সরকারের স্টিয়ারিং যখন জ্যোতি বসুর হাতে, দলের যখন তিনি প্রধানতম মুখ, সংগঠনের হাল ধরেছিলেন প্রমোদ দাশগুপ্ত। তাঁর পরে সরোজ মুখোপাধ্যায়, শৈলেন দাশগুপ্তেরা। আবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন দলের মুখ, অন্দর মহল সামলে দিতেন অনিল বিশ্বাস। সময়ের চাকা ঘুরে সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকেই রাজ্য সম্পাদকের ভার দিয়েছিল সিপিএম। তিনিই হয়ে উঠেছিলেন দলের মুখ। এ বার রাজ্য কমিটির মধ্যে প্রশ্ন উঠল সম্পাদক-নির্ভরতা নিয়ে!
কর্পোরেট কায়দায় এখন দলের সর্ব স্তরের কমিটিতে আত্মমূল্যায়ন চালু করেছে সিপিএম। এর আগে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা নিজেদের ভূমিকা পর্যালোচনা করেছিলেন। নির্দিষ্ট প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে সেই প্রক্রিয়ায় আত্মমূল্যায়ন করেছে রাজ্য কমিটিও। সেই রিপোর্টের যে নির্যাস সোমবার থেকে আলিমুদ্দিনে শুরু হওয়া দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে পেশ করা হয়েছে, সেখানেই উঠে এসেছে সম্পাদককে বেশি ‘ব্যবহার’ করা নিয়ে প্রশ্ন। রিপোর্টে যেমন বলা হয়েছে, ‘রাজ্য সম্পাদকের লড়াইয়ের ময়দানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া উদ্বুদ্ধ করে— এ কথা অনেকেই বলেছেন’। একই সঙ্গে রিপোর্টে এসেছে এই প্রসঙ্গও যে, ‘রাজ্য সম্পাদককে জনসভায় বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। সংগঠনের ব্যাপারে আরও নজর তাঁকে দিতে হবে। সম্পাদকের এক বা একাধিক জেলায় নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকা উচিত নয়’।
ঘটনা যে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এখন যা গড়ন, তাতে সূর্যবাবুই সব চেয়ে সক্রিয় নেতা। কোনও বিকল্প হাতে না পেয়েই আলিমুদ্দিনকে রাজ্য সম্পাদকের উপরে আগের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বুদ্ধদা এখন বাইরে প্রায় যান না। জনসভায় সামনে রাখার মতো মুখ তো সূর্যদাই। তবে সংগঠনের খুঁটিনাটি সামাল দিয়ে বাইরে আবার দলকে টেনে নিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ বটেই!’’ যোগ্য বিকল্পের অভাব যে এখন আর দায়িত্ব ভাগ করে নিতে দিচ্ছে না, সেই সত্য দলের অন্দরে মেনে নিচ্ছেন দলের রাজ্য নেতারা। রাজ্য কমিটির ৬৭ জন সদস্যের মধ্যে নিজের কাজে ‘সন্তুষ্ট’ বলে দাবি করেছেন মাত্র এক জনই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy