Advertisement
E-Paper

লেবুগাছের তলায় পোঁতা মা-মেয়ে

বড় জা-এর সঙ্গে নিজের শিশুকন্যাকে নিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার আনতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি ছোট জা। ২৪ ঘণ্টা পরে বড় জা-এর ঘরের উঠোনের পাতি লেবু গাছের তলা থেকেই মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল নিখোঁজ মা-মেয়ের দেহ। বাঁকুড়ার জয়পুর থানার গেলিয়া অঞ্চলের মাধবপুর গ্রামের ঘটনা প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ভারী কোনও কিছু দিয়ে মাথায় মেরে খুন করা হয় মমতা চট্টোপাধ্যায়কে (২৩)। তাঁর দেড় বছরের অনন্যাকে মারা হয় শ্বাসরোধ করে।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৮
তখনও গর্তে মা-মেয়ের দেহ। বৃহস্পতিবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

তখনও গর্তে মা-মেয়ের দেহ। বৃহস্পতিবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

বড় জা-এর সঙ্গে নিজের শিশুকন্যাকে নিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার আনতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি ছোট জা। ২৪ ঘণ্টা পরে বড় জা-এর ঘরের উঠোনের পাতি লেবু গাছের তলা থেকেই মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল নিখোঁজ মা-মেয়ের দেহ।

বাঁকুড়ার জয়পুর থানার গেলিয়া অঞ্চলের মাধবপুর গ্রামের ঘটনা প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ভারী কোনও কিছু দিয়ে মাথায় মেরে খুন করা হয় মমতা চট্টোপাধ্যায়কে (২৩)। তাঁর দেড় বছরের অনন্যাকে মারা হয় শ্বাসরোধ করে। মেয়েকে মায়ের কাপড়ের সঙ্গে পেটে বেঁধে লেবু গাছের তলায় প্রায় পাঁচ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে নীচের দিকে মুখ করে শুইয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়। মমতার বড় জা অনিতা ও ভাসুর প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “আটক দম্পতি পুলিশি জেরার মুখে খুনের কথা কবুল করেছেন।” মমতাকে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তিনি বলেন, “ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি চালানো হবে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে মাধবপুরের বাসিন্দা, গ্রামের হাতুড়ে প্রদীপের সঙ্গে তাঁর কৃষিজীবী ছোট ভাই সন্দীপের বিবাদ দীর্ঘদিনের। দুই ভাইয়ের পরিবারের মধ্যে একেবারেই বনিবনা ছিল না। তাঁদের বাবা অলোক চট্টোপাধ্যায় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মী ছিলেন। দুই ভাই আলাদা থাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ছোট ছেলে সন্দীপের সঙ্গেই থাকতেন অলোকবাবু। মাস ছয়েক আগে তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে স্ত্রী লাবণ্যদেবী অলোকবাবুর পেনশন পান। সেই পেনশনের ভাগ নিয়েও দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ বাধে।

সন্দীপবাবু জানান, দিন পাঁচেক আগে তাঁর স্ত্রী মমতার সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করেন বৌদি অনিতা। দু’জনের কথাবার্তা শুরু হয়। দুই জা এক সঙ্গে বেরোতেও শুরু করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার আনতে যাওয়ার নাম করে মমতা ও তাঁর শিশুকন্যাকে নিয়ে বেরোন অনিতা। দুপুর গড়িয়ে গেলেও মা-মেয়ে বাড়ি না ফেরায় বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ শুরু করেন সন্দীপবাবু। তাঁর দাবি, “স্ত্রী ও মেয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘ওরা কোথায় জানি না’ বলে এড়িয়ে যায় বৌদি। বুধবার বিকেলে জয়পুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি।” ওই ডায়েরিতে পারিবারিক বিবাদের কথা উল্লেখ করে স্ত্রী ও মেয়ে নিখোঁজের জন্য বৌদিকে দায়ী করেন সন্দীপবাবু। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ অনিতাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু, নিখোঁজদের কোনও সূত্র খুঁজে না পেয়ে পুলিশ রাতেই অনিতাকে ছেড়ে দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য হাল ছাড়েননি। বৃহস্পতিবার সকালে অনিতা ও তাঁর স্বামী প্রদীপকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই দম্পতিকে থানায় নিয়ে যায়। এ দিন বিকেলে প্রদীপদের বাড়ির উঠোনে লেবু গাছের তলায় মাটির স্তূপ দেখে সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। তাঁরা ভিতরে গিয়ে দেখেন, মাটির তলায় গর্ত। গেলিয়া অঞ্চলের তৃণমূল নেতা দীনেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার ছেলেরা মাটি খোঁড়া শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই পচা গন্ধ। তারও পরে বেরিয়ে আসে জুতো। খোঁড়া বন্ধ করে আমরা পুলিশে খবর দিই।”

নিখোঁজ মা ও মেয়ের দেহ মিলেছে, এই খবর ছড়াতেই উত্তেজনা দেখা দেয়। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর প্রশ্ন, আগের রাতে অনিতাকে জেরার পরে কেন ছাড়া হয়েছিল? বিক্ষোভের মুখে পড়ে প্রথমে পিছু হটে পুলিশ। খবর পেয়ে বড় পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষ। জনতাকে বুঝিয়ে তাঁর তত্ত্বাবধানে ফের খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। মা-মেয়ের দেহ উপরে তোলার পরে দেখা যায়, মমতার মাথা রক্তাক্ত ও ভারী কিছুর আঘাতে থেঁতলানো। পেটের সঙ্গে বাঁধা অনন্যা।

চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্দীপবাবু। বারবার বলতে থাকেন, “কেন যে বৌদির কথায় বিশ্বাস করল মমতা! না হলে এমন পরিণতি হত না!” তাঁর অভিযোগ, সম্পত্তির লোভেই পরিকল্পনা করে তাঁর স্ত্রী-মেয়েকে খুন করেছেন দাদা-বৌদি। সব জেনে শোকে পাথর সন্দীপবাবুর বৃদ্ধা মা। ধৃত দম্পতির তিনটি ছোট মেয়ে আপাতত অনিতার বাপের বাড়ির লোকেদের কাছে রয়েছে।

swapan bandyopadhyay murder joypur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy