Advertisement
০৬ মে ২০২৪
West Bengal SSC Recruitment Case

হেরেও জিতে আছি, না কি জিতেও হেরে আছি জানি না! চাকরি থাকলেও নিজেকে ‘অভাগা’ ভাবছেন সোমা

সোমবার এসএসসি মামলার রায়ে ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এই নির্দেশের ফলে বাতিল হয়ে গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি।

Reaction of Cancer patient Soma Das on Calcutta High Court\\\\\\\'s SSC Recruitment scam verdict

সোমা দাস। — ফাইল চিত্র।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০০
Share: Save:

প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে। কিন্তু সেই তালিকা থেকে এক জনকেই বাদ দিয়েছে উচ্চ আদালত। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি বহালই থাকছে। তবে চাকরি থাকলেও মন থেকে খুশি হতে পারছেন না সোমা। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘হেরেও জিতে আছি, না কি জিতেও হেরে আছি, জানি না!’’

সোমবার এসএসসি মামলার রায় ঘোষণা করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাতিল হয়ে গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি। উচ্চ আদালত যদিও জানিয়েছে, সোমার চাকরি বহাল থাকবে। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। মানবিক কারণেই তাঁর চাকরি বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে আদালত। চাকরির দাবিতে আন্দোলন করা অন্যদের চেয়ে সোমাকে মানবিক কারণেই আলাদা করে দেখেছে আদালত। যদিও সোমার কথায়, ‘‘আমাদের মঞ্চের দাবি কখনওই আমার একার চাকরির জন্য ছিল না। আমাদের দাবি ছিল, যোগ্য প্রার্থীরা যেন তাঁদের অধিকার পান। দীর্ঘ দিনের দুর্নীতির কারণেই আমরা চাকরি পাইনি।’’ এর পরই সোমা বলেন, ‘‘হাই কোর্টের আজকের রায়ে এটা প্রমাণিত যে, নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতি ছিল। আমরা চাকরির যোগ্য দাবিদার। এই রায়ের পর চাকরিপ্রাপকদের প্রশ্ন, তাঁরা কী পেলেন? সত্যিই তো! সুবিচারের মাধ্যমে যত ক্ষণ না তাঁরা চাকরি পাবেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত বলা বিচার সম্পন্ন হয়েছে এটা বলব কী করে!’’ দীর্ঘ দিন চাকরির দাবিতে আন্দোলন করে চলা ‘যোগ্য’দের পাশে তিনি আগেও ছিলেন, এখনও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে জানিয়েছেন সোমা। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাতিল হওয়া প্যানেলেও অনেক যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন, তাঁদের চাকরিও প্রশ্নের মুখে। তাঁরাও যেন সসম্মানে আবার পুরনো চাকরিতে ফিরে যেতে পারেন সেটা দেখার জন্য বিচারপতিদের কাছে অনুরোধ করছি।’’

ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার কারণেই চাকরি থেকে গেল তাঁর। হাই কোর্টের রায়ের পর পর বার বার এ কথাই শুনতে হচ্ছে সোমাকে। সোমা বলেন, ‘‘আমি মঞ্চে যখন গিয়েছিলাম, তখন সেখানে এক-দু’জন ছাড়া কেউ জানতেন না আমি ক্যানসার আক্রান্ত। আমি আন্দোলনকারী হিসাবেই গিয়েছিলাম। ক্যানসার রোগী হিসাবে যাইনি। আমি জানি, কী ভাবে কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছি। যখন আমি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তখন তো আমি ক্যানসার আক্রান্ত ছিলাম না। ক্যানসারের সঙ্গে আমার পরীক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই।’’

কথা বলতে বলতে সোমার গলা বুজে আসে। আবেগে কথা জড়িয়ে যায়। কিছুটা আফসোসের সুরে তিনি বলেন, ‘‘আমি চাকরি হয়তো করব। কিন্তু আমার মতো অনেকের মনে সারা জীবন এটাই থেকে যাবে, ক্যানসারের জন্যে চাকরিটা থেকে গেল। আমার থেকে অভাগা এ দিক থেকে কেউ নেই। আমার যোগ্যতা যেন দুর্নীতির তলায় কোথায় হারিয়ে গেল। আমার যোগ্যতা মূল্য পেল না। দুর্নীতিই আমার এই পরিণতির জন্য দায়ী। এত দিনের কষ্ট, পরিশ্রমের বদলে বড় হয়ে উঠল আমার ক্যানসার আক্রান্ত পরিচয়! আদালতের কাছে আমি কোনও বিশেষ সুবিধা চাইনি। তবে আমাকে দেওয়া হয়েছে। আমি একদমই খুশি নই।’’

২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের (এসএলএসটি) পরীক্ষায় বসেছিলেন সোমা। সেই নিয়োগের মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয় হাই কোর্টে। চাকরির দাবিতে যখন সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করছেন তিনি, সেই সময়ই তিনি জানতে পারেন তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু লড়াই ছেড়ে দেননি। চাকরির দাবিতে রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অসুস্থ সোমা দিনের পর দিন কলকাতার রাস্তায় ধর্না, অবস্থান বিক্ষোভ করে গিয়েছেন। সেই সোমাকে চাকরি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলেন হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই অনুরোধ মেনে ক্যানসার আক্রান্ত সোমাকে চাকরির সুপারিশপত্র দেয় কমিশন। বীরভূমে, নিজের গ্রামের এক স্কুলে বাংলা শিক্ষিকা হিসাবে চাকরি পান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE