Advertisement
E-Paper

রাখি হাতে নেতা-মন্ত্রী, মাতৃভূমির মহিলারাও

অনেকেই বোধহয় এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলেন। ক’দিন আগেই ‘মাতৃভূমি’ লোকাল নিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠা পুরুষ ও মহিলা যাত্রী থেকে শুরু করে বীরভূমের এক বিডিও। পাড়ায়-পাড়ায় শাসকদলের নেতা-মন্ত্রী-কাউন্সিলর। এবং নদিয়ায় তাপস পাল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৪
দাদার উপহার। কৃষ্ণনগরে রাখি হাতে তাপস পাল। শনিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

দাদার উপহার। কৃষ্ণনগরে রাখি হাতে তাপস পাল। শনিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

অনেকেই বোধহয় এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলেন।

ক’দিন আগেই ‘মাতৃভূমি’ লোকাল নিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠা পুরুষ ও মহিলা যাত্রী থেকে শুরু করে বীরভূমের এক বিডিও। পাড়ায়-পাড়ায় শাসকদলের নেতা-মন্ত্রী-কাউন্সিলর। এবং নদিয়ায় তাপস পাল।

সর্বোপরি খোদ রাজ্য সরকার।

আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে জনসংযোগ বাড়াতে আপাতত যে কোনও উপলক্ষই আঁকড়ে ধরছে তৃণমূল। ‘রাখিবন্ধন’ও বাদ গেল না। রাজ্য সরকারের তরফে নীল রঙের রাখি পরিয়ে শনিবার গোটা রাজ্যে ‘সংস্কৃতি দিবস’ পালন করা হল। রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর হাতে রাখি পরান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুর ৩টে থেকে প্রতিটি জেলা সদর, ব্লক, পুরসভা এবং কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে রাখিবন্ধন শুরু হয়।

ধর্মতলায় ওয়াই চ্যানেলে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন রাজ্যের যুবকল্যাণ ও আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী তাঁর হাতে রাখি পরিয়ে দেন। মন্ত্রী জানান, রাখির জন্য জেলা, পুরসভা, ব্লক মিলিয়ে ৬৩০টি ইউনিটকে ২০ হাজার টাকা করে (অর্থাৎ মোট এক কোটি ২৬ লক্ষ টাকা) দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিট আলাদা মঞ্চ করে উৎসব করেছে। যার জেরে শিয়ালদহ, কলেজ স্ট্রিট, উল্টোডাঙা মেন রোডের মতো বেশ কিছু এলাকায় যানজট হয়। পরে ওই সব মঞ্চে আবার ‘রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যা’ও পালন করা হয়।

তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানে তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

গত ১৫ অগস্ট থেকেই মাতৃভূমি লোকাল নিয়ে শিয়ালদহ শাখার পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের মধ্যে তুমুল অশান্তি চলছে। দু’পক্ষের মারপিটে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে স্টেশন, আহত হয়েছেন অনেকে। এ দিন রাখি হাতে সেই তিক্ততা যেন খানিকটা মিটিয়ে দিতে চাইলেন কিছু যাত্রী। সকালে সওয়া ৭টায় বনগাঁ স্টেশন থেকে মাতৃভূমি লোকাল ছাড়ার আগেই মহিলা যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষদের হাতে রাখি বেঁধে দেন। মালবাহী কামরায় (‌‌ভেন্ডার) উঠেও পুরুষদের হাতে রাখি পরান মহিলারা। পুজা সাহা নামে এক ছাত্রীর দাবি, ‘‘আজ থেকে মাতৃভূমি-পিতৃভূমির বিবাদ শেষ হয়ে গেল।’’ পরে হাবরা বা বারাসত স্টেশনেও দেখা যায় একই দৃশ্য। রাখি পরে হাসি মুখে বহু পুরুষ যাত্রীই বলেন, ‘‘আর ঝামেলা চাই না!’’

হাওড়া-খড়্গপুর শাখার মাতৃভূমি স্পেশালেও চলে রাখিবন্ধন। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আসে ট্রেনটি দেউলটি স্টেশনে পৌঁছতেই অসংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়ে পুলিশ। মহিলা পুলিশকর্মীরাও ছিলেন। তাঁদের হাতে নানা রঙের রাখি এবং লজেন্স। পুলিশই প্রথমে যাত্রীদের কয়েক জনের হাতে রাখি পরায়। যাত্রীরাও রাখি পরান পুলিশকর্মীদের। পরে পুরুষ ও মহিলারা একে অন্যের হাতে রাখি পরিয়ে দেন। ঘোড়াঘাটা, বাগনান, কুলগাছিয়া, বীরশিবপুর, ফুলেশ্বর ও উলুবেড়িয়া স্টেশনেও সাধারণ কামরায় রাখিবন্ধন হয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষের মতে, ‘‘পুলিশ ও যাত্রীরা মিলে যে ভাবে এই সম্প্রীতির উৎসব করল, তা সকলকেই অনুপ্রেরণা যোগাবে।’’

বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

হাওড়ার রাস্তায় এমনিতে হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালালে খপাখপ ধরে ‘কেস’ দিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু এমন একটা দিনে তারাই বা অত কঠোর হয় কী করে? তাই বঙ্গবাসী মোড়ে হাওড়া সিটি পুলিশের রাখিবন্ধনের অনুষ্ঠানের পাশ দিয়ে যে মোটরবাইক আরোহীরা হেলমেট ছাড়া যাচ্ছিলেন, তাঁদের ধরে রাখি পরিয়ে দেন মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার্সের কর্মীরা। হাতে ধরিয়ে দেন একটা করে লজেন্স। শুধু কি তাই? এর পর থেকে তাঁরা অবশ্যই হেলমেট পরে মোটরবাইক চালাবেন— সেই ‘শপথ বাক্য’ পাঠ করার পরে মেলে নিষ্কৃতি।

গাড়ু হাতে ভোরের মাঠে যাওয়া আটকানোর জন্যও এই দিনটিকেই বেছেছিলেন বীরভূমের ময়ূরেশ্বর ২ বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান। এই বছরেই ‘নির্মল পঞ্চায়েত’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে স্থানীয় কলেশ্বর। কিন্তু বিডিও-র কাছে খবর ছিল, অধিকাংশ বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অনেকেই মাঠে প্রাতঃকৃত্য সারছেন। বিডিও ঠিক করেন, রাখির দিন ভোরে আচমকা ভোরে হানা দেবেন। যাকে হাতেনাতে ধরতে পারবেন, হাতে পরিয়ে দেবেন রাখি। যাতে পরের বার মাঠে যাওয়ার আগে ওই সব লোকেদের দু’বার ভাবতে হয়। পরিকল্পনা মতো ভোরেই নৈশরক্ষী এবং ব্লক অফিসের এক কর্মীকে নিয়ে গাড়িতে গ্রামের পথে বেরিয়ে পড়েন বিডিও। গোড়াতেই ছামনা বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া কাঁদরের ধারে ধরা পড়েন কালোমানিক বাগদি নামে বছর চল্লিশের এক দিনমজুর। এর পরে একে-একে পৌঁছন কলেশ্বর, কনুটিয়া, তেঁতুলডিহি গ্রামে হানা দেওয়া হয়। শেষে ছামনা গ্রামে কলেশ্বর পঞ্চায়েতের প্রধান ছবি বাগদির বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ঘুম থেকে তুলে রাখি পরান বিডিও। প্রধান নিজেও বলছেন, এই দাওয়াইয়ে কাজ হবে!

বড়বাজার থানায় যুব কংগ্রেস নেত্রী মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

গত লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে গলায় মালা দুলিয়ে ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করে দেব’ বলা ইস্তক ঘরে-বাইরে তুমুল গালি খেয়ে মরমে মরে ছিলেন তাপস পাল। ‘দাদার কীর্তি’ ছবির ভালমানুষ নায়কের এ হেন কীর্তি দেশজো়ড়া চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কার্যত ব্রাত্য হয়ে গিয়েছিলেন দলেও। এর পরে নানা সময়ে সুযোগ পেলেই নিজের মনোবেদনার কথা ব্যক্ত করেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। ওই মামলায় জামিন পাওয়ার পরে এখন দলও তাঁকে একটু-একটু করে ফের প্রকাশ্যে আনছে। এ দিন রাখি নিয়ে দল মাঠে নামায় তাপসও আর সুযোগ হাতছাড়া করেননি। সকালে পোস্ট অফিস মোড়ের অনুষ্ঠানে কিছু মহিলা কর্মীকে রাখি পরিয়ে তাপস বলেন, ‘‘আজ মা-বোনেদের রাখি পরিয়েছি। তাঁরাও আমায় পরিয়েছেন। আজকে জগৎ জানুক, তাপস পাল মা-বোনেদের সম্মান করে।’’

matribhumi local rakhi purnima rakshabandhan rakhi purnima west bengal rakhi purnima festive mood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy