Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Jyotipriya Mallick

ষড়যন্ত্রীমশাই খোদ মন্ত্রীই, দাবি ইডি-র

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় জেল হেফাজতে থাকা বাকিবুর রহমান এবং তাঁর শ্যালকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথি যাচাই করে এবং বাকিবুরের বয়ানের ভিত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।

Jyotipriya Mallick

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:১৩
Share: Save:

অন্তত ১২০০০!

গত এক দশকে রাজ্য জুড়ে ১২ হাজারেরও বেশি ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার এবং রেশন দোকানের মালিককে ‘সংগঠিত করে’ সরকারি গণবণ্টন ব্যবস্থায় কোটি-কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ইডি সূত্রে দাবি। এবং সে ক্ষেত্রে তদন্তকারী গোয়েন্দাদের সূত্রে ইঙ্গিত, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুই এই দুর্নীতির ‘মাস্টারমাইন্ড’ বা মূল চক্রী। তাঁদের দাবি, যে সময়ে দুর্নীতি সংগঠিত হওয়ার একের পর এক প্রমাণ তদন্তে উঠে আসছে, সেই ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নাগাড়ে খাদ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়ই। আর খাদ্য দফতরের একাংশের যোগসাজশ ছাড়া এই মাপের আর্থিক নয়ছয় কার্যত অসম্ভব বলেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি সূত্রে অভিযোগ।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় জেল হেফাজতে থাকা বাকিবুর রহমান এবং তাঁর শ্যালকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথি যাচাই করে এবং বাকিবুরের বয়ানের ভিত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। মূলত তার ভিত্তিতেই জ্যোতিপ্রিয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আবার সেই জেরা থেকে পাওয়া সূত্র কাজে লাগিয়েই পরের দফার তল্লাশিতে নেমেছে ইডি। শনিবারই যেমন সকাল থেকে উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় বিভিন্ন সংস্থার অফিস, চালকল ও আটাকলে তল্লাশি-অভিযান চালানো হয়েছে। ওই সমস্ত সংস্থা, চালকল এবং আটাকলের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

শনিবার সকাল থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত কলকাতায় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের একটি ঠিকানায় অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে একটি প্যাকেটজাত আটা তৈরি সংস্থার দু’টি অফিসে তল্লাশি-অভিযান চালায় ইডি। ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর অঙ্কিত চন্দ্রকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও সূত্রের খবর। উলুবেড়িয়ায় ওই সংস্থার আটাকলে এ দিন দুপুর পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। সেখান থেকেও গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

ইডি সূত্রে দাবি, অঙ্কিত-সহ ওই সংস্থার একাধিক ডিরেক্টর জ্যোতিপ্রিয়ের ঘনিষ্ঠ। এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর দুই আপ্ত-সহায়ক অমিত দে এবং অভিজিৎ দাসের সঙ্গেও সংস্থাটির ডিরেক্টরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে তদন্ত সূত্রে তথ্য মিলেছে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রেশনের ভাল গুণমানের গম ওই সংস্থাকে সরবরাহ করা হত। রেশনের ন্যায্য মূল্যের গম খোলা বাজারের দামের থেকে অনেকটা কম দরে ওই সংস্থাকে বিক্রি করা হত বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। বাজারদরের তুলনায় কম দামে সেই গম কিনে আটাকলে তা থেকে আটা তৈরি করে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করা হত। সে ক্ষেত্রে অন্য ব্যবসায়ীদের তুলনায় ওই সংস্থা ‘বেআইনি পথে’ অনেক বেশি মুনাফা করত বলে তদন্তকারীদের ধারণা।

ইডি-র গোয়েন্দাদের একাংশের সূত্রে দাবি, জ্যোতিপ্রিয়-ঘনিষ্ঠ এই ধরনের আরও কিছু সংস্থা রয়েছে। রেশন বণ্টন দুর্নীতির সিন্ডিকেট অর্থাৎ ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার এবং রেশন দোকানের মালিক এবং খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে নাকি সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন জ্যোতিপ্রিয়। নিজের দফতরে মন্ত্রীর চেয়ারে বসে সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে তিনি বৈঠক পর্যন্ত করতেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে অভিযোগ।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, গত দু’মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলার সূত্রে তল্লাশি-অভিযানে বাজেয়াপ্ত নথি যাচাই করে জানা গিয়েছে, দুর্নীতির কোটি-কোটি টাকার একটি বড় অংশ প্রতি মাসে প্রায় নিয়ম করে জ্যোতিপ্রিয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হত। মন্ত্রীর দুই আপ্ত-সহায়ককেও প্রায় পাঁচ থেকে ছ’দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তাঁদের বয়ান লেখা হয়েছে। ওই দু’জনের বাড়ি থেকেও উদ্ধার হওয়া নথি যাচাই করা হয়েছে।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে বাকিবুর এবং জ্যোতিপ্রিয়ের দুই আপ্ত-সহায়ক চলতেন মন্ত্রীর নির্দেশ এবং পরিকল্পনা অনুযায়ীই। ইডির এক কর্তার কথায়, ‘‘গত দশ বছরে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jyotipriya Mallick TMC ED
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE