গত বছর জুলাইতে কোটা-বিরোধী বাংলাদেশের আন্দোলনে লাঠি হাতে রাস্তায় তাঁর ছবি ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। ‘আন্দোলনকারী’ সেই নিউটন দাসের নাম কাকদ্বীপের ভোটার-তালিকায় থাকায় বিজেপি-তৃণমূলের চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির দাবি, তৃণমূল নেতাদের সাহায্যে অবৈধ ভাবে নাগরিকত্ব পেয়েছেন নিউটন। তৃণমূল মানেনি। তবে তৃণমূলের একাধিক নেতার সঙ্গে নিউটনের ছবিও সামনে এসেছে।
কাকদ্বীপের স্বামী বিবেকানন্দ পঞ্চায়েতের দাসপাড়ার বাসিন্দা হিসাবে পরিচিত নিউটন। অভিযোগ, তাঁর দাদা তপন দাস ২০০০ সালে বাংলাদেশ থেকে এ পার বাংলায় আসেন এবং ভোটার-তালিকায় নাম তোলেন। পরে, নিউটনও এ দেশে চলে আসেন। নামখানার একটি স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেন প্রায় চার বছর। পরে বাংলাদেশে ফিরে যান।
নিউটনের এ দেশের ভোটার কার্ড রয়েছে। তাঁর দাদা বলেন, ‘‘ভাই চার বছর ধরে এখানে নেই। পড়তে এসেছিল। ফিরে গিয়েছে। ও বাংলাদেশেরও ভোটার। আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই।’’ নিউটনের বক্তব্য মেলেনি। তবে, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো একটি ভিডিয়োয় (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমি কাকদ্বীপেরই বাসিন্দা। ২০১৪ সাল থেকে কাকদ্বীপেরই ভোটার। সব কাগজপত্র আছে। ২০১৬ সালে মন্টুরাম পাখিরাকে (তৃণমূল বিধায়ক) ভোট দিয়েছিলাম। আমার ভোটার কার্ড হারিয়ে গেলে, ২০১৮-তে বিধায়কের সাহায্যে নতুন কার্ড পেয়েছি। কাকদ্বীপের একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ভোটার-তালিকা যাচাইয়ের কাজ চলছে। ভুয়ো নাম নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াতেই বাদ যাবে। বিডিও ঋক গোস্বামী বলেন, ‘‘নিউটন দাসের বিষয়ে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, তা হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তে কিছু প্রমাণিত হলে প্রশাসনিক যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেওয়া হবে।’’
বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অশোক পুরকাইতের দাবি, ‘‘বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিচ্ছে শাসক দল। এদের হাত ধরেই দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে। যে সব তৃণমূল নেতা, সরকারি আধিকারিকেরা টাকার বিনিময়ে ভোটার কার্ড করে দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি।’’
নিউটনের সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সুন্দরবনের সভাপতি দেবাশিস দাসেরও ছবি রয়েছে। দেবাশিস বলেন, ‘‘নিউটন ছোট থেকে আমার সঙ্গে পড়েছে। আমরা এক সঙ্গেই বড় হয়েছি। ও পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে যাতায়াত করে। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণপত্র রয়েছে। তাই বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়েছে। অনুষ্ঠানে আমরা এক সঙ্গে ছবিও তুলেছিলাম।’’ তবে বিজেপির অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দেবাশিস। তিনি বলেন, ‘‘নিউটনের ভোটার কার্ড কী ভাবে হয়েছে, তা প্রশাসন বলতে পারবে। তৃণমূল জড়িত নয়। নিউটনের বিরুদ্ধে প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।’’ কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘নিউটন দাসকে চিনি না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। জনসভাতে কে আসছে, না আসছে, কখন ছবি তুলেছে আমার সঙ্গে জানা নেই। ভোটার তালিকায় কী ভাবে নাম উঠেছে, তা জানি না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)