রোগাক্রান্ত খেত ঘুরে দেখছেন চাষি। (ইনসেটে) আখের হাল। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।
আখই ছিল অযোধ্যা পাহাড় লাগোয়া রুক্ষ এলাকার অর্থকরী ফসল। কিন্তু পুরুলিয়ার ওই প্রত্যন্ত এলাকার চাষিদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আখ গাছের লাল রোগ। চাষিদের কথায়, “আখের বিভিন্ন অংশ লাল হয়ে যাচ্ছে। ফলে আখের রসও কমে যাচ্ছে।” এই অভিযোগ তুলে বীজ বদলের দাবিতে সরব হয়েছেন পুরুলিয়ার আড়শা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের আখচাষিরা। তবে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেছেন, “ওই এলাকার আখ চাষিরা সমস্যার বিষয়টি আমাকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। আমাদের আখ চাষের বিশেষজ্ঞদের এলাকায় পাঠাব। তাঁরা দেখবেন কী কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তেমন হলে বিকল্প জায়গা থেকে আখ বীজ নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।”
পুরুলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে ছড়িয়ে থাকা শিরকাবাদ, আহাড়রা, লছমনপুর, গন্ধবাজার, নুনিয়া, তানাসি, কলাবনি, ভেলাইডি, হাড়মাডি-সহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিদের কাছে ধানের পাশাপাশি অন্যতম অর্থকরী ফসল আখ। এলাকার চাষিরা জানাচ্ছেন, আখ চাষের জন্য কোনও জল লাগে না। তাই এলাকারয় সেচের ব্যবস্থা না থাকলেও কার্যত বিনা সেচেই আখ চাষ হয়ে যাচ্ছে। চাষিদের হিসেব মোতাবেক, কমবেশি ৩০০০ একর জমিতে আখ চাষ হয়। মরসুমে মোটামুটি ভাবে ১০ থেকে ১১ মাসের জন্য চৈত্র মাসে আখ চাষ শুরু করা হয়। মাঘ বা ফাল্গুনে ফসল তোলা হয়। শিরকাবাদের বাসিন্দা দীর্ঘদিনের আখচাষি আনন্দ মাঝি, অমরেন্দ্রনাথ সেনদের কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা ‘সিও-৫১৯’ নামের এক ধরনের বীজে আখ চাষ করে আসছি। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই লক্ষ করছি আখের ফলন কমছে।” আখের গুড়ের পরিমাণ থেকেই তাঁরা ফলন কমার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এলাকার বড় বা মাঝারি চাষিরা আখ থেকে গুড় তৈরি করে তা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, আসানসোল বা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের টাটানগরে বিক্রি করেন। এই বাজারগুলিতে শিরকাবাদের আখের ঝোলা গুড়ের কদর রয়েছে। অমরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “আমার জমি থেকে সংগৃহীত আখে যত পরিমাণ গুড় তৈরি হতো, এখন সেই গুড়ের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে।” এলাকার চাষি মাণিক মাঝি, ফণীভূষণ কুইরি, শ্রীকান্ত মাহাতোরা জানিয়েছেন, “আখের ফলন হচ্ছে কিন্তু রস কমে যাচ্ছে। আখ লালও হয়ে যাচ্ছে।” চাষিরা জানাচ্ছেন, আগে কম পরিমাণ আখ লাল হতো। এখন তা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কৃষি দফতরের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এই রোগের নাম রেডরট।
জমি থেকে আখ তুলে মাড়াই রস সংগ্রহ করা হয়। তারপরে বড় কড়াইয়ে রস জাল দিয়ে গুড় বানানোই এখানকার প্রথা। এলাকায় যাঁরা আখ মাড়াই করার কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন তেমনই এক শ্রমিক শম্ভু মুড়া জানালেন, আখের রস ওই লাল রোগেই কমে গিয়েছে। গুড় তৈরি ছাড়াও অনেকেই আখ বিক্রি করেন। হলদিয়া, খড়গপুর, কলকাতা, ধানবাদ থেকে ব্যবসায়ীরা এসে লরিতে করে আখ কিনে নিয়ে যান। রস কমে যাওয়ার কারণে সেই আখেরও দাম কমে যাচ্ছে। চাষিরা জানান, আখের বীজ সহজলোভ্য নয়। তাঁরা সমস্যার কথা কৃষি দফতরের কাছে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, অন্য জায়গা থেকে কৃষি দফতর বীজ আনার ব্যবস্থা করলে এই রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি মিলতে পারে।”
এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য অপর্ণা সেন বলেন, “চাষীদের এই সমস্যার কথা আমি কৃষি দফতরে জানিয়েছি।” রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো জানান, আখচাষিদের সমস্যাটি তাঁদের নজরে এসেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ নিয়ে তিনি কথা বলবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy