তৃণমূলের সমর্থনে সিপিএমের সহ-সভাপতি হল মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে। নির্বাচিত সহ-সভাপতির নাম নাসিম শেখ। মুরারই ১ ব্লকের বিডিও আবুল কালাম বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির ২১ জন সদস্যের মধ্যে ১৮ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নাসিম শেখের নাম সহসভাপতি পদে প্রস্তাব করেন বখতিয়ার শেখ নামে এক সদস্য। সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন ওয়াব শেখ নানে আর একজন সদস্য।” বিডিও জানান, নাসিম শেখের নাম প্রস্তাব আসার পর দ্বিতীয় কোনও নাম সহসভাপতি পদে প্রস্তাব আসেনি। সেই জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাসিম শেখ সহসভাপতি নির্বাচিত হন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে দলগত অবস্থান ছিল সিপিএম ১০, তৃণমূল ৭, কংগ্রেস ৪। কংগ্রেস ও তৃণমূল মিলিত ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন করে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন কংগ্রেসের ধীমান সাহা এবং সহসভাপতি হন কংগ্রেসের আলি মোর্তাজা খান। সভাপতি হওয়ার মাস দু’য়েক পরে ধীমান সাহা-সহ কংগ্রেসের দু’জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। এক মাস আগে সহসভাপতি পদ থেকে শারীরিক কারণ দেখিয়ে ইস্তফা দেন কংগ্রেসের আলি মোর্তাজা খান। শুক্রবার সেই পদেই নির্বাচন ছিল।
এ দিন সহসভাপতি নির্বাচনের সময় উপস্থিত ১৮ জন সদস্যের মধ্যে সিপিএমের ৮ জন, তৃণমূলের ৮ ও কংগ্রেসের ২ জন সদস্য ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন না পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলের নেতা সিপিএমের আব্দুস সামাদ এবং ওই দলের আর এক সদস্য তথা দলের মুরারই জোনাল সম্পাদক দুকড়ি রাজবংশীর স্ত্রী শ্যামলী রাজবংশী। তৃণমূলের এক সদস্য বাইরে থাকার জন্য এ দিন তিনিও সভায় উপস্থিত ছিলেন না। ইস্তফা দেওয়ার পরও আলি মোর্তাজা খান (বর্তমানে মুরারই ১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ) নিজে সহসভাপতি নির্বাচনের সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির নানারকম দুর্নীতিমূলক কাজের সঙ্গে আপোষ করা মুশকিল হয়ে পড়ছিল। তাই শারীরিক কারণ দেখিয়ে ইস্তফা দিয়েছি।”
কেন হঠাৎ নাসিম শেখকে সমর্থন করল তৃণমূল? তাহলে কি নাসিম শেখ তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন? নাসিমের কথায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “৭ জন সদস্য আমরা আলাদা গ্রুপ করে দল গঠন করে সিপিএমে না থাকার কথা মহকুমাশাসককে লিখিত ভাবে জমা দিয়েছি। মৌখিক ভাবে আমরা এখন তৃণমূল করি।” এর বেশি কিছু জানতে গেলে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির কাছ থেকে জানবেন বলে তিনি ফোন রেখে দেন। সিপিএমের এক সদস্য বলেন, “৭ জনের দল গঠন করে বৃহস্পতিবার মহকুমাশাসকের কাছে কাগজ জমা দেওয়া হয়েছে।” মহকুমাশাসকের কোনওরকম হেয়ারিং ছাড়া কী করে গ্রুফ কার্যকর হল? রামপুরহাট মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “৭ জন সদস্য লিখিতভাবে জানিয়েছেন, সিপিএমের সঙ্গে তাঁরা আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চান না। দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি এখনও আমার কাছে জমা পড়েনি। বিষয়টি জেলা পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশ আসার পর খতিয়ে দেখা হবে।”
এ দিনের নির্বাচন ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছ। সিপিএম সদস্যরা তা হলে কেন সহসভাপতি পদে লড়াই করলেন না? কিংবা কেনই বা পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএমের বিরোধী দলনেতা আব্দুস সামাদ এ দিন নির্বাচনের সভায় উপস্থিত থাকলেন না? এ সব প্রশ্নে সিপিএমের মুরারই জোনাল কমিটির সম্পাদক দুকড়ি রাজবংশী বলেন, “আমাদের দশ জন সদস্যের মধ্যে তিন জন সদস্য আগেই তৃণমূলের সঙ্গে যোগ রেখেছেন। তাই তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে আগেই। আজ বিরোধী দলনেতা অন্য সদস্যদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার জন্য হুইপ জারি করেছিলেন। এর পর আজ কী হয়েছে সেই খবর নিয়ে দলীয় আইন অনুযায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।” অন্য দিকে, তৃণমূলের মুরারই ১ ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বিনয় ঘোষ বলেন, “আমরা কাউকে সমর্থন করি না। সাতজন সিপিএম সদস্য পৃথক ভাবে দল গঠন করে এসডিও’র কাছে তাঁদের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় এখন তৃণমূল করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy