Advertisement
E-Paper

জগন্নাথের উদ্বৃত্ত নিমকাঠই কি দিঘায়? তদন্ত সীমাবদ্ধ থাকছে পুরীতেই, শাস্তির মুখে পড়তে পারেন রাজেশ দয়িতাপতিরা

ওড়িশার মন্ত্রীর চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরে স্পষ্ট হয়ে গেল, ওড়িশার কেউ দিঘায় বা পশ্চিমবঙ্গে তদন্ত করতে আসছেন না। বাংলার বিজেপি সূত্রের দাবি, পুরীর মন্দিরে জগন্নাথের নবকলেবরের উদ্বৃত্ত কাঠ এনে যে দিঘার বিগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা রাজেশ দয়িতাপতি নিজেই বলেছেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৫ ১৭:৫৯
image of mamata

দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার উদ্ঘাটনের দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজেশ দয়িতাপতি (মাঝে)। — ফাইল চিত্র।

নিমকাঠ কাণ্ডের তদন্ত সীমাবদ্ধ থাকছে পুরীতেই। ওড়িশার মন্ত্রীর চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরে স্পষ্ট হয়ে গেল, ওড়িশা থেকে দিঘায় বা পশ্চিমবঙ্গে কেউ তদন্ত করতে আসছেন না। বাংলার বিজেপি সূত্রের দাবি, পুরীর মন্দিরে জগন্নাথের নবকলেবরের উদ্বৃত্ত কাঠ এনে যে দিঘার বিগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা রাজেশ দয়িতাপতি নিজেই বলেছেন। তাই ওই বিষয় নিয়ে তদন্তের আর কোনও প্রয়োজন নেই। ওই দয়িতাপতি-সহ পুরীর মন্দিরের আর কারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেটাই তদন্ত করে দেখবে মন্দির প্রশাসন। যাঁরা জড়িত, তাঁদের উপযুক্ত শাস্তিও হবে বলে ওড়িশা সরকার সূত্রের খবর।

ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন যে তদন্তের ‘নির্দেশ’ দিয়েছেন, সে খবর শনিবারই জানা গিয়েছিল। কিন্তু তদন্ত কী ভাবে হবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা ছিল। পুরীতে জগন্নাথ বিগ্রহের শেষ নবকলেবরের পরে উদ্বৃত্ত নিমকাঠ দিয়ে দিঘার বিগ্রহ তৈরি হয়েছে কি না, শুধু সেটাই কি খতিয়ে দেখা হবে? না কি ওড়িশা থেকে তদন্তকারীরা দিঘায় এসে সেখানকার বিগ্রহের কাঠও পরীক্ষা করে দেখবেন? এমন নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল। দিঘার মন্দিরের বিগ্রহ পরীক্ষা করতে চাইলেই যে তা করার অনুমতি মিলত, এমন নয়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দিঘার এই মন্দির তৈরি হয়েছে। সেখানকার বিগ্রহ ওড়িশার কেউ এসে পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি আদৌ পেতেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রবিবার সকালে সমাজমাধ‍্যমে একটি পোস্ট করার পর সমস্ত সংশয় বা জল্পনার অবসান হয়। ওড়িশার মন্ত্রী হরিচন্দ্রন পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনকে যে চিঠি দিয়েছেন, সেই চিঠির ইংরেজিতে অনূদিত প্রতিলিপি পোস্ট করেন শুভেন্দু। তাতে স্পষ্ট ভাবেই পুরীর মন্দির প্রশাসনকে বলা হয়েছে ‘অভ্যন্তরীণ তদন্ত’ করতে। পুরীর মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত কারা দিঘায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা, মূর্তি তৈরি এবং তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত, তা খতিয়ে দেখে ব‍্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে মন্ত্রীর চিঠিতে।

ওড়িশার মন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনকে যে চিঠি দিয়েছেন, সেই চিঠির ইংরেজিতে অনূদিত প্রতিলিপি পোস্ট করেন শুভেন্দু অধিকারী।

ওড়িশার মন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনকে যে চিঠি দিয়েছেন, সেই চিঠির ইংরেজিতে অনূদিত প্রতিলিপি পোস্ট করেন শুভেন্দু অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র।

ওড়িশার মন্ত্রী হরিচন্দ্রন পুরীর মন্দির প্রশাসনকে লিখেছেন, “দিঘায় একটি জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ, সেই মন্দিরকে ‘জগন্নাথধাম’ নামে অভিহিত করা, তাতে এখানকার (পুরীর) সেবায়েতদের অংশগ্রহণ এবং উদ্বৃত্ত পবিত্র কাঠ দিয়ে দিঘার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে প্রবল আলোচনা চলছে। এই ঘটনা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের মন্তব্য জগন্নাথ ভক্তদের মনে ও সাড়ে চার কোটি ওড়িশাবাসীর মনে আঘাত দিয়েছে।”

হরিচন্দ্রনের চিঠিতে কারও নাম উল্লেখ না-করা হলেও, বিজেপি সূত্রের দাবি, পুরীর মন্দিরের যে সেবায়েত দিঘায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা কর্মসূচির পুরোভাগে থেকেছেন, সেই রাজেশ দয়িতাপতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। পুরীর মন্দির প্রশাসনকে লেখা চিঠিতে যে ‘মন্তব্য’কে ‘আঘাত সৃষ্টিকারী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটিও রাজেশ দয়িতাপতিরই একটি মন্তব‍্য বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।

মন্ত্রীর চিঠি পেয়ে পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষ যদি তদন্ত শুরু করেন এবং পদক্ষেপ করেন, তা হলে পুরীর ওই দয়িতাপতি সমস‍্যায় পড়তে পারেন বলেই মনে করছে বিজেপি। কারণ দিঘার বিগ্রহ নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন কাঠ ব‍্যবহার করা হয়েছে, সে সম্পর্কে রাজেশ দয়িতাপতির নিজের মন্তব্যকেই পুরীর মন্দির প্রশাসন প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরতে পারে।

বাংলার বিজেপি এ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “তৃণমূলের ফাইল ভগবান জগন্নাথ আগেই প্রত‍্যখ‍্যান করেছেন। তৃণমূলকে তিনিও বাঁচাতে পারবেন না, সে কথা আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার তিনি তৃণমূলের বিসর্জনও নিশ্চিত করতে দিঘায় চলে এসেছেন।’‍’ শমীকের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “তৃণমূলের বিসর্জন বঙ্গোপসাগরে হবে। এবং সেটা পূর্ব মেদিনীপুর থেকেই হবে। তাই জগন্নাথ পূর্ব মেদিনীপুরে বঙ্গোপসাগরের তীরে এসেছেন।”

তৃণমূলের রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “বিজেপি একটি রাজনৈতিক দল, যারা নিজেদের হিন্দুত্ববাদী বলে দাবি করে। কিন্তু দিঘায় একটি হিন্দু মন্দির তৈরি হয়েছে বলে তাদের গায়ে এমন ফোস্কা পড়ছে যে, তারা একটা মন্দিরের বিরুদ্ধেও তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছে। এটা তাদের চূড়ান্ত দ্বিচারিতার নমুনা।”

BJP TMC puri temple Jagannath Odisha West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy