প্রসূতিদের সন্তান প্রসবের সময় নিখরচায় তাঁদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং বাচ্চা হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য চালু হয়েছিল নিশ্চয়যান প্রকল্প। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে এই প্রকল্পের ১৩টি ভাড়া করা অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। কিন্তু নিশ্চয়যান পরিষেবায় যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স মালিক ও কর্মীরা কয়েক মাস ধরে বকেয়া ভাড়া না পেয়ে বুধবার ধর্মঘট পালন করলেন। আর তার জেরে এ দিন রীতিমতো সমস্যায় পড়লেন প্রসূতি ও তাঁদের আত্মীয়েরা।
ওই প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্সের মালিকদের ক্ষোভ, চার-পাঁচ মাস ধরে তাঁরা গাড়ির বিলের টাকা পাচ্ছেন না। ফলে চালকদের যেমন বেতন মেটানো যাচ্ছে না, তেমনই গাড়ি চালানোর জন্য তেল কেনাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পরিষেবা বন্ধ রেখে বুধবার থেকে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এ দিকে, নিখরচার অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে এ দিন প্রসূতিদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কয়েকদিনের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বিষ্ণুপুর হাসপাতাল চত্বরে বসে থাকতে দেখা যায় গড়বেতার খড়কুসমা গ্রামের বাসিন্দা টিয়া বাখালদের মতো কয়েকজন প্রসূতিকে। টিয়া বলেন “কী বিপদ! এখন শুনছি নিশ্চয়যান বন্ধ। এ দিকে অন্য গাড়িগুলি মোটা ভাড়া হাঁকছে। আমরা গরিব মানুষ কী করে বাড়ি ফিরব বুঝতে পারছি না।” একই অবস্থায় পাত্রসায়রের হিরন্ময় প্রামাণিক। তিনি শেষে একটি ভাড়ার গাড়ি জোগাড় করেন। তিনি বলেন, “মোটা টাকা ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে প্রসূতি ও বাচ্চাকে নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। এমন অবস্থা তৈরির আগে হাসপাতাল সুপারের বিষয়টি দেখা উচিত ছিল।” ক্ষোভের কথা শুনিয়েছেন এ দিন সমস্যায় পড়া অন্যান্য প্রসূতি মায়েরা ও তাঁদের আত্মীয়েরাও।
এই প্রকল্পের অন্যতম অ্যাম্বুল্যান্স মালিক প্রশান্তকুমার রায় বলেন, “এই হাসপাতালে নিশ্চয়যান পরিষেবায় আমার তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়ায় খাটে। গত চার-পাঁচ মাস কোনও বিলের টাকা না পাওয়ায় চালককে বেতন দিতে পারছি না। তেল কেনারও টাকা নেই। বার বার সুপারকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি আমরা।” অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের কারও কারও দাবি, ব্যাঙ্ক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে গাড়ি ব্যবসায় নেমে তাঁরা বিপদে পড়েছেন। ঠিক মতো বিলের টাকা না পাওয়ায় এখন নাজেহাল অবস্থা। পাওনা টাকা না মেলা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
হাসপাতাল সুপার পৃথ্বীশ আকুলি বলেন, “বিলের টাকা না পাওয়ায় দিন কয়েক আগে ওঁরা আমাকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।’’ তবে প্রসূতিদের বাড়ির লোকেদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্যই তাঁদের ভুগতে হচ্ছে।