E-Paper

যোগ্যতা ছাড়াই ল্যাব অ্যাটেন্ড্যান্টের পদে সাফাইকর্মী

বেলগাছিয়ার স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা গিয়েছে, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কাজ করার জন্য জীববিদ্যা, রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যায় সম্যক ধারণা থাকার পাশাপাশি চাই রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ গবেষণাগারে ন্যূনতম এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ০৭:৩৮

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহে সিভিক ভলান্টিয়ারকে পাঠিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিল স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি। যার জেরে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি। এ বার সেই স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির সদর দফতরেই ফরেন্সিক পরীক্ষায় সহায়তার দায়িত্ব পড়েছে যাঁদের উপরে, তাঁদের সেই যোগ্যতাই নেই বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, সেখানে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট করা হয়েছে দু’জন ‘ডোম’(পদের নাম)কে। ল্যাব অ্যাটেন্ড্যান্টের কাজ পেয়েছেন দু’জন সাফাইকর্মী।

অভিযোগ, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি ন্যূনতম যোগ্যতামান। ল্যাবের কাজে সাহায্য করা তো দূর, কোন রাসায়নিকের সঙ্গে কোনটা মেশালে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেই ধারণা তাঁদের নেই বলে মেনে নিয়েছেন তাঁরা নিজেরাই। ফরেন্সিক রিপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করবেন কী, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পড়াও তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁরা নিজেরাই বলছেন, ‘‘ইংরেজি পড়তে পারি না। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনাও নেই।’’ মাধ্যমিকের গণ্ডিও পেরোননি তাঁদের কেউ কেউ। যিনি মাধ্যমিক পাশ করেছেন, তিনি তার পরে আর পড়াশোনা এগোতে পারেননি।

বেলগাছিয়ার স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা গিয়েছে, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কাজ করার জন্য জীববিদ্যা, রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যায় সম্যক ধারণা থাকার পাশাপাশি চাই রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ গবেষণাগারে ন্যূনতম এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। এই পদের কর্মীদের নথিপত্র তদারকির পাশাপাশি খাতায় পরীক্ষা এবং নমুনা সম্পর্কে সমস্ত কিছু লিখে রাখতে হয়। এ জন্য ইংরেজি জানা প্রয়োজন। এ ছাড়া ময়না তদন্তের রিপোর্ট পড়ে সায়েন্টিফিক অফিসারদের জন্য প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে রাখতে হয়। দেহাংশের মধ্যে বা তার সঙ্গে অন্য কোনও রাসায়নিক রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখে জানাতে হয়। বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর জেরে এই পরীক্ষা অত্যন্ত কার্যকর বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

ল্যাব অ্যাটেন্ড্যান্ট পদেও ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক পাশ হওয়া প্রয়োজন। বিষয় হিসেবে বিজ্ঞান থাকা চাই।

ল্যাবরেটরির কর্তাদের দাবি, প্রয়োজনের তুলনায় নিয়োগ হচ্ছে না। কাজের চাপ সামলাতে পদোন্নতি দিয়ে এ ভাবে পদ পূরণের পদক্ষেপ করা হয়েছে। এডিজি পদমর্যাদার কর্তা, স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কে জয়রমনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অনেক বছর ধরে ওঁরা কাজ করছেন, তাই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে, তাই একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নিলেই সবহয়ে যাবে।’’

যদিও ‘স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে আনা হয়েছে যাঁদের, তাঁদের দু’জন পদ অনুযায়ী ডোম ছিলেন। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য আসা দেহাংশ কাটাকুটি করে দিতেন তাঁরা। কী করে কাজ উতরোব বোঝা যাচ্ছে না।’’ ‘ডোম’ থেকে এই পদে কাজ পাওয়া এক জন বললেন, ‘‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। বিজ্ঞান অত জানি না, স্যরদের সে কথা বলেওছিলাম। কিন্তু স্যরেরা বলেছেন, শিখে নিতে হবে।’’ এমনই আর এক জনের মন্তব্য, ‘‘মাধ্যমিক পাশ করেছি তো! ঠিক সামলে নেব।’’

ল্যাব অ্যাটেন্ড্যান্টদের পরীক্ষার সময়ে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের হাতে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক তুলে দিতে হয়। পরীক্ষার উপকরণ এগিয়ে দেওয়া থেকে নমুনা রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ও তাঁদের দেখতে হয়। এক সায়েন্টিফিক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘কোনও রাসায়নিক সম্পর্কেই ধারণা নেই যাঁদের, তাঁদের দিয়ে কী করে রাতারাতি বিজ্ঞান পড়িয়ে নেব জানি না। কেসের চাপে শিখিয়ে নেওয়ার সেই সময়ই বা কোথায়!’’

খুন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে তো বটেই, যে কোনও মামলার তদন্তে পুলিশের অন্যতম সহায়ক ফরেন্সিক রিপোর্ট। এমন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এই ভাবে নিয়মবহির্ভূত পথে নিয়োগে ক্ষুব্ধ স্টেট ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির কর্মীদের বড় অংশ। প্রশ্ন উঠছে, যে ল্যাবের রিপোর্টের উপরে তদন্তের অনেক কিছু নির্ভর করে, সেখানে যথাযথ নমুনা পরীক্ষা হবে তো?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

laboratory assistant West Bengal government Medical Colleges

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy