Advertisement
E-Paper

অভিযুক্তরা ধরা পড়লেও দিনভর হুমকি আসছেই

বাড়ির সামনে পাহারায় রয়েছে উর্দিধারী। নিত্যই পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। তবুও আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে মাথাভাঙার দুই নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবারকে। কারণ বাড়ি ঘিরে দিনভর চলা হুমকির ফিসফাস গাঢ় হচ্ছে সন্ধে নামলেই।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৬
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

বাড়ির সামনে পাহারায় রয়েছে উর্দিধারী। নিত্যই পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। তবুও আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে মাথাভাঙার দুই নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবারকে। কারণ বাড়ি ঘিরে দিনভর চলা হুমকির ফিসফাস গাঢ় হচ্ছে সন্ধে নামলেই।

অভিযোগ, ওই বাড়িতে যাতায়াতের পথে চলছে এলাকার এক তৃণমূল নেতার শাগরেদদের নজরদারি। ‘‘কোথায় যাবেন? কোথা থেকে এসেছেন?’’ জেরা টপকে তবেই ছাড়পত্র মিলছে ওই বাড়িতে ঢোকার।

এই অবস্থায়, নির্যাতিতা কিশোরী স্কুলে যাওয়া দূরের কথা, বাড়ির দাওয়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে ভয়ে কাঁপে। কথা বলতে গিয়ে ইতিউতি দৃষ্টি চলে যায়। আচমকা দু’হাতে মুখ ঢেকে সে বলে, ‘‘ভয় লাগে। ভীষণ ভয় লাগে। মনে হয়, সন্ধ্যা নামলেই কারা যেন ঘোরাফেরা করে বাড়ির পেছনে। এক জনকে বাঁচতে দেয়নি। আমার যে কী হবে!’’ এটুকু বলেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। বাড়ির লোকজন ঘরে নিয়ে যান তাকে। পড়শিরা জানান, রাত-বিরেতে গ্রামের পথেঘাটে চলাফেরার সময়ে ওই ধর্ষণ মামলা নিয়ে বেশি কৌতূহল না দেখানোর ক়ড়া পরামর্শ শুনতে হয়েছে অনেককেই।

কালীপুজোর রাতে গ্রামের দুই কিশোরীকে জোর করে তুলে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে গ্রামের দুই যুবকের বিরুদ্ধে। ওই দুই কিশোরী সম্পর্কে পিসি ও ভাইঝি। এদের একজন গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অপর জন কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে ওই তরুণী।

শনিবার হাজরাহাট থেকে রেললাইনের সাবওয়ের নীচ দিয়ে ওই বাড়িতে ঢোকার সময় সাংবাদিক জানার পরে আলতো করে পিঠে হাত দিয়ে ঠাণ্ডা গলায় পরামর্শ দেন নেতাগোছের এক যুবক। ‘‘একজন মরে গিয়েছে, আরেকজন বাড়িতে ফিরেছে। দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। আর এটা নিয়ে খোঁচাখুচি করে কী হবে!’’ পাশ থেকে আর এক যুবকের মন্তব্য, ‘‘কোচবিহারে এখন লোকসভার উপনির্বাচন চলছে। ভোট-ফোট নিয়ে লিখুন না। এটা গ্রামের ব্যাপার, গ্রামের লোকই

বুঝে নেবেন।’’

তার আগে মানসাই নদীর ধার দিয়ে বালি পাথরের রাস্তা ধরে নির্যাতিতার বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে এক যুবক বলেছিলেন,‘‘একটা চাপ তৈরি করা হচ্ছে। যাতে ওই বিষয় নিয়ে কেউ আর কিছু না বলে। তাই হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” ঘটনায় এলাকারই এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ। নালিশ পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের কাছেও। তাঁরা দলীয় স্তরে রিপোর্ট নিয়ে ওই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় আপাতত ওই নেতা চুপ করে গিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।

জেলার পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবালও বলেন, ‘‘নজরদারি রাখছি আমরা। তেমন কিছু হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশ পিকেটও বসানো হয়েছে।’’ কিন্তু এর পরেও হুমকির চোরা স্রোত স্বস্তি দিচ্ছে না নির্যাতিতার পরিবারকে।

শনিবার ধৃত টোটন ও রুদ্র তালুকদারকে কোচবিহার পকসো আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মাথাভাঙার ছায়া উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুরেও।

দিন দু’য়েক আগে মছলন্দপুরে এক মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। এলাকার দুই যুবককে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। তার পরেও মামলা প্রত্যাহারের জন্য ওই মহিলাকে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে ফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল। শুক্রবার তিনি যে বাড়িতে কাজ করতেন সেখানে হুমকির ফোন আসে বলে ওই মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফোনে বলা হয়, মামলা তুলে নেওয়া হোক। বাড়াবাড়ি করলে ফল ভাল হবে না।’’ এ ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

(সহ প্রতিবেদন: সীমান্ত মৈত্র)

rape threat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy