E-Paper

৬০ পেরিয়ে গিয়েও প্রথম বার ভোটার!

বাংলাদেশ ঘেঁষা রাজ‍্য পশ্চিমবঙ্গের ভোটার-তালিকায় বাংলাদেশি নাগরিক ঢুকে পড়া নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধীকরণ শাখার সতর্কবার্তা পেয়ে কমিশনের খোঁজখবরের ভিত্তিতে কিছু গোলমেলে দিক উঠে আসছে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ০৬:০৩

—প্রতীকী চিত্র।

বয়স ৪০-৫০ অনেকেরই। কেউ বা ষাটোর্ধ্বও। অথচ প্রথম বারের ভোটার হিসেবে তালিকায় নাম উঠেছে তাঁদের। পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় এই ধরনের নমুনার হঠাৎ ছড়াছড়ি দেখছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এমন ‘সন্দেহজনক’ ভোটার তালিকা দেখে এ রাজ্যের বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও), ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও, যা সাধারণত মহকুমা শাসকেরা হয়ে থাকেন) এবং অ‍্যাসিস্ট‍্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের (এইআরও) একাংশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতেশুরু করেছে।

বাংলাদেশ ঘেঁষা রাজ‍্য পশ্চিমবঙ্গের ভোটার-তালিকায় বাংলাদেশি নাগরিক ঢুকে পড়া নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধীকরণ শাখার (ফরেনার্স রিজিয়োনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস বা এফআরআরও) সতর্কবার্তা পেয়ে কমিশনের খোঁজখবরের ভিত্তিতে কিছু গোলমেলে দিক উঠে আসছে। বিশেষত বাংলাদেশি নাগরিকেরা কিসের ভিত্তিতে এবং কার অনুমোদনে ভোটার কার্ড পেলেন, তা দেখা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। অনেকেরই পুরনো নথি মিলছে না। পুরনো নথি সংরক্ষণের বিধি কত দূর মানা হচ্ছে তা-ও দেখছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয়। ১৮-২৫ বছরের নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে নাম তোলার আগে কিছু নির্দিষ্ট নথি দরকার হয়। অবৈধ ভাবে থেকে যাওয়া বাংলাদেশের নাগরিকেরা কী ভাবে সেই সব নথি জোগাড় করতে পারছেন, সেটাও অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছে।

সূত্রের দাবি, এফআরআরও-র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪০-৬০ বছর বয়সে প্রথম ভোটার হয়েছেন এমন বেশ কয়েক হাজার জনের সন্ধান মিলেছে। কার্যালয়ের এক কর্তার কথায়, “৪০-৬০ বছরের অনেকের ভোটার তালিকায় নাম তোলা দেখে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তাঁরা এত দিন কোথায় ছিলেন? দেখছি, কোনও সংশোধনের সূত্র ছাড়াই হঠাৎ উদয় হয়ে অনেকে আবেদন করছেন।” আগে বছরে একবার ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ হত। এখন তা হয় বছরে চার বার। আবেদনের ধারা লক্ষ করেই বয়স্কদের নাম তোলার প্রবণতা সংশ্লিষ্ট মহলের নজরে এসেছে।

আবার দেখা যাচ্ছে, কোনও এক বাংলাদেশি নাগরিক নিয়মিত এ দেশে আসা-যাওয়া করতেন। থাকতেন সীমান্তবর্তী কোনও জেলায়। ক্রমে অবৈধ ভাবে অন‍্য নামে একটি ভোটার কার্ড করিয়ে ফেলেছেন তিনি। এমনকি, সেই ব্যক্তির ভাইও নাম বদলে ভোটার কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। দু’জনের কাছে রয়েছে আধার কার্ডও। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয়ের কর্তাদের প্রশ্ন, কোন নথির ভিত্তিতে ওই বাংলাদেশিরা এ দেশে থাকেন বলে প্রমাণ করলেন এবং ভোটার কার্ড পেলেন? সেই সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কোনও আত্মীয়যোগ দেখিয়ে কি তাঁরা নির্বাচনী আধিকারিকদের চোখে ধুলো দিয়েছেন?

ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলা বা বাদ দেওয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকে ইআরও এবং এইআরও-দের হাতে। বুথ স্তরে আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব সামলান বিএলও-রা। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, একমাত্র সরকারি কর্মীরাই বিএলও হতে পারেন। কিন্তু বিরোধীদের বরাবরের অভিযোগ, এ রাজ্যে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদেরই প্রধানত বিএলও করা হচ্ছে। এমনকি আশাকর্মীদেরও সে কাজে যুক্ত করা হয়। এই বিষয়টিও কমিশনের নজরে এসেছে। ইতিমধ্যেই এমন কয়েক জনের ভূমিকা আতশকাচের তলায় এসেছে।

একই সঙ্গে কার্যালয়ের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কারচুপিতে কোনও ইআরও বা এইআরও যুক্ত থাকলে নির্দিষ্ট আইনের আওতায় পদক্ষেপ করা হবে। প্রশ্ন উঠছে, বুথ লেভেল এজেন্টদের (বিএলএ) নিয়েও। কারণ, এক-একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বুথ স্তরে বিএলএ হন। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোন ব‍্যক্তি নতুন আসছেন, তাঁর কী পরিচয় সবই জানার কথা বিএলএ-দের। ভোটার তালিকা সংশোধনের বিষয়ে বিএলএ-দের মতামতও নেয় জেলা প্রশাসন। এক কর্তার কথায়, “ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরিতে কমিশন বদ্ধপরিকর। এ কাজে গাফিলতির অর্থ দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার সঙ্গে আপস করা। যা কমিশন বরদাস্ত করবে না। অনুসন্ধান চলছে। প্রমাণ পেলে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Voter Lists Fake Voter Card EPIC Number

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy