Advertisement
E-Paper

সপ্তাহভর রাস্তায় পড়ে বৃদ্ধা, ক্লাবের চেষ্টায় ঠাঁই বাড়িতে

বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে টানা এক সপ্তাহ ধরে তিনি পড়েছিলেন একটি চায়ের দোকানে। রবিবারই কয়েক জনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং পুলিশের সাহায্যে হাসপাতালে ঠাঁই হয় অসুস্থ ওই বৃদ্ধার। সোমবার স্থানীয় একটি ক্লাবের মধ্যস্থতায় বৃদ্ধার তিন ছেলে পালা করে মাকে তাঁদের সঙ্গে রাখতে রাজি হলেন। ঘটনাটি জেলা সদর সিউড়ির দত্তপুকুর পাড় এলাকার।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:২৬
তখনও রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র

তখনও রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র

বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে টানা এক সপ্তাহ ধরে তিনি পড়েছিলেন একটি চায়ের দোকানে। রবিবারই কয়েক জনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং পুলিশের সাহায্যে হাসপাতালে ঠাঁই হয় অসুস্থ ওই বৃদ্ধার। সোমবার স্থানীয় একটি ক্লাবের মধ্যস্থতায় বৃদ্ধার তিন ছেলে পালা করে মাকে তাঁদের সঙ্গে রাখতে রাজি হলেন। ঘটনাটি জেলা সদর সিউড়ির দত্তপুকুর পাড় এলাকার।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ছেলেমেয়েদের সংসার থেকে এক রকম বিতাড়িত হয়েই প্রমিলা দে নামে ওই অসুস্থ বৃদ্ধা গত কয়েকদিন ধরেই সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তার দত্ত পুকুড়ের শিবমন্দির সংলগ্ন চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ দে, সমরেশ দে-রা জানান, গত ৬-৭ দিন থেকে ওই বৃদ্ধা সেখানে পড়ে ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশেরই কেউ তাঁকে খেতে দেন, কেউ বা চা দেন। বর্ষার জল-হাওয়ায় বৃ্দ্ধাকে কাঁপতে দেখে এক সহৃদয় ব্যক্তি বৃদ্ধাকে একটি চাদরও দেন। তাঁরা বলেন, “বৃদ্ধাকে দেখেই বুঝেছিলাম, উনি খুব অসুস্থ। চোখে ভাল করে দেখতে পান না। কানে ভাল শুনতে পান না। চলতে ফিরতেও পারেন না।” বৃদ্ধাকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হতেই এলাকায় খোঁজ খবর শুরু হয়। পরে জানা যায়, বৃদ্ধার ছেলেমেয়েরা বর্তমান। তাঁরা সিউড়িতেই বাস করেন।

প্রমিলাদেবীর স্বামী নকড়ি দে এবং বড় ছেলে অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। মেজ ছেলে ষষ্ঠীপদ পরিবার নিয়ে বাস করেন সিউড়ির ভট্টাচার্য পাড়ায়। চতুর্থ ছেলে নির্মলও থাকেন শহরের এসপি মোড়ে। আর এক ছেলে অনিল থাকেন খয়রাশোলের কমলপুরে। নির্মলবাবু বলেন, “মাকে দীর্ঘ দিন ধরে আমিই দেখি। বাকি ভাইবোনেরা কেউ কোনও খবর পর্যন্ত নেয় না। কিছু দিন ধরেই মা দত্তপুকুর পাড়া ও সাঁইথিয়া বাইপাসে দাদা-দিদিদের বাড়ি যাওয়ার জন্য জেদ ধরেছিলেন।” তাঁর দাবি, দিন সাতেক আগে প্রমিলাদেবী নিজেই দত্তপুকুর পাড়া যাচ্ছি বলে রিকশা করে চলে যান। রবিবার তিনি খবর পান তাঁর মা দত্তপুকুর পাড়ের শিব মন্দির এলাকায় পড়ে রয়েছেন।

কেন খবর পেয়েও মাকে বাড়িতে আনছেন না? রবিবার তাঁর উত্তর ছিল, “আমার পক্ষে একা মাকে দেখা সম্ভব নয়। আমি চাই সব ভাইবোনেরা মিলে মাকে দেখার দায়িত্ব নিক।” তাঁর স্ত্রী রূপাদেবী বলেন, “যদি সবাই দেখে তা হলে আমরাও দেখব। যদি কেউ ভাবে টাকা নিয়ে মায়ের দেখভাল করে দেবে, তা হলে, মাসে মাসে সাধ্যমতো খরচের টাকা দিয়ে দেব। এত দিন তো ওঁকে দেখে এসেছি। কেউ কোনও খোঁজ খবর পযন্ত নেয়নি।”

ছেলেমেয়ে বেঁচে থাকতে অসহায় মাকে কেউ দেখে না, এই অভিযোগ প্রমিলাদেবীরও। এ ক’দিনে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেন না। কখনও কখনও কথার খেই হারিয়ে যায়। থেমে থেমে বললেন, “একটা চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। একটা চোখে অল্প অল্প দেখতে পাই। ভাঙা পায়ে চলতে ফিরতে পারি না। ছেলেমেয়ে, নাতি সবাই আছে। কিন্তু কেউ আমাকে রাখতে চায় না। আমি সকলের বোঝা হয়ে গিয়েছি।” তাঁর দাবি, ছোট ছেলে অথবা তিন মেয়ের কেউ-ই তাঁর কোনও খবর রাখেন না। পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী স্থানীয় বাসিন্দা মনোরঞ্জন দাস বলেন, “সব জেনে বৃদ্ধার এক ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ওঁর একার পক্ষে মাকে দেখা সম্ভব না।” এরপরেই মনোরঞ্জনবাবুরা পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। সিউড়ি থানার আইসির পরামর্শে বৃদ্ধাকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার স্থানীয় চৌরঙ্গী ক্লাবের উদ্যোগে তিন ভাইকে ডাকা হলে, দীর্ঘ বৈঠকে তাঁরা প্রথমে প্রমিলাদেবীকে বৃদ্ধাবাসে রাখার প্রস্তাব দেন। ক্লাবের কর্মকর্তারা তাতে আপত্তি জানালে, এক মাস করে পালা হিসেবে তাঁরা নিজেদের কাছে মাকে রাখতে রাজি হয়েছেন। নির্মলবাবু বলেন, “ক্লাবের প্রস্তাবে আমরা রাজি। প্রথম মাসে মা মেজো ভাইয়ের কাছে থাকবে।” ক্লাবের তরফে দেবাশিস ধীবর বলেন, “তিন ভাই লিখিত দিলে, মহকুমাশাসককে বিষয়টি জানাব প্রমিলাদেবীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে।” সিউড়ি থানার আই সি সমীর কোপ্তা বলেন, “যাঁরা ওই বৃদ্ধাকে থানায় এনেছিলেন এবং তিন ছেলেকে রাজি করিয়েছেন মাকে রাখতে তাঁদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”

suri bhaskarjyoti mazumder pramila dey neglected old lady
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy