Advertisement
০৪ মে ২০২৪
সেই সিবিআই শরণে

মাদারই বলেন, মাই সন আমাকে বলো কী বলবে

তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর চোখের সামনে অন্য কোনও সন্ন্যাসিনী যেন নিগৃহীত না হন। দুষ্কৃতীরা সে রকম চেষ্টা চালাতেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বৃদ্ধ ‘মাদার সুপিরিয়র’। সামনে এগিয়ে এসে দুষ্কৃতীদের ‘মাই সন’ বলে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেন, “তোমরা যা বলার আমাকে বলো। ওদের ছেড়ে দাও।” দৃষ্কৃতীরা তা-ই করেছিল। অন্য সন্ন্যাসিনীদের ছেড়ে দিলেও তাঁকে ছাড়েনি। শুক্রবার ভোররাতে যখন মুমূর্ষু অবস্থায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হল, তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছিল ঘর।

তখনও সিবিআই তদন্তের কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ময়দানে প্রতিবাদ সভা।  ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

তখনও সিবিআই তদন্তের কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ময়দানে প্রতিবাদ সভা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

সুনন্দ ঘোষ ও সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৪:২৪
Share: Save:

তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর চোখের সামনে অন্য কোনও সন্ন্যাসিনী যেন নিগৃহীত না হন। দুষ্কৃতীরা সে রকম চেষ্টা চালাতেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বৃদ্ধ ‘মাদার সুপিরিয়র’। সামনে এগিয়ে এসে দুষ্কৃতীদের ‘মাই সন’ বলে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেন, “তোমরা যা বলার আমাকে বলো। ওদের ছেড়ে দাও।”

দৃষ্কৃতীরা তা-ই করেছিল। অন্য সন্ন্যাসিনীদের ছেড়ে দিলেও তাঁকে ছাড়েনি। শুক্রবার ভোররাতে যখন মুমূর্ষু অবস্থায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হল, তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছিল ঘর। দু’পায়ের বিভিন্ন জায়গায় কালশিটের দাগ, যা দেখে চিকিৎসকদের মনে হয়েছে, ধর্ষণের আগে মারধরও করা হয়েছে তাঁকে। তাঁকে ওই অবস্থায় দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি অন্য সন্ন্যাসিনীরা। কপাল চাপড়ে বারবার তাঁরা বলেছেন, নীলকণ্ঠের মতো যাবতীয় গরল নিজে সহ্য করে অন্যদের বাঁচিয়ে দিলেন মাদার সুপিরিয়র।

কেন যে সে সময়ে মাদার সুপিরিয়রের নির্দেশ মেনে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা! এই আক্ষেপই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে রানাঘাটের স্কুলের অন্য সন্ন্যাসিনীদের। পুলিশ এবং মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিদের কাছে ওঁরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা স্কুলের অধ্যক্ষার নাম করে খুঁজছিল। তাদের হাবভাব দেখেই মাদার আশঙ্কা করেছিলেন, অধ্যক্ষাকে সামনে পেলে তাঁকে প্রাণেও মেরে ফেলা হতে পারে। অভিযোগ, অধ্যক্ষাকে না পেয়ে সামনে আসা সন্ন্যাসিনীদের সকলকেই নিগ্রহ করার চেষ্টা করছিল দুষ্কৃতীরা। তাই সকলকে বাঁচাতে নিজেকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মাদার সুপিরিয়র। মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা বলেছেন, তাঁর মতো সত্তরোর্ধ্বা এক বৃদ্ধার সঙ্গে যে এমন পৈশাচিক ঘটনা ঘটতে পারে তা সম্ভবত তিনি নিজেও ভাবেননি।

মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা অত্যাচারের ধরন ও মাত্রা দেখে স্তম্ভিত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘক্ষণ ধরে তাঁর উপর অত্যাচার হয়েছে। তাঁর শরীরে মোট আটটা সেলাই করতে হয়েছে। তবে ধর্ষণকারী এক না একাধিক তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি চিকিৎসকেরা। শরীরের উপরের অংশে তেমন বড় আঘাত না থাকলেও সন্ন্যাসিনীর কোমরের নীচ থেকে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ঊরুর অনেক জায়গায় তীব্র আঘাতের ফলে কালশিটে পড়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধা বারবার বাধা দিতে চেষ্টা করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে।

শরীরের আঘাত তো আছেই, এই অত্যাচারের ফলে মানসিক ভাবেও অত্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন সন্ন্যাসিনী। চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রায় সারাদিনই বালিশে মুখ গুঁজে রয়েছেন তিনি। এখনও তাঁকে কড়া মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ফলে তিনি অনেকটাই আচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছেন। এক চিকিৎসকের কথায়, “উনি শুধু মুখ ফুটে ওঁর একটা চাহিদার কথাই জানিয়েছিলেন। গরম জল ছাড়া উনি স্নান করতে পারেন না,তাই একটা গিজার বসানোর অনুরোধ করেছিলেন। তিন ঘণ্টার নোটিসে আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি।”

হাসপাতালের সুপার অতীন্দ্রনাথ মণ্ডল বুধবার জানিয়েছেন, মাদারের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল। এই পরিস্থিতিতে নিজের জায়গায় ফিরে গেলেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন ধরে নিয়ে তাঁকে সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুপুরে ডাক্তাররা তাঁকে সেই সিদ্ধান্তের কথা জানালে তিনি নিজেই রাজি হননি। তিনি চিকিৎসকদের বলেন, “আমাকে আর একটু সময় দিন। আমি আপাতত এখানেই থাকতে চাই।” চিকিৎসকদের মতে, মাদার এখনও ওই রাতের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ঘটনাটা ওঁর মনে এতটাই চেপে বসেছে যে উনি এখনই সেখানে ফিরতে চাইছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ranaghat nun rape CBI investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE