রাজ্যের যে সব প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা মেরেকেটে দু’-তিন জন, সেই সব স্কুল থেকেও বুথ লেভল অফিসারের (বিএলও) ডিউটি করতে চলে যেতে হচ্ছে অনেককে। ফলে সেই সব স্কুলের পঠনপাঠন দূরে থাক, মিড ডে মিল পরিবেশন নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের উপান্তকুল প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা শ্যামলী মান্নাকে নিয়ে দু’জন শিক্ষক। দু’জনেরই বিএলও ডিউটি পড়েছে। শ্যামলী বলেন, “স্কুল করে বিএলও-র কাজ কী ভাবে করব? ডিসেম্বর পর্যন্ত এই কাজ চলবে। স্কুলে এক জন পার্শ্বশিক্ষক ছাড়া আর কেউ নেই।” বাঁকুড়ার শিমুলকুন্দি প্রাথমিক স্কুলেও প্রধান শিক্ষক-সহ দু’জন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বাউরি বলেন, “আমায় জেলা প্রশাসন থেকে বলেছে, সকালে স্কুল আর দুপুরে বিএলও-র কাজ করতে। আমাদের আর এক জন শিক্ষক আবার অনেকটা দূরে থাকেন। তাঁর পক্ষে সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে স্কুলে আসা সম্ভব নয়। মিড-ডে মিল কী ভাবে দেব, তা-ও মাথায় ঢুকছে না।”
আগামী দু’মাসের মধ্যেই প্রাথমিক স্কুলে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নও আছে। তার প্রশ্ন তৈরি থেকে পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখার ঝক্কিই বা শিক্ষকেরা কী ভাবে সামলাবেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ময়নান প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শুভঙ্কর দাস জানান, তাঁদের স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ৭৫। শিক্ষক তিন জন। তিন জনেরই বিএলও ডিউটি পড়েছে। শুভঙ্কর বলেন, “জেলা প্রশাসন বলছে স্কুলের পরে বা স্কুলে যাওয়ার আগে বিএলও ডিউটি করতে। ওই এলাকায় আড়াইশোর মতো বাড়ি ঘুরতে হবে। সব বাড়ি কি স্কুলের সময়ের আগে বা পরে ঘোরা সম্ভব? যে সব স্কুলে শিক্ষক এত কম তাদের অন্তত এক জনকে তো রেহাই দেওয়া যেত।”
কোলাঘাটের মুকাডাঙ্গী প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানস ঘাঁটা জানান, তাঁদের ৮৩ জন পড়ুয়া, শিক্ষক তাঁকে নিয়ে তিন জন। তিন জনই বিএলও-র কাজে যাচ্ছেন। তা হলে আগামী দু’মাস এই ৮৩ জনকে কে পড়াবেন? স্কুলে কোনও পার্শ্বশিক্ষকও নেই। মানস বলেন, “স্কুলের সময়ের বাইরে বিএলও-র কাজ করার চেষ্টা করব। জানি না, কত দূর কী পারব!”
হাওড়ার মহাদেবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রমেন মাইতি জানান, তাঁদের তিন জন শিক্ষকের বিএলও ডিউটি পড়েছিল। এক জনেরটা বাতিল হয়েছে। ওই এক জনকেই সব কিছু করতে হচ্ছে। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডার কথায়, “নানা জেলার প্রাথমিক স্কুলেই শিক্ষক সঙ্কটে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। আমরা কিন্তু আগেই নির্বাচন কমিশন এবং শিক্ষা দফতরকে যে যে স্কুলে শিক্ষক কম তাদের রেহাই দিতে বলি।”
কমিশনের দাবি, তারা বিএলও-র কাজের জন্য স্থায়ী সরকারি চাকরি করা কর্মী চেয়েছিল। প্রশাসন শিক্ষকদের দিয়েছে। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলছেন, “নির্বাচন কমিশনই তাদের রিকিউজ়িশন দিয়ে শিক্ষকদের তুলে নিয়েছে। পড়াশোনার সঙ্কট কাটাতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে ওরা সেটা আমাদের লিখিত ভাবে জানাক।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)