E-Paper

২০২৩ সালেও ওই সংস্থার তৈরি স্যালাইন নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে কর্নাটকে

স্থার তৈরি ‘বিতর্কিত’ স্যালাইনের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হলেও, তার রিপোর্ট তৈরি নিয়ে পদক্ষেপে খামতি রয়েছে বলে খবর। জানা যাচ্ছে, ‘স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’-তে এখনও ওই স্যালাইনের কয়েকটি নমুনা পড়ে রয়েছে।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৩

— প্রতীকী চিত্র।

ওষুধ বা স্যালাইন তৈরির গুণমান বজায় রাখা ও জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়ায় বিস্তর ত্রুটি ধরা পড়েছিল। অসঙ্গতি মিলেছিল সেই প্রক্রিয়া নথিভুক্ত করার পর্বেও। সেই খামতি দেখেই ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’-এর সমস্ত কাজকর্ম অবিলম্বে স্থগিত রাখার সুপারিশ করে সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন (সিডিএসসিও) এবং রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল। এর পরেই রাজ্যের তরফে ওই সংস্থাকে উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্য দিকে, ওই সংস্থার তৈরি ‘বিতর্কিত’ স্যালাইনের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হলেও, তার রিপোর্ট তৈরি নিয়ে পদক্ষেপে খামতি রয়েছে বলে খবর। জানা যাচ্ছে, ‘স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’-তে এখনও ওই স্যালাইনের কয়েকটি নমুনা পড়ে রয়েছে। যার রিপোর্ট আসেনি। যদিও রাজ্যের ওই পরীক্ষাগারের আধিকারিকদের দাবি, টেকনিশিয়ান কম থাকাতেই এত দেরি। যে কারণে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যে ব্যাচ নম্বরের (২৩৯৬) ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটির নমুনা জুনে পাঠানো হলেও এখনও রিপোর্ট তৈরি হয়নি। তবে, শনিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিষয়টি ফের জানানোর পরে তৎপরতা শুরু হয়েছে। ‘স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’-র এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পরীক্ষা হয়তো হয়েছে, রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। আশা করছি সোমবারের মধ্যে হবে।”

ডিসেম্বরের গোড়ায় কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতর থেকেও ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’-এর তৈরি ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন নিয়ে অভিযোগ পায় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এর পরেই ‘সিডিএসসিও’ এবং রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকেরা যৌথ ভাবে ৪ থেকে ৬ ডিসেম্বর ওই সংস্থার উৎপাদনস্থল পরিদর্শন করেন। তখনই যাবতীয় খামতি চোখে পড়ে।

সূত্রের খবর, তদন্ত-রিপোর্টে বলা হয়, ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ উৎপাদনে বিধিসম্মত ভাবে গুণগত মান বজায় রাখার আবশ্যকতা মানা হয়নি। আরও বলা হয়, অটোক্লেভ যন্ত্রের মাধ্যমে জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়ার পদ্ধতি মানার বিষয়টিও ঠিকঠাক দেখা হয়নি। এবং সংস্থার নথিতে জীবাণুমুক্তকরণ সংক্রান্ত ১০টি পরীক্ষার কোনও উল্লেখ নেই। এমনকি জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়ার কোনও লগবুক মেলেনি। ওই ত্রুটিগুলি থেকেই সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং সেগুলি যথাযথ ভাবে শুধরে নেওয়া পর্যন্ত উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন তদন্তকারীরা।

সূত্রের আরও খবর, ২০২৩ সালের মে মাস নাগাদ কর্নাটকের চারটি জেলায় প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ সরবরাহ করছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’। ওই স্যালাইনের মান নিয়ে প্রায় ২৭টি অভিযোগ পেয়েছিল কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতর। ১৬টির মতো স্যালাইনের নমুনা পরীক্ষায়, গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরে গত নভেম্বরে পর পর প্রসূতি-মৃত্যুর নেপথ্যে ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’-এর ব্যবহারকেই কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে বিষয়টিতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের জন্য চিঠি দেয় কর্নাটক স্বাস্থ্য দফতর। জানা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরে ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’-এর উৎপাদনস্থল পরিদর্শনের সময়ে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছিল রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল। এ রাজ্যেও গত বছরের গোড়া থেকেই প্রসূতি-মৃত্যুর নেপথ্যে ওই বিশেষ স্যালাইন ব্যবহারকেই দায়ী করছিলেন চিকিৎসকেরা।

‘স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ সূত্রের খবর, স্যালাইন নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে ১২টি নমুনা জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেগুলি সবই গুণমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। এর পরেও কয়েকটি নমুনা এসেছে পরীক্ষার জন্য। যদিও সেগুলির রিপোর্ট এখনও অজানা। কেন এমন অবস্থা? রাজ্যের ওই পরীক্ষাগার সূত্রের খবর, মাদক সংক্রান্ত নমুনা পরীক্ষার চাপ অত্যন্ত বেশি। যার ফলে অন্য ওষুধের নমুনা জমে রয়েছে। টেকনিশিয়ানও কম। জানা যাচ্ছে, প্রায় ৪৫ জন টেকনিশিয়ান থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১২ জন। ‘স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’-র এক কর্তার কথায়, “আরও ২০ জনকে চুক্তির ভিত্তিতে অবিলম্বে নিয়োগ করা হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Saline Saline Controversy West Bengal government Midnapore Medical College and Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy