E-Paper

শিক্ষা দুর্নীতি: বিশেষ বেঞ্চ গঠনের নির্দেশের ইঙ্গিত শীর্ষ কোর্টের

নবম, দশম শ্রেণিতে কর্মরত শিক্ষকদের বক্তব্য না শুনেই কলকাতা হাই কোর্ট তাঁদের চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল বলে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ উঠেছিল। এর ফলে যাঁরা চার-পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেছেন, তাঁদেরও চাকরি চলে যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৯
Supreme Court.

সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে এখনও পর্যন্ত কী পাওয়া গিয়েছে, তা সিবিআইয়ের কাছে জানতে চাইবে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবীকে আগামী বৃহস্পতিবার আদালতের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চ ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা এই সমস্ত মামলা শোনার জন্য কলকাতা হাই কোর্টে বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ গঠনের নির্দেশ দিতে পারে। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে এ বিষয়ে অনুরোধ করা হতে পারে।

মূলত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিভিন্ন মামলায় চাকরি বাতিলের নির্দেশের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। সরাসরি নাম না করলেও, তিনিও ওই বিশেষ বেঞ্চে থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। সিবিআইকে তিন থেকে ছ’মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হতে পারে। তার ভিত্তিতে কলকাতা হাই কোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ দেখতে পারে, আদৌ কোনও জালিয়াতি হয়েছে কি না। হলেও কাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মামলার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বক্তব্য, সবটাই এখনও পর্যন্ত ভাবনাচিন্তার মধ্যে রয়েছে।

নবম, দশম শ্রেণিতে কর্মরত শিক্ষকদের বক্তব্য না শুনেই কলকাতা হাই কোর্ট তাঁদের চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল বলে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ উঠেছিল। এর ফলে যাঁরা চার-পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেছেন, তাঁদেরও চাকরি চলে যায়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু আজ মন্তব্য করেছেন, ‘‘সবটাই তথ্যের উপর নির্ভর করবে। যদি নিয়োগে বিরাট মাপের জালিয়াতি হয়ে থাকে, তা হলে বিচারের স্বাভাবিক নীতি (কারও বিরুদ্ধে নির্দেশের আগে তাঁর বক্তব্য শোনা)-ও মেনে চলা সম্ভব নয়।’’ বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী বলেন, যদি নিয়োগের ক্ষেত্রেই জালিয়াতি হয়ে থাকে, তা হলে দশ বছর চাকরি করার পরেও নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম থেকেই যায়।

দুর্নীতির ফলে শিক্ষকের চাকরি থেকে বঞ্চিত যোগ্য প্রার্থীদের হয়ে আজ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, সব মামলা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হলে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যেন কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ না দেয়। সুপ্রিম কোর্ট যে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিল, তার বদলে কলকাতা হাই কোর্টের চাকরি খারিজের রায়ই যেন বহাল থাকে। অর্থাৎ, যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছে, তাঁরা যেন আর যোগ দিতে না পারেন। না হলে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন। নতুন করে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিও জানিয়েছেন বিকাশরঞ্জন। তবে বিচারপতি ত্রিবেদী তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এক ঝটকায় বহু মানুষের চাকরি চলে যাওয়ার উপরে স্থগিতাদেশথাকা উচিত।

চাকরিহারাদের হয়ে আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়া বলেন, দুর্নীতি হয়ে থাকলেও কারা নিয়ম মাফিক চাকরি পেয়েছেন, কারা জালিয়াতি করে চাকরি পেয়েছেন, তারবাছবিচার করা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৬ সালে যাঁরা নবম, দশম শ্রেণির সহকারী শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন, কলকাতা হাই কোর্ট তাঁদের কারও বক্তব্য না শুনেই স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করতে বলে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশের পরেই নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। বিকাশ অভিযোগ তোলেন, এ ক্ষেত্রে হাই কোর্ট চাকরি বাতিল করেনি। স্কুল সার্ভিস কমিশন মেনে নিয়েছিল, দুর্নীতি হয়েছে। তা হলফনামা দিয়ে হাই কোর্টে জানিয়েছিল। যে বেসরকারি সংস্থাকে ওএমআর শিট যাচাই করে নম্বরের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সিবিআই তাদের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করে। সেই হার্ড ডিস্ক ও কমিশনের কাছে থাকা নম্বরের তালিকায়ফারাক ছিল।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী কুণাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশে কমিশনকেএক দিনের মধ্যে হলফনামা দিতে হয়েছিল। সেখানে ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তা ছাড়া, সে সময় কমিশনের পরিচালনায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই জেলে। বর্তমান কর্তাদের কাছে তাই সব তথ্য নেই। তা সত্ত্বেও কমিশনের কাছে যে নথি রয়েছে, তার ভিত্তিতেই কমিশন আদালতকে সব কিছু জানিয়েছে। বিকাশরঞ্জন অভিযোগ তোলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন নিজেই অবস্থান বদল করছে। কলকাতা হাই কোর্টের নিযুক্ত বাগ কমিটি আগেই তদন্ত করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় মাপের দুর্নীতিররিপোর্ট দিয়েছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Case Supreme Court Calcutta High Court

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy