Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মুর্শিদাবাদ থেকে রেফার হয়ে চরকিপাক কলকাতার হাসপাতালে

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ না থাকায় কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়েছিল রোগীকে। অথচ যেখানে পাঠানো হল, সেই এনআরএস-এও গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ নেই! অগত্যা এসএসকেএম এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে রোগী নিয়ে ছোটাছুটি করেছেন তাঁর পরিবারের লোকেরা।

কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিজিৎ।— নিজস্ব চিত্র

কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অভিজিৎ।— নিজস্ব চিত্র

সোমা মুখোপাধ্যায় ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
কলকাতা ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১২
Share: Save:

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ না থাকায় কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়েছিল রোগীকে।

অথচ যেখানে পাঠানো হল, সেই এনআরএস-এও গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ নেই! অগত্যা এসএসকেএম এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে রোগী নিয়ে ছোটাছুটি করেছেন তাঁর পরিবারের লোকেরা।

টানাপড়েনে রোগীর অবস্থা সঙ্গীন হওয়ায় শেষে ভর্তি করাতে হয়েছে নার্সিংহোমে, যদিও সেখানকার খরচ চালানোর সঙ্গতি তাঁর পরিবারের নেই। মুখ্যমন্ত্র্রীর ঘোষণা মতো যাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের নেওয়ার কথা, সরকারি তরফে কেউ তাঁর খোঁজ করেননি। সাহায্য চেয়ে এর-তার দরজায় ঘুরে ক্লান্ত তাঁর স্ত্রী।

গত ২৬ অগস্ট পেটের সমস্যা নিয়ে নদিয়ার পলাশি থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন বছর বত্রিশের অভিজিৎ হাজরা। পরের দিন ওই হাসপাতালে আগুন লাগে। ছুটোছুটিতে পড়ে মারা যান তাঁর মা উজ্জ্বলাদেবী। আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিজিৎ। শ্বাসকষ্ট, কাশি, মলের সঙ্গে রক্তপাত শুরু হয়। কোলনোস্কোপি দরকার জানিয়ে এনআরএস-এ ‘রেফার’ করা হয় তাঁকে।

অভিজিতের স্ত্রী দীপান্বিতার খেদ, ‘‘এনআরএস-এ ইমার্জেন্সিতে .যেতেই ডাক্তারবাবুরা বললেন, ‘আজ কিছু হবে না। কাল আউটডোরে এসো।’ ফিরিয়ে দিলেন।’’ সারা রাত এমনি ফেলে রাখলে বিপদ হতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁরা এসএসককেএমে ছোটেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সেখানে এক বোতল স্যালাইন চালানোর পরে বলা হয়, ‘বেড নেই। কাল সকালে খবর নিও।’ তখন আমরা যাই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে।’’

ন্যাশনালে অভিজিৎকে ভর্তি করা হয় ঠিকই, কিন্তু বেড জোটেনি। মেলেনি ট্রলিও। এক টুকরো প্লাস্টিক জোগাড় করে অভিজিৎকে সিঁড়ির ধারে শুইয়ে রেখেছিলেন পরিজনেরা। ওই ভাবে ১৬/১৭ ঘন্টা পড়ে থাকার পরে অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে দেখে অভিজিৎকে মধ্যমগ্রামের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়।

কিন্তু টাকা কোথায়? এক দোকানে সামান্য বেতনের চাকরি করেন অভিজিৎ। তাঁকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন দীপান্বিতা। সাত বছরের মেয়েকে অসুস্থ শ্বশুরমশাইয়ের কাছে রেখে স্বামীকে নিয়ে তিনি কলকাতায় পড়ে আছেন। সোমবার দুপুরে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ হাজার টাকা জমা দিয়ে ভর্তি করেছি। ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারব কি না, জানি না।’’

কে নেবে এর দায়?

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের সুপার সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘ওঁর চিকিৎসার জন্য গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি দরকার বলে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল। পরে কী হয়েছে, তা আমাদের জানার কথা নয়।’’ কিন্তু এনআরএস-এও তো গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ নেই, তা হলে সেখানে পাঠানো হল? সুপারের যুক্তি, ‘‘আমাদের হাসপাতাল থেকে ওখানেই রেফার করা নিয়ম।’’

এনআরএস-এর সুপার মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এমন এক জন রোগীকে যে রেফার করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ থেকে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। এসএসকেএম-এর ডাক্তারদের বক্তব্য, তাঁদের কাছে শয্যা ছিল না। তাই স্যালাইন দিয়ে রোগীকে কিছুটা স্থিতিশীল করে তাঁরা ন্যাশনাল মেডিক্যালে পাঠিয়েছিলেন।

এসএসকেএমের এক কর্তার মতে, ‘‘কলকাতায় পাঠানোর মতো গুরুতর অবস্থা ছিল না ওই রোগীর। জেলায় চিকিৎসা হতে পারত। টানাপড়েনেই ওঁর অবস্থার অবনতি হয়েছে।’’ একই কথা ন্যাশনালের ডাক্তারদেরও। তা হলে কেন পাঠানো হল? মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের সুপারের দাবি, ‘‘ওঁর জন্য তিন চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড বসানো হয়েছিল। তাঁরা যেমন বলেছেন, তেমনই করা হয়েছে।’’

দীপান্বিতা জানান, ন্যাশনালের এক ডাক্তার তাঁকে বলেছেন, এখানে সিঁড়ির পাশে প্লাস্টিক পেতে রোগীকে শুইয়ে রাখা আর গাছতলায় ফেলে রাখা— একই ব্যাপার। ন্যাশনালের কর্তাদের বক্তব্য, জেলা থেকে স্রোতের মতো আসা রোগীর ভিড়ে পরিষেবা দেওয়া সত্যিই কঠিন।

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের কাছে যেমন কৈফিয়ত চাওয়া হবে, কলকাতায় এমন ভোগান্তি কেন, সে ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE