Advertisement
E-Paper

সিউড়িতে তৃণমূল-বিজেপিকে মিলিয়ে দিল দলেরই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব

এক দিকে বিধায়কের অনুগামীদের গোষ্ঠী। অন্য দিকে, দলের জেলা সভাপতি ঘনিষ্ঠের অনুগামীরা। গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই শাসক দলের ওই দুই গোষ্ঠীর কোন্দল জারি ছিল। সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলেরই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছিলেন তৃণমূলের কয়েক জন নির্বাচিত সদস্য। তারই জেরে অনাস্থা ভোট হতে চলেছে সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে। বৃহস্পতিবার ওই প্রস্তাব খতিয়ে দেখে ওই পঞ্চায়েতে অনাস্থা ভোটের নির্দেশ বিডিও মুনমুন ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০০:২২
বৃহস্পতিবার কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের অনাস্থা প্রস্তাব খতিয়ে দেখছেন বিডিও। —নিজস্ব চিত্র

বৃহস্পতিবার কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের অনাস্থা প্রস্তাব খতিয়ে দেখছেন বিডিও। —নিজস্ব চিত্র

এক দিকে বিধায়কের অনুগামীদের গোষ্ঠী। অন্য দিকে, দলের জেলা সভাপতি ঘনিষ্ঠের অনুগামীরা। গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই শাসক দলের ওই দুই গোষ্ঠীর কোন্দল জারি ছিল। সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলেরই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছিলেন তৃণমূলের কয়েক জন নির্বাচিত সদস্য। তারই জেরে অনাস্থা ভোট হতে চলেছে সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে। বৃহস্পতিবার ওই প্রস্তাব খতিয়ে দেখে ওই পঞ্চায়েতে অনাস্থা ভোটের নির্দেশ বিডিও মুনমুন ঘোষ। মুনমুনদেবী বলেন, “পনেরো আসন বিশিষ্ট ওই পঞ্চায়েতের সাত সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছেন। তার ভিত্তিতেই আগামী আগামী ২৯ অগস্ট পঞ্চায়েতে অনাস্থা ভোট হবে। উক্ত দিনে সেখানে আমার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।”

দল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বোর্ড গঠনের সময় থেকেই কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছিল। তার আগে সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপন ঘোষ ও দলের সিউড়ি ২ ব্লকের সভাপতি স্বর্ণময় সিংহের (যিনি অনুব্রত ঘনিষ্ট বলে পরিচিত) অনুগামীদের মধ্যে সমস্যা হয়েছিল প্রার্থীদের টিকিট মেলা নিয়েও। শেষ পর্যন্ত আসন রফা শান্তিপূর্ণ ভাবে চুকলেও গোষ্ঠী বিবাদ থেকেই গিয়েছে ওই পঞ্চায়েতে। ভোটের ফলাফলে দেখা যায় পঞ্চায়েতের ১৫ আসনের মধ্যে তিনটি করে আসন পায় বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস। একটি আসন নির্দল এবং বাকি ৫টিতে জয়ী হন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মনোনীত প্রার্থীরা। প্রধান নির্বাচনের আগে তৃণমূলের তরফে স্বর্ণময় সিংহের অনুগামী উজ্জ্বল সিংহের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু জয়ী সদস্যদের মধ্যে বিধায়কের ঘনিষ্ঠ প্রবীর ধর সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি বলে খবর। প্রধান নির্বাচনের ভোটে উজ্জ্বলবাবুর পক্ষে ৭টি ভোট পড়েছি। পঞ্চায়েত সূত্রের দাবি, সমীকরণটা ছিল, উজ্জ্বলবাবুকে ধরে দুই তৃণমূল সদস্য, ৩ বিজেপি সদস্য, এক নির্দল এবং ১ সিপিএম সদস্য। উল্টো দিকে, কংগ্রেস প্রস্তাবিত অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ছ’জনের (তৃণমূল ও কংগ্রেসের ৩ জন করে সদস্য) ভোট পান। এক সদস্য (যাঁকে পরে সিপিএম বহিষ্কার করে) উজ্জ্বলবাবুকে ভোট দিলেও দলের নির্দেশ মেনে সিপিএমের অন্য দুই সদস্য ভোট দানে বিরত ছিলেন। এক ভোটে জিতে উজ্জ্বলবাবুই প্রধান হন।

সম্প্রতি ফের পাশা উল্টেছে। বিজেপির সমর্থনে গঠিত তৃণমূল বোর্ডের প্রধান পদ হারানোর মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কারণ, গত ১৮ অগস্ট উজ্জ্বলবাবুর বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে বিজেপির তিন সদস্যও সই করেছেন। সঙ্গে দলের টিকিটে জিতে আসা প্রবীরবাবু-সহ তিন তৃণমূল সদস্য এবং কংগ্রেসর টিকিটে জয়ী হওয়া সঞ্চিতা ভট্টাচার্য নামে এক সদস্য (তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রবীরবাবুদের শিবিরে ঢুকেছেন)-সহ মোট সাত জন।

কেন এই অনাস্থা?

প্রবীরবাবুদের অভিযোগ, প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পরে এক বছর কেটে গেলেও উজ্জ্বলবাবু এলাকায় তেমন কোনও উন্নয়নের কাজ করতে পারেননি। তাই তাঁরা অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছেন। তাঁদের কথায়, “ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন কাকে বলে দেখিয়ে দেব।” উজ্জ্বলবাবু অবশ্য অভিযাগ মানেননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “প্রবীর ধর বিজেপির এক মহিলা সদস্যকে প্রধান করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এ কাজ করিয়েছেন।” বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না দলের ব্লক নেতৃত্ব। স্বর্ণময়বাবু শুধু বলেন, “অনাস্থার বিষয়ে দল কিছু জানে না। দলের পরামর্শ নিয়ে এ কাজ হয়নি। তবে, পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি।” আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্বপনবাবুও।

সিপিএম এ বারও ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, উল্লসিত বিজেপি শিবির। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের সতর্ক মন্তব্য, “আমাদের অজান্তেই কড়িধ্যা পঞ্চায়েত দখলের একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা তাতে বাধা দিচ্ছি না।” তবে, অনাস্থা ভোটের দিন শেষমেশ কী হয়, তার দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে কড়িধ্যা।

tmc and bjp come close suri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy