এখন জেল হাজতে। তার আগেই ফেরার নেতার নামে এলাকায় শুরু হয়েছিল পুরভোটের দেওয়াল লিখন। বোলপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
থানায় ঢুকে পুলিশ পেটানোয় প্রধান অভিযুক্ত যুব তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুদীপ্ত ঘোষ এখনও অধরা।
এরই মাঝে বৃহস্পতিবার বোলপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন পুলিশের খাতায় পাঁচ মাস ধরে ফেরার থাকা ঘটনায় অভিযুক্ত সুদীপ্তরই দুই সঙ্গী শেখ ওমর এবং বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। শেখ ওমর তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি। দলীয় সূত্রের খবর, এ বারই পুরভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। বোলপুরের নতুনপুকুর এলাকায় তাঁর প্রচারে শাসকদলের পক্ষ থেকে একাধিক দেওয়াল লিখনও হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার কানুরের রহিম শেখের খুনে অভিযুক্তদের মতোই ওমরদেরও নিজেদের হেফাজতে নিতে পারেনি পুলিশ। সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, “বোলপুরের এসিজেএম সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দারের এজলাসে শেখ ওমর ও বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এই দু’জন আত্মসমর্পণ করেছেন। বিচারক তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।”
গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে মদ্যপ অবস্থায় দলবল নিয়ে বোলপুর থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল সুব্রত-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে। পুলিশের সেই দাবিকে প্রথম থেকেই উড়িয়ে দেন শাসক দলের নেতারা। খোদ জেলার এসপি মন্তব্য করেন, এখন ‘কঠিন সময়ে’র মধ্যে যেতে হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করলেও শাসক দলের ‘চাপেই’ অভিযুক্তদের কাউকে ধরতে পারছে না পুলিশ। যেমন পারেনি অনুব্রত মণ্ডলকেও। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে একাধিক বার উস্কানিমূলক বক্তৃতা (পুলিশকে বোমা মারার নির্দেশ-সহ), এমনকী পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হলেও পুলিশ তাঁকে ধরার সাহস দেখায়নি।
বিজেপি-র জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, “পুরভোটে প্রার্থী নিয়ে ওদের কাজিয়া গোটা জেলাজুড়েই চলছে। ওমরের আত্মসমর্পণ নতুন নাটক। আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিন পাইয়ে প্রার্থী করার জন্যই তৃণমূল এই চাল চেলেছে। পুলিশের যোগসাজসেই এটা হচ্ছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরলেও ধরছে না।
প্রশ্ন উঠছে, ঘটনার ছ’মাস পনেরো দিন পরেও পুলিশ সুদীপ্ত বা তাঁর অন্য সঙ্গীদের নাগাল পায়নি। অথচ, বিরোধীদের মতো শাসকদলের তরফেও বারবার দাবি করা হয়েছে, সুদীপ্ত শহরেই রয়েছেন। তৃণমূলের এই যুব নেতার পুলিশ পেটানোর ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। দলের অন্দরে এবং বাইরে মুখ পোড়ার পর ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন খোদ জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অনুব্রত মুরারইয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে হেঁটে, ‘ভাল ছেলে’ বলেন সুদীপ্তকে। পুলিশ তাঁকে ধরতে না পারলেও অনুব্রতর বরাবরের দাবি, সুদীপ্ত শহরেই রয়েছেন। কার্যত তৃণমূলের তৎকালীন যুব সভাপতি তথা বোলপুর পুরসভার স্যানিটারি ইন্সপেকটর সুদীপ্ত এবং তাঁর অনুগামীদের গ্রেফতার নিয়ে সংশয় দেখা দেয় খোদ পুলিশ মহলে। দু’বার তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
এ দিকে, তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, পুলিশের কাছে অধরা হলেও দলীয় সভা সমিতিতে যোগ দিতে বা, আসন্ন পুরভোটের জন্য ওয়ার্ড কমিটির বৈঠকে বক্তব্য দিতে দেখা গিয়েছে সুদীপ্তকে। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর সঙ্গে একমঞ্চে হাজিরও থাকেন তিনি। এমনকী, বোলপুর থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে তৃণমূল কার্যালয়ে রোজ সকাল সন্ধ্যায় হাজিরও হন সুদীপ্তবাবু এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা।
ঘটনার পর থেকেই ফেরার সুদীপ্তকে ‘ছুটিতে রয়েছেন’ বলে জানিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরসভা। এ দিনও বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত দাবি করেন, “সুদীপ্তবাবু অসুস্থ। তিনি সে কথা জানিয়ে ছুটির আবেদন করেছেন। সুস্থ হয়ে কাজে যোগ না দেওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy