাস্তা। এখনও পাকা হয়নি। গত বছর থেকেই এই রাস্তা বেহাল। গত বর্ষায় রাস্তা জুড়ে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত তৈরি হয়। সংস্কার না হওয়ায় সেই সব গর্ত আকারে বেড়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ফলে, ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল দূরের কথা, মোটরবাইক, সাইকেল নিয়েও যাতায়াত করতে গিয়েও হিমশিম অবস্থা গ্রামের মানুষের। পুজোর পর থেকে ওই রাস্তায় যাতায়াত কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা। অনেকেই মাঠের আলপথ ধরে যাতায়াত করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পঞ্চায়েতের কাছে বারবার রাস্তা সংস্কারের জন্য আবেদন করেও লাভ হয়নি। শেষে গ্রামের বাসিন্দা তথা স্থানীয় ক্লাবের কয়েক জন সদস্যই সোমবার সকাল থেকে ঝুড়ি, কোদাল নিয়ে রাস্তার গর্ত বোজানোর কাজ করেছেন। সংস্কারের পরে রাস্তা অনেকটাই যাতায়াতের যোগ্য বলে গ্রামবাসীর দাবি। চাকাডোবা গ্রামের আদিবাসী মিলন গাঁওতা ক্লাবের সদস্য ইন্দ্রজিৎ মান্ডি, শঙ্করলাল টুডু, পরমেশ্বর মান্ডি জানালেন, গ্রাম থেকে বেরনোর একমাত্র রাস্তা এটিই। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা খারাপ। বর্ষায় গর্তে জল জমে ডোবার চেহারা নিয়েছিল। গোটা রাস্তা কাদাময় হয়ে পড়েছিল। রাস্তার উপর দিয়ে প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হয়েছে সকলকে। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের ব্লক সদর হিড়বাঁধ আট কিলোমিটার ঘুরপথে যেতে হয়েছে। তাঁদের ক্ষোভ, “পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসন, সব স্তরেই এই মোরাম রাস্তাটি সংস্কারের জন্য দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু, পুজো কেটে গেলেও রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে উদাসীন প্রশাসন।”

গ্রামবাসী লক্ষ্মণ মান্ডি, রোহিত মান্ডি বলেন, “বারবার জানানোর পরেও পঞ্চায়েত কয়েক গাড়ি মোরাম ফেলে রাস্তার ন্যূনতম সংস্কার পর্যন্ত করেনি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, গ্রামের মানুষকে জমির আলপথ ডিঙিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছিল। তাই ক্লাবের সদস্যেরা একজোট হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ঝুড়ি, কোদাল নিয়ে পাশের ফাঁকা জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে রাস্তার গর্ত বুজিয়েছি।” ক্লাবের সদস্য ও গ্রামবাসী মিলিয়ে জনা তিরিশেক বাসিন্দা ওই কাজে সামিল হয়েছিলেন। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাঁরা কাজ করেছেন। কেউ মজুরি নেননি।

চাকাডোবা গ্রামের এই মোরাম রাস্তা খারাপের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন মশিয়াড়া পঞ্চায়েতের প্রধান, সিপিএমের অংশুমান বাউরি। তাঁর দাবি, “গত বছর ওই রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছিল। চলতি বছরে রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার আগে গ্রামের মানুষ নিজেরাই গর্ত বোজানোর কাজ করেছেন। এটা ভাল উদ্যোগ।” প্রধান জানান, পঞ্চায়েত এলাকার বহু গ্রামের রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য ব্লক প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hirbandh road repair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE