Advertisement
E-Paper

না খেয়ে মরলেন পুরুলিয়ার বিমলা? প্রশাসন বলছে, পেটের রোগ

কীসে মারা গেলেন বিমলা পাণ্ডে— খেতে না পাওয়া, ‘গাফিলতি’, না রোগ— আজ, রবিবার তাঁর শ্রাদ্ধের আগে সেই প্রশ্নই উঠছে পুরুলিয়ায়।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪৯
মৃতার ছেলে অভির পাণ্ডে। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

মৃতার ছেলে অভির পাণ্ডে। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

কীসে মারা গেলেন বিমলা পাণ্ডে— খেতে না পাওয়া, ‘গাফিলতি’, না রোগ— আজ, রবিবার তাঁর শ্রাদ্ধের আগে সেই প্রশ্নই উঠছে পুরুলিয়ায়।

৬৭ বছরের বিমলাদেবী মারা যান ৯ অগস্ট। থাকতেন ঝালদা ২ ব্লকের বামনিয়া-বেলাডি পঞ্চায়েতের লাগাম গ্রামে। পরিবার বলতে ৪৮ বছরের ছেলে অভির। ভিক্ষা করে ভাত জুটত মা-ছেলের। ছেলে কখনও-সখনও ভিন্‌ গাঁয়ে চায়ের দোকানে গ্লাস ধুতেন। রেশন কার্ড নেই। বিধবা বা বার্ধক্য ভাতা পেতেন না বিমলা। জোটেনি বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি। ১০০ দিনের প্রকল্পের কার্ড হাতে পাননি বলে দাবি ছেলের। যদিও তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব এবং প্রশাসনের দাবি, অভির পাণ্ডের নামে জব-কার্ড রয়েছে।

লাগাম গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই দিনমজুর। অভিরের দাবি, এলাকায় তাই ভিক্ষা পাওয়া সমস্যা। তিনি বলেন, ‘‘মা গত ৪-৫ অগস্ট থেকে শয্যাশায়ী ছিল। ভিক্ষায় বেরোলে দেখত কে? তার মধ্যে সে সময় তেড়ে বৃষ্টি হচ্ছিল। বেরনোও যাচ্ছিল না।’’

পড়শিরা দু’-এক দিন মা-ছেলেকে খাবার দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের ঘরেও চাল বাড়ন্ত। অভিরের কথায়, ‘‘পাঁচ-ছ’দিন শুধু জল খেয়ে কাটিয়েছি। না খেতে পেয়েই মা মারা গেল।’’ যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি, পেটের রোগে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

রেশন কার্ড কেন পাননি জানেন না অভির। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘২০১২ সাল থেকে পঞ্চায়েত সদস্যদের রেশন-কার্ড করিয়ে দিতে বলেছি।’’ এলাকার বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের দিলীপ মাহাতোর দাবি, ওই পরিবারের কার্ড করাতে একাধিক বার তিনিও ব্লক খাদ্য দফতরে বলেছেন। কাজ হয়নি।

সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা থেকে পাণ্ডে পরিবার কেন বঞ্চিত রয়ে গেল, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে প্রশাসনের ভরসায় বলা হয়, ‘জঙ্গলমহল হাসছে’ তারা জবাব দিক কেন পাণ্ডেদের দরজায় সময়ে পৌঁছল না?’’

প্রশাসন জানাচ্ছে, জঙ্গলমহলে ‘ডিজিটাল রেশন কার্ড’ চালু হচ্ছে। প্রাপক-তালিকায় পরিবারটির নাম রয়েছে। আবাস প্রকল্পেও তাঁরা প্রাপক। তবে নাম রয়েছে অনেকের পরে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধা বিধবা ভাতা বা বার্ধক্য ভাতার আবেদন করেননি। কেন করেননি, বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে গ্রামে গিয়ে অফিসারেরা তাঁর ছেলের কাছে সে প্রশ্নের সদুত্তর পাননি।’’

‘‘বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে প্রশ্ন করে কী লাভ,’’ বলছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক নেপাল মাহাতো। তাঁর সংযোজন, ‘‘ঘটনাটা বুঝিয়ে দিচ্ছে, প্রকল্প অনেক থাকলেও, সুফল সবাই পান না।’’ মানছেন না রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘কেন, কী হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি।’’

অভিরের আক্ষেপ, ‘‘সবাই আগে খোঁজ নিলে মা হয়তো বেঁচে থাকত।’’

Bimala Pandey Starvation Death বিমলা পাণ্ডে
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy