এসএসসির তালিকাভুক্ত অযোগ্য প্রার্থীর নাম ইন্টারভিউয়ের তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠল এ বার। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক পদপ্রার্থী হিসেবেও এমন নাম রয়েছে, যাঁর জন্ম ১৯৯৭ সালে। প্রশ্ন উঠছে, এত কম বয়সে তিনি কী করে অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে ইন্টারভিউয়ের তালিকায় ঠাঁই পেলেন? ইন্টারভিউয়ের তালিকায় এমন ভ্রান্তির ছড়াছড়ি দেখে চাকরিপ্রার্থীদের অনেকের প্রশ্ন, এত ভুল কী করে করল এসএসসি? তাঁদের দাবি, এই ভুল সংশোধন করে নাম বাদ গেলে সেখানে মেধা অনুযায়ী নতুন নাম ঢুকিয়ে ফের ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
শনিবার রাতে এসএসসির একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ পায়। এই তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মুখোমুখি বসিয়ে তথ্য যাচাই করে ইন্টারভিউ শুরু করবে এসএসসি। কিন্তু তালিকা প্রকাশ হতেই নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে। যেমন, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছিলেন কালিয়াগঞ্জ ব্লকের সাহেবঘাটা এনএন হাই স্কুলের শিক্ষাবিজ্ঞানের শিক্ষক নীতীশরঞ্জন বর্মণ। চলতি বছরের অগস্টে এসএসসি প্রকাশিত ‘দাগি’ শিক্ষকদের তালিকায় ওই শিক্ষকের নাম ছিল বলে তাঁর স্ত্রী বিপাশা বর্মণের দাবি। সেই নীতীশ এ বারের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির এসএসসির পরীক্ষায় পাশ করে ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছেন বলে অভিযোগ। বিপাশা বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অযোগ্যেরা এ বারের এসএসসি পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে, আমার স্বামী অযোগ্য হয়ে কী ভাবে পরীক্ষায় বসে পাশ করে ইন্টারভিউয়ে ডাক পেলেন, তা বুঝতে পারছি না।” নীতীশকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইলও পরিষেবা এলাকার বাইরে বলে জানানো হয়। তাঁর বাবা কেশবের বক্তব্য, “আমার ছেলের নাম দাগিদের তালিকায় থাকলেও, প্রতিবন্ধী কোটায় সে পরীক্ষা দিয়ে ইন্টারভিউয়েডাক পেয়েছে।”
এসএসসির একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউয়ের তালিকায় নাম ওঠেনি যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডলের। তিনি এখন তাকিয়ে আছেন, নবম-দশমের ফলের দিকে। কারণ, তিনি নবম-দশমের পরীক্ষাও দিয়েছেন। চিন্ময় বলেন, ‘‘তালিকা মিলিয়ে দেখি, এসএসসির অযোগ্যদের তালিকায় নাম থাকা এক জনকে পর্যন্ত ইন্টারভিউয়ের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে। এটা কী করে সম্ভব হল? সুপ্রিম কোর্ট তো বলেইছে, অযোগ্য বলে চিহ্নিত কেউ পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। আমরা বিষয়টা এসএসসির নজরে এনেছি। অযোগ্য তালিকাভুক্ত কোনও শিক্ষক ইন্টারভিউ দিয়ে ফের চাকরি পেয়ে যাবে না তো?’’
শিলিগুড়ির ববিতা সরকারের করা মামলায় চাকরি যায় তৎকালীন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। ববিতা সে জায়গায় চাকরি পান। পরে ভুল তথ্য দেওয়ার দায়ে চাকরি যায় ববিতারও। আদালতের রায়ে তাঁর জায়গায় চাকরি পান অনামিকা রায়। এ বারে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য পরীক্ষায় বসে ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি অনামিকা। তিনি বলেন, ‘‘২ নম্বরের জন্য ‘কাট অব মার্ক’ পাইনি। আমি এক বছর চাকরি করেছি। সেই হিসাবে আমাকে ২ নম্বর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও ভুল না হলে আমি তো ২০১৯ সাল থেকেই চাকরি করতাম। সেটা বিবেচনা করে দেখার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
ইন্টারভিউয়ের বেশ কয়েক জন প্রার্থীর বয়স দেখেও চক্ষু চড়কগাছ নতুন প্রার্থীদের। এক নতুন প্রার্থী বলেন, ‘‘ইন্টারভিউয়ের তালিকায় শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ এক প্রার্থীর জন্মের সাল দেখাচ্ছে ১৯৯৭। তিনি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর পাওয়ায় ইন্টারভিউয়ের তালিকায় তাঁর নাম উঠেছে। ২০১৬ সালে ওই প্রার্থীর বয়স তো ১৮-১৯ বছর। আমাদের প্রশ্ন, এত কম বয়সে কী করে তিনি অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে ইন্টারভিউয়ের জন্য বিবেচিত হলেন?’’ চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, শুধু ওই প্রার্থীই নন, এমন অনেক প্রার্থী অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর পেয়েছেন, যাঁদের জন্ম সাল ১৯৯৬ বা ১৯৯৪। ওই চাকরিপ্রার্থীদের মতে, এক জন চাকরিপ্রার্থী, যাঁর ১৯৯৬ বা ১৯৯৪-এ জন্ম, তিনি কোনও ভাবে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাশ করে বিএড প্রশিক্ষণ নিয়ে ১০১৬ সালের এসএসসিতে সুযোগ পেতে পারেন না। কারণ, তাঁর তো বিএড পাশ করতে করতেই কমপক্ষে ২০১৯ হয়ে যাবে। তা হলে তিনি কী ভাবে অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর পান?
এসএসসির এক কর্তা জানিয়েছেন, এই সব সংশোধনের জন্যই তথ্য যাচাই করে তার পরে ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। যে সব প্রার্থীর তথ্য ঠিক নয়, তাঁদের ইন্টারভিউ থেকে বাদ দেওয়া হবে। তবে চাকরিপ্রার্থীদের মতে, প্রতি শূন্য পদের জন্য তো ছ’জনকে ইন্টারভিউতে ডাকার কথা বলা হয়েছিল। সে-ক্ষেত্রে নথি যাচাই পর্বেই কেউ বাদ পড়লে তো তো সেই অনুপাত কমে যাচ্ছে! তা হলে কেন মেধার ভিত্তিতে তালিকায় পরের প্রার্থীদের নাম ঢুকিয়ে নতুন করে ইন্টারভিউয়ের তালিকা প্রকাশ করা হবে না?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)