E-Paper

শূন্য হয়েছে ৫৮, কোথাও এক হয়েছে ৫৪! এসএসসি-র সার্ভারে প্রার্থীদের নম্বরে যেন ভোজবাজি

গত শুক্রবার এসএসসি গ্রুপ-সি পদে নিয়োগে দু’টি তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকা অনুযায়ী, ৫৭ জন গ্রুপ-সি কর্মী এসএসসির সুপারিশ ছাড়াই স্কুলে নিয়োগপত্র পেয়েছেন এবং চাকরি করছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:৩৯
Representational image of Examination.

নিয়োগে যে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে, তার সপক্ষে এই তালিকাই যথেষ্ট প্রমাণ। প্রতীকী ছবি।

এ যেন ভোজবাজি! উত্তরপত্রে প্রার্থী পেয়েছেন শূন্য। অথচ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সার্ভারে সেই নম্বর হয়ে গিয়েছে ৫৮! কোথাও খাতায় ১ নম্বর পেলেও তা হয়ে গিয়েছে ৫৪!

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এসএসসি সোমবার গ্রুপ-সি পদের নিয়োগে ৩৪৭৮ জনের নম্বরের ফারাকের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানেই এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে ওই তালিকায় এমনও ৮৬ জন প্রার্থী আছেন, যাঁদের উত্তরপত্রে প্রাপ্ত নম্বর থেকে সার্ভারে নম্বর কমে গিয়েছে। সেই ফারাক ১ থেকে ১১ নম্বর পর্যন্ত। বস্তুত, টাকার বিনিময়ে নম্বর বাড়ানোর অভিযোগ আগেই উঠেছে। কিন্তু নম্বর কমে যাওয়ার ঘটনা সামনে আসার পরে প্রশ্ন উঠেছে, অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দিতেই কি যোগ্যদের নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল?

এই তালিকা দেখে অনেকেই বলছেন, নিয়োগে যে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে, তার সপক্ষে এই তালিকাই যথেষ্ট প্রমাণ। নম্বর বৃদ্ধির তালিকায় তৃণমূল নেতানেত্রী কিংবা তাঁদের আত্মীয়দের উপস্থিতিও লক্ষণীয়। যেমন এক জেলা স্তরের তৃণমূল নেত্রী খাতায় ১ নম্বর পেলেও সার্ভারে তা বেড়ে ৫৪ হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার শাসক দলের এক নেত্রী খাতায় গোল্লা পেয়েও সার্ভারে নম্বর পেয়েছেন ৫৪। শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর ভাই খোকন মাহাতোর নম্বর ১২ থেকে বেড়ে ৫৫ হয়েছে। একদা গ্রাম রোজগার সেবক খোকন বছর পাঁচেক আগে সরকারি চাকরি পান। এ দিন তিনি ‘তালিকা না দেখে’ নম্বর বৃদ্ধি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

উত্তরপত্রে কারসাজি নিয়ে এসএসসি-র বর্তমান কর্তারা বলছেন, ‘‘যে সময়ে এই ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমাদের দায়িত্ব ছিল না। তাই কী ভাবে কী হয়েছিল তা বলা সম্ভব নয়।’’

গত শুক্রবার এসএসসি গ্রুপ-সি পদে নিয়োগে দু’টি তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকা অনুযায়ী, ৫৭ জন গ্রুপ-সি কর্মী এসএসসির সুপারিশ ছাড়াই স্কুলে নিয়োগপত্র পেয়েছেন এবং চাকরি করছেন। সেই ৫৭ জনের চাকরি সরাসরি বাতিল করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। দেখা যায়, ৭৮৫ জনের উত্তরপত্রে (ওএমআর শিট) কারসাজি করে নম্বর বাড়ানো হয়েছিল। কোর্টের নির্দেশে নিজের আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে ৭৮৫ জনের চাকরির সুপারিশ বাতিল করে এসএসসি। তার ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

তবে এই চাকরি খোয়ানো গ্রুপ-সি কর্মীরা আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চান। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে সোমবার তাঁরা কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন। কোর্টের খবর, বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা আছে।

প্রসঙ্গত, গ্রুপ-সি পদে লিখিত পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ ছিল ৬০ নম্বর। তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, কার্যত গোল্লা পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের প্রায় মোট নম্বরের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪০ নম্বরের মধ্যে কম্পিউটার-টাইপ পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫ নম্বর, পার্সোনালিটি টেস্টের জন্য ৫ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ১০।

এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘আমরা ওএমআর শিট খুঁটিয়ে দেখে মূল্যায়ন করেছি। ৩৪৭৮ জনের মধ্যে ৩০৩০ জনের নম্বর বেড়েছে। ৮৬ জনের নম্বর কমেছে। ৩৬২ জনের নম্বর অপরিবর্তিত।’’ তিনি জানিয়েছেন, চাকরি বাতিল হওয়া ৮৪২ জনের মধ্যে ৭৮৫ জন সুপারিশপত্র পেয়েছিলেন। আরও ৮৫১ জন চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন ওয়েটিং লিস্ট বা অপেক্ষমাণ তালিকায়। ১৭১০ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম মূল মেধা তালিকা কিংবা অপেক্ষমাণ তালিকা, কোথাও নেই। প্রসঙ্গত, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি বাতিলের পাশাপাশি তৈরি হওয়া শূন্য পদে নিয়োগ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন এসএসসি-কে। এ দিন সেই নিয়োগ সংক্রান্ত প্রাথমিক বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে কমিশন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Scam West Bengal SSC Scam Calcutta High Court

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy