গ্রেফতারের পরে ৩০ দিনের মধ্যে জামিন না-পেলে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রীদের সরানোর লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনী বিল এনেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সংসদে পেশ করার পরে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনীর নতুন তিনটি বিল পাঠানো হচ্ছে যৌথ সংসদীয় কমিটির ( জেপিসি) কাছে। বিলের প্রতিবাদে সরব হলেও জেপিসি-তে না-থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমন অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের শাসক শিবিরের অন্দরে। প্রশ্ন তুলছে অন্যান্য দলও।
বিল নিয়ে বিতর্ক হলে জেপিসি-তে পাঠিয়ে বিশদে আলোচনা করাই সংসদীয় রীতি। বিরোধীরাও সেখানে তাদের আপত্তি জানিয়ে থাকে। মন্ত্রীদের পদ থেকে সরানোর এমন বিতর্কিত বিলের ক্ষেত্রে তৃণমূল কেন সেই সুযোগ নিচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠছে শাসক শিবিরের অভ্যন্তরে। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং অন্য নেতাদের অনেকে বলছেন, আম আদমি পার্টি (আপ), সমাজবাদী পার্টির মতো বিরোধী দলও তৃণমূলের রাস্তায় হাঁটছে। কারণ, মোদীর জমানায় জেপিসি এখন ‘প্রহসনে’ পরিণত হয়েছে। দলেরই একাংশ অবশ্য সেই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রের শাসক দল নিজের মত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে, এটা যেমন ঠিক। তার পাশাপাশি বিরোধী হিসেবে তৃণমূল তার মত নথিভুক্ত করিয়ে রাখতে পারতো, সেটাও তা ঠিক!
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিল পেশের সময়ে আমরা সংসদে সব চেয়ে বেশি সরব ছিলাম। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসনের কাছে গিয়ে আমাদের সাংসদেরা বিক্ষোভ দেখালেন। তার পরে জেপিসি থেকে আমরাই আগে সরে দাঁড়ালাম, এটা চোখে লাগার মতো! যৌথ কমিটির ৮-১০টা বৈঠক হলে সেখানে বা বাইরে বেরিয়ে অন্তত নিজেদের কথাগুলো বলার সুযোগ পেতাম।’’ একই সময়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংঘাতেও মধ্যপন্থায় ফিরেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। এই গোটা ঘটনাপ্রবাহ বিজেপির সঙ্গে ‘সমঝোতা’র বার্তা সামনে এনে ফেলছে কি না, সেই প্রশ্নে সন্দিহান দলেরই একাংশ।
প্রশ্ন উঠছে বাইরেও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম যেমন বলছেন, ‘‘তৃণমূল সর্বদাই ‘যখন যেমন, তখন তেমন’! প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী বিল নিয়ে তৃণমূলের নিজস্ব কিছু ভাবনা থাকতে পারে। তবে তৃণমূল কেবল কালীঘাটের নয়, চলে নাগপুর ও দিল্লির নির্দেশেও!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দুর্নীতি দমনের আইন রয়েছে। কিন্তু আইন সবার জন্য সমান নয়। মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে যারা দল ভেঙে বিজেপির সঙ্গে এসেছে, তাদের দুর্নীতির তদন্ত থেমে গিয়েছে। বিরোধীদের ধরে ধরে নিশানা করছে কেন্দ্রের ইডি-সিবিআই। আবার তৃণমূলের মতো বিরোধীদের বেলায় নিয়ম আলাদা। মুখ্যমন্ত্রী বা ভাইপোর নাম এলেই চুপ করে যাচ্ছে ইডি-সিবিআই!’’
আবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ‘‘জেপিসি-তে গেলে গঠনমূলক বক্তব্য রাখতে হবে, নিজেদের যুক্তি তুলে ধরতে হবে, সেই কারণে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা জেপিসি থেকে পালিয়ে গেল! কারণ, এই বিলের বিরোধিতা করার কোনও যুক্তি তাদের কাছে নেই। তারা চাইছে, চুরি করবে কিন্তু গ্রেফতার করা যাবে না! পদ যাওয়া চলবে না।’’
জেপিসি-তে প্রতিনিধি না দিয়ে ঘুরিয়ে কি বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে তৃণমূল? এই প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘একেবারেই নয়! এই বিলে সব থেকে বেশি বিরোধিতা আমরাই করেছি। তা ছাড়া, এ বিল জীবনে সংসদে ফিরে আসবে না! পাশ হওয়ার তো সম্ভাবনাই নেই। ফলে, তৃণমূল অযথা সময় নষ্ট করবে কেন?’’ সেই সঙ্গেই ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে বিঁধে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সদিচ্ছা থাকলে যাঁরা অন্য দল থেকে গিয়েছেন, তাঁদের বহিষ্কার করুন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিজেপিই দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। আসলে জেল এড়িয়ে বিজেপিতে গিয়ে সরকারে থাকার ব্যবস্থা করছেন স্বরাষ্টমন্ত্রী।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)