Advertisement
E-Paper

পাচারের শিশুরা যেন মুরগি ছানা

পাচারের জন্য আনা সদ্যোজাত যেন মুরগির ছানা! মাংসের দোকানে পাঠানোর আগে মুরগি ছানাকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করতে পোলট্রি কারবারির লাগে অন্তত ৪২ দিন। আর পাচারের জন্য আনা সদ্যোজাতকে ওষুধ-ইঞ্জেকশন দিয়ে ‘তৈরি’ করতে লাগে মাস আটেক!

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২১
ধৃত বিমল অধিকারী

ধৃত বিমল অধিকারী

পাচারের জন্য আনা সদ্যোজাত যেন মুরগির ছানা!

মাংসের দোকানে পাঠানোর আগে মুরগি ছানাকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করতে পোলট্রি কারবারির লাগে অন্তত ৪২ দিন। আর পাচারের জন্য আনা সদ্যোজাতকে ওষুধ-ইঞ্জেকশন দিয়ে ‘তৈরি’ করতে লাগে মাস আটেক!

শিশু পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে ঠাকুরপুকুরের ‘পূর্বাশা’ হোম থেকে ১০টি শিশু উদ্ধারের পরে শুক্রবার গভীর রাতে দক্ষিণ শহরতলির জোকা এলাকা থেকে বিমল অধিকারী নামে একষট্টি বছরের এক বৃদ্ধকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তার কাছ থেকেই পাচারের জন্য শিশুকে ‘তৈরি’ করার কথা জানতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

সিআইডি-র দাবি, জেরায় ধৃত জানিয়েছে, এক থেকে দশ মাসের ১০টি শিশুকন্যাকে সে-ই ‘পূর্বাশা’য় এনে রেখেছিল। তবে, এখনই বিক্রির জন্য নয়। কারণ, মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকায় সদ্যোজাত সে ভাবে বিক্রি হয় না। সাধারণত মায়ের অপুষ্টিজনিত কারণে গরিব পরিবারের শিশুদের স্বাস্থ্যও ভাল হয় না। তাই সে নানা ওষুধ-ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়ে ছ’-সাত লক্ষ টাকায় বিক্রি করত। এ জন্য সময় লাগত মাস আটেক। আর এই কাজ সে চালিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৩০ বছর ধরে।

ধৃত বৃদ্ধকে জেরায় পাওয়া এ তথ্যই অবাক করেছে গোয়েন্দাদের। শুক্রবার ‘পূর্বাশা’ হোমের মালকিন রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পরেই বিমলের নাম জানতে পারে সিআইডি। শুরু হয় তল্লাশি। সকালেই ঠাকুরপুকুরের গ্রিন পার্ক এলাকার বাসিন্দা বিমলকে আটক করা হয়েছিল। পরে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীদের অনুমান, বিমল এতদিনে শতাধিক শিশু বিক্রি করেছে। পাচার করেছে বিদেশেও।

কীসের ভিত্তিতে তদন্তকারীদের এই অনুমান?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মহাত্মা গাঁধী রোডের শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোম, বেহালার সাউথ ভিউ নার্সিংহোম এবং মছলন্দপুরের ‘সুজিত দত্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর কর্ণধারদের সঙ্গে বিমলের যোগাযোগ ছিল। শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমের মাধ্যমে বিদেশে যে শিশু পাচার হতো, এমন তথ্য ইতিমধ্যেই মিলেছে। সেখানকার কর্ণধার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বহু বিদেশি মুদ্রাও পাওয়া গিয়েছে। বিদেশি কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এই চক্রে জড়িত বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। ধৃত সকলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার পরে এই চক্রের নানা গোপন তথ্য সামনে আসবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

সিআইডি-র এক শীর্ষকর্তা জানান, বিমল শুধু শিশু জোগাড় বা বিক্রিই করত না, এ জন্য আইনি কাগজপত্র তৈরি করতেও সে পটু ছিল। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে তার আতাঁত রয়েছে। বিমলকে জেরা করে পাচার চক্রে জড়িত ওই দুই জেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, হোম এবং নার্সিংহোমের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শিশু পাচারে বিমলের সহযোগী বাসন্তী চক্রবর্তী নামে এক মহিলাকে ভোর রাতে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। খোঁজ চলছে অপর এক মহিলার।

জোকাতে ‘মিলেনিয়াম ওল্ডেজ হোম অ্যান্ড রিহ্যাব সেন্টার’ নামে বিমলের একটি বৃদ্ধাশ্রম ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে। বৃদ্ধাশ্রমটি অবশ্য বছর দুয়েক বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় কুড়ি বছর আগে বৃদ্ধাশ্রমটি তৈরি হয়। আগে সেখানেই বিমল সদ্যোজাতদের এনে রাখত। বছর দুয়েক আগে ‘পূর্বাশা’ চালু হওয়ার পরে তিনতলায় একটি বড় ঘর বানানো হয়। সেই ঘরেই বিমল সদ্যোজাতদের এনে রাখা শুরু করে বলে অভিযোগ।

শুক্রবার ১০টি শিশুকে ওই ঘর থেকে উদ্ধারের সময়ে বেশ কিছু ওষুধ, ইঞ্জেকশন বাজেয়াপ্ত করেছিল সিআইডি। ঘরটি অস্বাস্থ্যকর হলেও শিশুগুলি হৃষ্টপুষ্ট ছিল বলে জানান গোয়েন্দারা। ধৃত বিমল জেরায় শিশুগুলিকে ওষুধের মাধ্যমে হৃষ্টপুষ্ট করার কথা স্বীকার করায় গোয়েন্দারা এ বার সে কাজে কারা জড়িত, তার সন্ধানও শুরু করেছে।

সিআইডি সূত্রের খবর, পূর্বাশা’য় যে তিন নার্স শিশুদের দেখভাল করত, তাদের মধ্যে দু’জন পলাতক। এক জনকে জেরা করে জানার চেষ্টা হচ্ছে কোন চিকিৎসকের পরামর্শে বিমল শিশুদের ওষুধ দিত। কারণ, ‘পূর্বাশা’য় কোনও চিকিৎসা পরিকাঠামো ছিল না। তবে, সাউথ ভিউ এবং শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমে ছিল। সেখানকার চিকিৎসকদের এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হচ্ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিশুগুলির বর্তমান ঠিকানা জোকার ইএসআই হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে শিশুগুলির সার্বিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। বিমলকে শনিবার বসিরহাট আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে ১২ দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

child trafficing Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy