Advertisement
E-Paper

দেরির রোগে হোঁচট নির্জলা হিমগিরির

মাথা বদলালেও রেল পরিষেবার ঘাটতি-চিত্রে কোনও পরিবর্তনই দেখা যাচ্ছে না। পরিবহণ শিল্পে সফল পরিষেবার প্রথম শর্ত সময়ানুবর্তিতা। কিন্তু রেল যে সময় মেনে ট্রেন চালানোর নিয়মবিধির তোয়াক্কা করে না, লোকাল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীরা সেটা জানেন মজ্জায় মজ্জায়।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৬

মন্ত্রী বদল হয়েছে। আমলা বদল হয়েছে সর্বোচ্চ স্তরে।

কিন্তু মাথা বদলালেও রেল পরিষেবার ঘাটতি-চিত্রে কোনও পরিবর্তনই দেখা যাচ্ছে না। পরিবহণ শিল্পে সফল পরিষেবার প্রথম শর্ত সময়ানুবর্তিতা। কিন্তু রেল যে সময় মেনে ট্রেন চালানোর নিয়মবিধির তোয়াক্কা করে না, লোকাল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীরা সেটা জানেন মজ্জায় মজ্জায়। শনিবার সময়বিধি উড়িয়ে হিমগিরি এক্সপ্রেসের নির্জলা সফরে রেল ফের স্পষ্ট করে দিল, নিয়ম না-মানাটাই তাদের নিয়ম!

ঠিক কী ঘটেছিল হিমগিরিতে?

হাওড়া থেকে হিমগিরির ছাড়ার কথা ছিল শনিবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে। কিন্তু আগেভাগেই পূর্ব রেল জানিয়ে দেয়, ট্রেন ছাড়বে রাত ২টোয় অর্থাৎ পৌনে তিন ঘণ্টা দেরিতে। কিন্তু ট্রেন ছাড়ে তারও দেড় ঘণ্টা পরে, রাত সাড়ে ৩টেয়। সূচনাতেই সওয়া চার ঘণ্টা দেরি করায় যাত্রীরা ভেবেছিলেন, যা কিছু ঝঞ্ঝাট-ঝামেলা নিশ্চয়ই মিটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যাত্রা অতঃপর মসৃণ হবে। ভাবনায় যে ভুল ছিল, টের পাওয়া গেল অচিরেই।

যাত্রীদের কথায়, আসানসোলেই শুরু হয় ব্যামো। সেখানে হিমগিরি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে তিন ঘণ্টা। তার পরেও প্রায় প্রতিটি স্টেশনেই দেরি করতে থাকে সে। শেষ পর্যন্ত যখন পটনায় পৌঁছনো গেল, তত ক্ষণে অতিরিক্ত পাঁচ ঘণ্টা সময় বেরিয়ে গিয়েছে। তার উপরে শুরু হয় নতুন বিপত্তি। আসানসোলের পর থেকেই বেশির ভাগ কামরার শৌচাগারে জল ছিল না বলে ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ।

ওই ট্রেনের এস-১ কামরায় কলকাতার জনা কুড়ি বাসিন্দা কাশ্মীর বেড়াতে যাচ্ছিলেন। শুচিস্মিতা রায় নামে তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘পটনা স্টেশন থেকে জলের ব্যবস্থা করার জন্য রেলকর্মীদের বারবার অনুরোধ করা হয়। ‘দেওয়া হবে, দেওয়া হবে’ করে পাশ কাটিয়ে যান তাঁরা।’’ কিন্তু পটনা থেকে জলশূন্য অবস্থাতেই ট্রেনটি ফের যাত্রা শুরু করে। এর পরে মোগসলসরাই, বারাণসীর মতো অনেক বড় স্টেশন পেরোলেও শৌচাগার ছিল নির্জলা। ৯০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ট্রেন সহারানপুরে পৌঁছনোর পরে এক দল যাত্রী প্ল্যাটফর্মে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তার পরে শৌচাগারে জলের ব্যবস্থা হয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, রেলকর্মীদের জানিয়েও ফল না-হওয়ায় তাঁরা রেলের আপৎকালীন নম্বর ১৮২-তে বারবার ফোন করেন। কিন্তু এক বারও উত্তর মেলেনি। কয়েক জন যাত্রীর দাবি, তাঁরা রেলের টুইটারে টুইট করেছিলেন। তাতেও ফল হয়নি। যাত্রীদের দুরবস্থা দেখেও ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক বা আরপিএফের কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি।

গভীর রাতে হেনস্থা বাড়ে। যাত্রীরা জানান, মাঝরাতে অম্বালা স্টেশন থেকে তিন-চার জন পুলিশকর্মী (গায়ে উর্দি) ট্রেনে উঠে তল্লাশি হবে বলে জানিয়ে বাক্স খুলতে শুরু করেন। তার পরে তাঁরা বলতে থাকেন, ‘টাকা দিন। নইলে ঝামেলা হবে। আমরা এই টাকা পেয়েই থাকি।’ অত রাতে কথা কাটাকাটি করে ঝামেলা বাড়াতে চাননি যাত্রীরা। প্রায় সকলেই কিছু কিছু করে টাকা দিয়ে দেন।

সব মিলিয়ে যাত্রীদের দুর্দশার তালিকা যত বড় হল, পরিষেবার ঘাটতি-তালিকা তার থেকে আদৌ ছোট নয়। সওয়া চার ঘণ্টা দেরি দিয়ে শুরু। তার পরে নির্জলা শৌচাগার। অতঃপর ট্রেনকর্মী-আরপিএফের সহযোগিতা অমিল। আপৎকালীন নম্বর এবং রেলের নিজস্ব টুইটারের স্তব্ধতা। শেষে পুলিশের টাকা আদায়! কোন ব্যাধিটা বাকি থাকল?

প্রশ্ন উঠছে, এমন শতচ্ছিদ্র পরিষেবা কেন? পূর্ব রেলের তরফে এর সদুত্তর বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি মঙ্গলবারেও। কেন ১৮২-তে ফোন করে এবং টুইট করেও কোনও সাড়া মেলেনি, তারও জবাব নেই। এক কর্তা শুধু বলেন, ‘‘আমরা দেখছি।’’

তবে রেলের বর্তমান ও প্রাক্তন কিছু কর্তার পর্যবেক্ষণ, সব ব্যাধির মূলে আছে রেলের বিভিন্ন জোনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। পূর্ব রেল জোনের এলাকা থেকে রওনা দিয়ে বেশ কয়েকটি জোন পেরিয়ে হিমগিরি পৌঁছয় হিমালয়ে। প্রতিটি জোনের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় থাকলে যাত্রীদের যন্ত্রণার সুরাহা হতে বাধ্য। কিন্তু প্রায় প্রতিটি জোনই দায় এড়াতে ব্যস্ত। কোনও মতে ট্রেনটাকে নিজেদের এলাকা পার করিয়েই তারা খালাস। রেলের নিজেদের মধ্যে এই দায় ঠেলাঠেলির অসুখ সারাতে না-পারলে পরিষেবার ঘাটতি মিটবে না।

Himgiri Express Indian Railway Late হিমগিরি এক্সপ্রেস Howrah Station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy