Advertisement
E-Paper

সাসপেন্ডের সুপারিশ করে বয়কট মানসকে

চূড়ান্ত বিবাদের মধ্যেও বন্ধু ‘ডাক্তার’কে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। ভরা মিডিয়া সেন্টারে আব্দুল মান্নানকে সেই বন্ধু সম্পর্কেই বলতে হল, ‘‘কংগ্রেসের পরিষদীয় কক্ষে চেয়ারে বসে মানস ভুঁইয়া এমন অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করছিলেন যে, অনেক মহিলা বিধায়ক চোখের জলে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৮

চূড়ান্ত বিবাদের মধ্যেও বন্ধু ‘ডাক্তার’কে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। ভরা মিডিয়া সেন্টারে আব্দুল মান্নানকে সেই বন্ধু সম্পর্কেই বলতে হল, ‘‘কংগ্রেসের পরিষদীয় কক্ষে চেয়ারে বসে মানস ভুঁইয়া এমন অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করছিলেন যে, অনেক মহিলা বিধায়ক চোখের জলে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।’’

পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ফিরিয়ে দিলেন ‘ডাক্তার’ও! বললেন, ‘‘আমার বন্ধু, মহান নেতা মান্নান আমাকে জন্মদিনে যে উইশ করেছিল, এখন বুঝছি তাতে বিষ ছিল! ওঁর মানসিক অবসাদ হয়েছে। আমাকে একটা ফোন করে বললে, দিল্লি-বেঙ্গালুরু ছুটতে হবে না। কলকাতাতেই ভাল ডাক্তারের ব্যবস্থা করে দেব!’’

এর কিছু কিলোমিটার দূরে বিধান ভবনে আবার সাংবাদিকদের ডেকেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মানসবাবুকে ‘কুনকি হাতি’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করলেন, ‘‘উনি তৃণমূলের কাছ থেকে সুপারি নিয়ে কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করছিলেন। দলে থেকে এ ভাবে কেউ কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করলে তা মেনে নেওয়া হবে না!’’ যা শুনে মানসবাবুর আবার পাল্টা কটাক্ষ— ‘সুপারি’ তো অপরাধ জগতের ভাষা। অধীর এগুলো জানতে পারেন। কংগ্রেসের সংস্কৃতিটা জানেন না!

শুক্রবার দুপুরে একেবারে বেআব্রু হয়ে গেল প্রদেশ কংগ্রেসের কাজিয়া! তৃণমূলের হাতে দলে ভাঙন যখন প্রকট, সেই সময়েই ঘরের বিবাদ এ ভাবে হাটের মাঝখানে এসে পড়তে দেখে লজ্জিতই হয়েছেন বিধায়কদের অনেকে। প্রদেশ নেতৃত্বের বিড়ম্বনা আরও বাড়াতে আজ, শনিবারই কলকাতা প্রেস ক্লাবে আর এক দফা সুভাষিতাবলি ছোটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মানসবাবু!

ঘটনা হল, ধারাবাহিক ভাবে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য এবং নেতৃত্বকে আক্রমণ করার দায়ে মানসবাবুকে দল থেকে সাসপেন্ড করার জন্য প্রস্তাব নিয়েছে কংগ্রেসের পরিষদীয় দল। প্রদেশ সভাপতি অধীরের উপস্থিতিতে বিধানসভায় এ দিন দলের অধিকাংশ বিধায়কই ওই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন, প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এআইসিসি-কে। অধীর জানিয়েছেন, প্রয়োজনে সবংয়ের বিধায়ককে বহিষ্কারের জন্য শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান এ কে অ্যান্টনির কাছে সুপারিশ করা হবে। আর মানসবাবু বলেছেন, তিনি সাসপেনশনের চিঠির

প্রতীক্ষায় আছেন!

এই পর্যন্ত যদি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়, বাকিটা নিখাদ পারিবারিক কোন্দল! মানসবাবুকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস পরিষদীয় দল। কংগ্রেসের ঘরে মানসবাবুর চেয়ারে এ বার থেকে অসিত মিত্র বসবেন বলে ঠিক হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কথা মানসবাবুকে কেউ জানাবেন না! ঘরে ঢুকতে গেলে কোনও সতীর্থ বিধায়ক তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলে দায়িত্ব মানসবাবুরই! দলের এমন অবস্থানের কথা জেনে প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি মানসবাবু টিপ্পনী কেটেছেন, ‘‘পাখা নড়ছে, খাট নড়ছে দেখে বুঝে নিতে হয়, ভূমিকম্প হয়েছে। মান্নানের মাথা নড়ছে দেখে বুঝে নিতে হবে সিদ্ধান্ত হয়েছে!’’

এমন সব কাদা ছোড়াছুড়ির মাঝেই প্রদেশ নেতৃত্ব অবশ্য বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, দলের মধ্যে যে ‘বিদ্রোহ’ সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন মানসবাবু, সেই সুযোগ আর তাঁকে দেওয়া হবে না। দু’দিন আগে মানস-ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতারা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ইস্তফা দাবি করেছিলেন। তাঁকে সাসপেন্ডের সুপারিশের পরে অধীরের ইস্তফা দাবি করেছেন মানসবাবুও। তবে তিনি যে হেতু এআইসিসি সদস্য, তাই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চূড়ান্ত এক্তিয়ার এআইসিসি-রই। বিরোধী দলনেতা মান্নানের বক্তব্য, ‘‘যে ভাবে মানসবাবু দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কুৎসা এবং মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূলকে প্রশংসা করছিলেন, তাতে বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’

প্রশ্ন হচ্ছে, যিনি আমৃত্যু কংগ্রেসের পতাকা বহন করার কথা বলতেন, সেই মানসবাবু কি এ বার তৃণমূলে যোগ দেবেন? কংগ্রেসের একাংশের মতে, মানসবাবু চান দল তাঁকে বহিষ্কার করুক। তা হলে বিধায়ক পদ রেখেই তিনি তৃণমূলে যোগ দিতে পারবেন। কিন্তু নিজে ইস্তফা দিয়ে ভোটে লড়লে সবং থেকে ফের জিতে আসার ঝুঁকি নিতে হবে। শুভেন্দু অধিকারী তমলুকের সাংসদ-পদ ছেড়ে দেওয়ায় বিধায়ক-পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে মানসবাবু সেখানে উপনির্বাচনেও দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু অধিকারী পরিবার বিষয়টি কী ভাবে নেবে, সেটাও বড় প্রশ্ন। আর কংগ্রেস চাইছে সাসপেন্ড করে মানসবাবুকে বেঁধে রাখতে। সাসপেনশনে থাকাকালীন দলের তিন লাইনের হুইপ না মানলে তাঁর বিধায়ক-পদ খারিজ হবে।

manas bhunia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy