Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
পাত্রসায়রে ফের অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা গোপে

হুমকির ভয়ে ঘরছাড়া ছাত্রনেতা

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক দাপুটে নেতার ‘ভয়ে’ ঘরছাড়া শাসকদলেরই আর এক ছাত্র নেতা! ঘটনাটি বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের। মোটা টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে সালিশি করা এবং নির্যাতিতা বধূকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় সুব্রত ওরফে গোপে দত্ত নামে পাত্রসায়রের টিএমসিপি নেতার নাম জড়িয়েছিল আগেই। অভিযোগ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে ধরার সাহস দেখায়নি। এ বার পাত্রসায়র কলেজের ছাত্র সংসদের তহবিলের টাকা তুলে দিতে অস্বীকার করায় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদককে (এজিএস) হুমকি দিয়ে ঘরছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে গোপের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত নেতা। —নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্ত নেতা। —নিজস্ব চিত্র

দেবব্রত দাস
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক দাপুটে নেতার ‘ভয়ে’ ঘরছাড়া শাসকদলেরই আর এক ছাত্র নেতা!

ঘটনাটি বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের। মোটা টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে সালিশি করা এবং নির্যাতিতা বধূকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় সুব্রত ওরফে গোপে দত্ত নামে পাত্রসায়রের টিএমসিপি নেতার নাম জড়িয়েছিল আগেই। অভিযোগ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে ধরার সাহস দেখায়নি। এ বার পাত্রসায়র কলেজের ছাত্র সংসদের তহবিলের টাকা তুলে দিতে অস্বীকার করায় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদককে (এজিএস) হুমকি দিয়ে ঘরছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে গোপের বিরুদ্ধে। এবং সেই অভিযোগ হয়েছে বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কাছে।

মঙ্গলবার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রদের এক প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী এবং জেলা টিএমসিপি সভানেত্রী চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গোপের নামে অভিযোগ জানান। অভিযোগকারীদের বক্তব্য, নানা অছিলায় কলেজে গোপের দৌরাত্মে তাঁরা অতিষ্ঠ। অরূপ খাঁ বুধবার বলেন, “আমি বাইরে রয়েছি। তবে পাত্রসায়র থেকে কয়েক জন ছাত্র এসেছিলেন বলে শুনেছি। অভিযোগ এখনও হাতে পাইনি।” চুমকিও বলেন, “পাত্রসায়র কলেজের প্রতিনিধিরা যখন আমার কাছে এসেছিলেন, সেই সময় আমি বাঁকুড়ায় ছিলাম না। একটা ঝামেলা হয়েছে বলে জানি। বিষয়টি দেখছি।”

গোটা ঘটনার পিছনে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। পাত্রসায়র কলেজের ছাত্র সংসদের এজিএস দীনবন্ধু কারক-সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্র প্রতিনিধিই গোপে-বিরোধী। তাঁরা সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুলের অনুগামী। দল সূত্রের খবর, সেই কারণে এই কলেজের কর্তৃত্ব নিজের দখলে আনার জন্য টিএমসিপি-র প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি গোপে উঠেপড়ে লেগেছেন। তা নিয়েই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। দীনবন্ধুর বাড়ি পাত্রসায়রের মামুদপুর গ্রামে। তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে কলেজে নবীনবরণ উৎসব হয়েছিল। সাধারণ সম্পাদক-সহ বাদে ছাত্র সংসদের বাকিদের ভয় দেখিয়ে সই করিয়ে ছাত্র সংসদের তহবিল থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছিলেন গোপে ও তাঁর শাগরেদরা। সেই টাকার হিসাব আজও দেননি গোপে। দীনবন্ধুর আরও দাবি, গত ২৮ নভেম্বর কলেজে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ফের তাঁদের হুমকি দিয়ে টাকা তুলে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন গোপে। তিনি অস্বীকার করায় গোপে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “প্রাণভয়ে ২৯ নভেম্বর থেকে আমি ঘরছাড়া হয়ে রয়েছি।”

দীনবন্ধুর অভিযোগ, “২৮ তারিখ দুর্গাপুরে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। গোপে ওই দিনই ফোন করে টাকা তুলে ওর হাতে দিয়ে যেতে বলে। মিটিংয়ে যাচ্ছি বলতেই গোপের হুমকি, ‘কোথাও যাওয়া চলবে না। আগে কলেজে এসে সই করে যা। তোকে মারলে এখানে মমতা এসে কি বাঁচাবে?’ এর পর ওই রাতেই গোপের দলবল আমার বাড়িতে চড়াও হয়। আমি কোনও মতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে লুকিয়ে পাত্রসায়র সদরে চলে আসি।” আপাতত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুলের আশ্রয়ে রয়েছেন দীনবন্ধু। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি কেন? দীনবন্ধুর বক্তব্য, “পুলিশকে মৌখিক ভাবে সবই জানিয়েছি। তবে, আগে দল কী ব্যবস্থা নেয় দেখি।”

গোপের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। ২০০৯ সাল থেকেই সিপিএম-তৃণমূল পরের পর সংঘর্ষে নাম জড়িয়েছে তাঁর। সিপিএম নেতা-কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর, মারধর, খু্ন, জরিমানা আদায়, তোলাবাজির পাশাপাশি নিজের দলের কর্মীদেরও মারধর, পার্টি অফিস ভাঙচুর-সহ পুলিশের খাতায় গোপের নামে রয়েছে ৪০টিরও বেশি অভিযোগ। চার বার গ্রেফতার হয়েছেন। অধিকাংশ মামলায় জামিন পেয়েছেন। চলতি অক্টোবরে এক বধূকে ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবককে বাড়িতে এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ওই বধূকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে গোপের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাঁকে ধরেনি। নভেম্বরে এক ব্যবসায়ীকে ফের মারধরের অভিযোগ ওঠে গোপে ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রেও থানায় অভিযোগ হওয়ার পরেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।

জিয়ারুলের অভিযোগ, “মাধ্যমিক পাশ গোপে কোনও দিন কলেজে পড়েনি। তবু কলেজের দাদা হওয়ার জন্য এলাকার কিছু তোলাবাজকে সঙ্গে নিয়ে অশান্তি পাকাচ্ছে। আমার সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে নিরীহ ছাত্র প্রতিনিধিদের নানা হুমকি দিচ্ছে। ছাত্র সংসদের টাকায় ফূর্তি করার জন্যই গোপের এখন কলেজের দিকে নজর পড়েছে।”

পাত্রসায়র কলেজের টিচার-ইন-চার্জ প্রিয়জ্যোতি সামন্ত বলেন, “ছাত্র সংসদের তহবিল নিয়ে কী হয়েছে, তা আমি জানি না। আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি।” ও দিকে, গোপে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, “ছাত্র সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি স্বেচ্ছায় নবীনবরণ অনুষ্ঠান করেছে। আমি কাউকে হুমকি দিয়ে টাকা তুলতে বাধ্য করেনি। দীনবন্ধুকেও ফোনে হুমকি দিইনি। পুরোটাই মিথ্যা অভিযোগ।”

বারবার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও দল গোপের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। জিয়ারুলের হুঁশিয়ারি, “জেলা নেতৃত্ব কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন দেখছি। কিছু না হলে শেষে গোপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরাই নেব!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE