Advertisement
E-Paper

নিয়োগ মামলা: পার্থ-মুকুল চাপ দিতেন বেআইনি নিয়োগের জন্য! কোর্টে সাক্ষ্য দিলেন এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান

নিয়োগ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হল আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে। শুক্রবারের শুনানি প্রক্রিয়ায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:৪২
(বাঁ দিকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়।

(বাঁ দিকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মুকুল রায়। —ফাইল চিত্র।

নিয়োগ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হল আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে। শুক্রবারের বিচারপ্রক্রিয়ার প্রথম শুনানিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। চোখে কালো চশমা, হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই বিচারপ্রক্রিয়ায় যোগ দেন তিনি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ছিলেন অশোক সাহা, এসপি সিংহ এবং‌ প্রসন্ন রায়।

শুক্রবার বিচারক বিশ্বরূপ শেঠের এজলাসে সাক্ষ্য নেওয়া হয় এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানের। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী তাঁর কাছে জানতে চান, এসএসসির চেয়ারম্যান হওয়ার আগে তিনি কোথায় ছিলেন? প্রাক্তন চেয়ারম্যান জানান, তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সভাপতি ছিলেন এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। ২০১১ সালের ৬ জুন চেয়ারম্যান পদের জন্য তাঁর নামে অনুমোদন দেন রাজ্যপাল।

সিবিআইয়ের আইনজীবী প্রাক্তন চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান, তিনি সরাসরি এসএসসির চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন কি না। বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা তাতে বাধা দেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী ‘রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত’ বলেও মন্তব্য করা হয়। বিচারকও সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন এই মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশ্ন করতে।

এর পরেই সাক্ষীর কাছে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানতে চান, ‘‘আপনি কার কথায় এসএসসি চেয়ারম্যানের পোস্ট নিয়েছিলেন?’’ জবাবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সিএম (মুখ্যমন্ত্রী) আমাকে জানান যে, আমাকে চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। তার পরেই আমি জয়েন করি।’’ এতে বাধা দেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘মামলা থেকে এই নাম (মুখ্যমন্ত্রী নাম) বাদ দেওয়া উচিত।’’

সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান জানান, তাঁকে চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। চাপের মুখে পড়ে দু’বছরের মধ্যে, ২০১৩ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। দাবি করেন, মুকুল রায় এবং পার্থ তাঁকে বেআইনি ভাবে নিয়োগের জন্য চাপ দিয়েছিলেন।

প্রাক্তন চেয়ারম্যান: আমাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল।

সঞ্জয় দাশগুপ্ত: এটা ওঁর মনে হওয়া। এটা মামলার সঙ্গে যায় না।

সিবিআইয়ের আইনজীবী: সাক্ষীকে বলতে দিন।

বিচারক: চাপ বলতে? এই চাপ কে দিল?

সাক্ষী: বিভিন্ন নেতারা। যেমন মুকুল রায়। সরাসরি ভাবে না হলেও, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকেও চাপ এসেছে।

পার্থের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী: আমার মক্কেলের নাম নেওয়া হয়েছে। পাশে ‘পরোক্ষ ভাবে’ শব্দটা লিখে রাখা হোক।

বিচারক (প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে): আর?

সঞ্জয়: আর দু’-চারটে নাম দিন।

সাক্ষী: অযথা কেন নাম নেব?

বিচারক: আপনি কী করলেন?

সাক্ষী: আমার কিছু করার ছিল না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এক দিন আমাকে ওঁর বাড়িতে ডাকলেন।

বিচারক: শেষে আপনি কী করলেন?

সাক্ষী: উনি যে ভাবে জোর করেছিলেন, সেটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাই পদত্যাগ করেছিলাম।

বিচারক: কারণ দিয়েছিলেন?

সাক্ষী: না।

সিবিআইয়ের আইনজীবীর পর এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা শুরু করেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সঞ্জয়। জানতে চান, তিনি তৃণমূলের ‘এডুকেশন সেল’-এর সভাপতি ছিলেন কি না। জবাবে সাক্ষী বলেন, ‘‘তৃণমূলের ‘এডুকেশন সেল’-এর সভাপতি ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। আর শিক্ষা সেলের সভাপতি ছিলাম আমি।’’

সঞ্জয়ের প্রশ্নের জবাবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান জানান, মুকুল বা পার্থ তাঁকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিলেও ব্রাত্য বসুর (রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী) কাছ থেকে কোনও রকম চাপ আসেনি। সঞ্জয় সাক্ষীর কাছে জানতে চান, ‘দ্বাদশ আরএলএসটি’ পরীক্ষা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছিল। তার পরে কেন সিবিআই তদন্ত করেনি? সাক্ষী জানান, কোনও অভিযোগ ছিল না। পাল্টা সঞ্জয় বলেন, ‘‘এ কথা আপনি সিবিআইয়ের চাপে বললেন।’’ সাক্ষীর জবাব, ‘‘একদমই না। এ কথা আমি মানতে পারছি না।’’

এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করেন পার্থের আইনজীবী বিপ্লবও। সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে সাক্ষী জানান, তিনি ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের সময় বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরির দলেও ছিলেন। পাল্টা বিপ্লব বলেন, ‘‘তার মানে যখন আপনি সিবিআইয়ের দফতরে যান, তখন আপনি বিজেপির সদস্য।’’

বিপ্লব: আপনি রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়েই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম সিবিআইকে দিয়েছিলেন।

সাক্ষী: না।

বিপ্লব: আপনার কথা এবং একটি রাজনৈতিক দলের কথায় মিল রয়েছে। কোর্টের কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন আপনি। (সাক্ষীকে হাসতে দেখে বিপ্লব বলেন, হাসবেন না। হাসি আদালতের অবমাননা।)

সাক্ষী: না।

শনিবারও বিচারপ্রক্রিয়া চলবে। সাক্ষ্য নেওয়া হতে পারে এসএসসির আর এক প্রাক্তন আধিকারিকের। তার পরের শুনানি আগামী সোমবার।

এই মামলায় মোট আট জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। সেই তালিকায় এসএসসি-র দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছাড়াও রয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির ব্যক্তিগত সহকারী, এসএসসি-র এক আধিকারিক, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের টেকনিক্যাল অফিসার, এসএসসি-র আঞ্চলিক শাখার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন।

Partha Chatterjee SSC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy