Advertisement
E-Paper

কাটা পড়ল কে, দেখতে নেমে মৃত্যু গার্ডেরও

জীবন জীবনেরই জন্য। মৃত্যুও যে অনেক সময়ে মৃত্যুকে টেনে আনে, আরও এক বার তা দেখা গেল বৃহস্পতিবার!ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের দেহ পরীক্ষা করতে লাইনে নেমে বেঘোরে প্রাণ গেল গার্ডের। উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রেন তাঁকে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলল দূরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫২
মাসুরা খাতুন

মাসুরা খাতুন

জীবন জীবনেরই জন্য। মৃত্যুও যে অনেক সময়ে মৃত্যুকে টেনে আনে, আরও এক বার তা দেখা গেল বৃহস্পতিবার!

ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের দেহ পরীক্ষা করতে লাইনে নেমে বেঘোরে প্রাণ গেল গার্ডের। উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রেন তাঁকে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলল দূরে। তাতেই বেরিয়ে গেল তাঁর প্রাণ।

বৃহস্পতিবার ওই দুর্ঘটনা ঘটে হাওড়া-খড়্গপুর লাইনে ফুলেশ্বর ও উলুবেড়িয়া স্টেশনের মাঝখানে। পুলিশ জানায়, এ দিন প্রথমে ওখানে ট্রেনে কাটা পড়েন এক যুবক। এক নজরে তাঁরে ভবঘুরে বলে মনে হয়েছে পুলিশের। পরিচয় জানা যায়নি। ট্রেনটি থামার পরে দুর্ঘটনা দেখতে নীচে নামতেই ফের দুর্ঘটনা। তাতেই মৃত্যু হয়েছে মাসুরা খাতুন (২৬) নামে ওই গার্ডের। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার খাতড়ায়। তবে কিছু দিন ধরে তিনি উত্তরপাড়ায় তাঁর দাদা মহম্মদ রহমানের কাছে থাকছিলেন।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা জানান, গার্ডের মৃত্যু হওয়ায় ওই ট্রেনটিকে এ দিন আর চালানো হয়নি। ফুলেশ্বর স্টেশনেই ট্রেনটিকে থামিয়ে দিয়ে যাত্রীদের নেমে যেতে অনুরোধ করা হয়।

রেল সূত্রের খবর, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হাওড়ামুখী মেদিনীপুর লোকাল উলুবেড়িয়া স্টেশন ছেড়ে ফুলেশ্বরের দিকে আসছিল। চালক হঠাৎ দেখতে পান, এক যুবক লাইনের উপর দিয়ে ট্রেনের দিকেই আসছেন। চালক হুইসল বাজাতে থাকেন। টনক নড়েনি যুবকের। চালক ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন। কিন্তু দুর্ঘটনা আটকানো যায়নি। ফুলেশ্বর স্টেশনের কাছে খালের উপরে ছোট সেতু রয়েছে। ট্রেনের ধাক্কায় সেতুর উপর থেকে খালের জলে ছিটকে পড়েন ওই যুবক। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

চালক ট্রেনের ইন্টারকমে বিষয়টি গার্ডকে জানান। রেলের নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনা ঘটলে গার্ডকেই ট্রেন থেকে নেমে তা পরীক্ষা করতে হয়। রেলকর্তারা জানান, ঠিক কী ঘটেছে, তা পরীক্ষা করতে ওই ট্রেনের গার্ড মাসুরা নীচে নেমে পাশের লাইন ধরে হাঁটছিলেন। সেতুর কাছে প্রায় পৌঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পাশের লাইনে একটি এক্সপ্রেস ট্রেন চলে আসে। ট্রেন দেখে লাইন থেকে কিছুটা সরে যান মাসুরা। কিন্তু শালিমারমুখী বারিপদা এক্সপ্রেসের হাওয়ায় উড়ে গিয়ে পড়েন খালের জলে। তার আগে ট্রেনের গায়ে বা সেতুর গার্ডারে ধাক্কা লাগে তাঁর। রেল ও পুলিশকর্তারা জানান, মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লেগে ওই তরুণী গার্ডের মৃত্যু হয়েছে।

দীর্ঘ ক্ষণ পরেও গার্ডের কোনও খবর না-পেয়ে মেদিনীপুর লোকালের চালকের সন্দেহ হয়। ইন্টারকমে গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেন, ফোন করেন তাঁর মোবাইলেও। কিন্তু সাড়া মেলেনি। তিনি রেলের কন্ট্রোলে ফোন করার চেষ্টা করেন। তখনই আশপাশের লোকজন তাঁকে গার্ডের মৃত্যুর খবর দেন। চালক সেটা জানান দু’পাশের দুই স্টেশন ও রেল কন্ট্রোলে জানিয়ে দেন। দুই স্টেশন থেকেই পৌঁছে যান রেলকর্মী, জিআরপি ও আরপিএফ। দেহ দু’টি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রেলকর্তাদের কাছ থেকে বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছন মাসুরার দাদা মহম্মদ রহমান। তিনি বলেন, ‘‘রেলের এক কর্তা ফোনে আমাকে দুর্ঘটনার খবর দেন।’’ রেল পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনই দেহ দু’টির ময়না-তদন্ত হয়। পরে অ্যাম্বুল্যান্সে মাসুরার দেহ নিয়ে তাঁর আত্মীয়েরা খাতড়া রওনা হয়ে যান। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের পরীক্ষা পাশ করে মাসুরা গার্ডের চাকরি পান বছর আড়াই আগে।’’

Railway Guard DeadBody
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy