Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শহর বাড়ছে, হারিয়ে যাচ্ছে রঘুনাথ জীউ মন্দির

যে মন্দিরের নামে একটা শহরের পত্তন, অযত্নে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই মন্দিরই। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের তিন শতাব্দী প্রাচীন রঘুনাথ জিউ মন্দির সংস্কারের দাবি তুলে পুরবাসী একটি কমিটিও গঠন করেছেন। ইতিমধ্যে দু’টি সভা করা হয়েছে। কমিটি-র পাশে দাঁড়িয়েছে রঘুনাথপুরে পুরসভা-ও। রঘুনাথপুর পুরসভায় তৃণমূলের দলনেতা বিষ্ণুচরণ মেহেতা জানান, মন্দির সংস্কারের জন্য অর্থ পুরসভার পক্ষে বরাদ্দ করা সম্ভব নয়।

সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়ছে মন্দির।—নিজস্ব চিত্র

সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়ছে মন্দির।—নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:২০
Share: Save:

যে মন্দিরের নামে একটা শহরের পত্তন, অযত্নে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই মন্দিরই।

পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের তিন শতাব্দী প্রাচীন রঘুনাথ জিউ মন্দির সংস্কারের দাবি তুলে পুরবাসী একটি কমিটিও গঠন করেছেন। ইতিমধ্যে দু’টি সভা করা হয়েছে। কমিটি-র পাশে দাঁড়িয়েছে রঘুনাথপুরে পুরসভা-ও। রঘুনাথপুর পুরসভায় তৃণমূলের দলনেতা বিষ্ণুচরণ মেহেতা জানান, মন্দির সংস্কারের জন্য অর্থ পুরসভার পক্ষে বরাদ্দ করা সম্ভব নয়। তবে মন্দিরটির সংস্কার ঠিক মতো করার জন্য তাঁরা পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

এলাকায় প্রচলিত, রঘুনাথ জীউ মন্দির থেকেই রঘুনাথপুর শহরের নামকরণ বলে এলাকায় কথিত আছে। চেলিয়ামার বাসিন্দা লোক গবেষেক সুভাষ রায় বলেন, “এই নামকরণের পিছনে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহ প্রায় ৩০০ বছর আগে এই পঞ্চরত্নের মন্দির তৈরি করেছিলেন। প্রায় সমসাময়িক সময়েই রঘুনাথপুর শহর গড়ে ওঠে।”

রঘুনাথপুর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালিগলি পাড়া এলাকায় ওই মন্দির ঘিরে রঘুনাথপুর শহরের বাসিন্দাদের আবেগ কিন্তু যথেষ্ট রয়েছে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে মন্দিরটির সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ জমতে জমতে এখন বড় আকার নিয়েছে। কয়েক মাস আগে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা মন্দিরটি সংস্কারের দাবিতে উদ্যোগী হয়ে গড়ে ফেলেছেন ‘রঘুনাথ মন্দির সংস্কার কমিটি’। উদ্যোগীদের অন্যতম লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহ বলেন, “এই মন্দিরের সঙ্গে শহরের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। কিন্ত বহু প্রাচীন এই মন্দিরটি সংস্কারের অভাবে ভাঙতে বসেছে। মন্দির ঘিরে শুধু পর্যটন গড়া নয়, আমরা চাইছি মন্দিরটির আমূল সংস্কার করা হোক।” ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা কমিটির আহ্বায়ক মনোজ দে, যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস দে জানান, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্দির সংস্কারের জন্য প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরির জন্য প্রাথমিক অর্থ চাঁদা তুলে জোগাড় করবেন। ইতিমধ্যে সেই কাজও কিছুটা এগিয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

মন্দির সংস্কারের জন্য কমিটি গড়ার পরে এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষকে মন্দির সংস্কারের দাবিতে জড়িয়ে নিয়েছে কমিটি। সম্প্রতি ওই কমিটি আর একটি সভা করেছে। তাতে পুরসভার কাউন্সিলরদেরও ডাকা হয়েছিল। ছিলেন কয়েকজন স্কুল শিক্ষক, আইনজীবী-সহ শহরের কিছু বিশিষ্ট বাসিন্দা। জি ডি ল্যাং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস সরখেল বলেন, “মন্দিরটির সঙ্গে শহরের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ফলে মন্দির ঘিরে রঘুনাথপুরের বাসিন্দাদের আবেগ তো থাকবেই। তাই আমরাও মন্দির সংস্কারের উদ্যোগে সামিল হয়েছি।” সভায় ছিলেন লোক গবেষক সুভাষ রায়ও। তিনি বলেন, “পঞ্চরত্নের মন্দিরটি টেরাকোটার ধাঁচে। পঞ্চকোট রাজবংশের ইতিহাস অনুযায়ী মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহ এই মন্দিরটি তৈরী করেছিলেন। বেড়ো গ্রামের গোস্বামী পরিবার এই রঘুনাথ মন্দিরের আদি সেবাইত। পুরুলিয়ার বহু জায়গায় প্রাচীন মন্দিরগুলি সংস্কারের অভাবে ভেঙে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।” মন্দিরের বর্তমান সেবাইত তথা মন্দির রক্ষা কমিটির সভাপতি বুদ্ধেশ্বর গোস্বামী বলেন, “মন্দিরটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। ফের মন্দিরটি খুলে রঘুনাথ জীউ-এর পুজো শুরু করা হয়েছে। মন্দিরটির সংস্কার দ্রুত প্রয়োজন।”

তবে মন্দির সংস্কারে কাজে প্রয়োজন বহু অর্থের। সে ক্ষেত্রে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে কী ভাবে মন্দিরটি সংস্কার করা যাবে? পুরসভার বাস্তুকার বিজয় মনি জানান, আপাতত স্থির হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মন্দিরটি সংস্কারের জন্য বিস্তারিত ভাবে প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, “ওই সংস্থাটির এই ধরনের পুরনো মন্দির সংস্কারের ব্যাপারে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। কী ভাবে সংস্কারের কাজ চলবে, সেই বিষয়ে ওদের সঙ্গে পুরসভা যৌথ ভাবে রিপোর্ট তৈরি করবে। সেই রিপোর্ট নিয়েই পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করব আমরা।” শহরের নামের উৎপত্তি যেখান থেকেই হোক না কেন, মন্দিরের পুরনো রূপ ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছে রঘুনাথপুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE