Advertisement
E-Paper

বিমানদা জোট চাই, দেখা হতেই সরব রেজ্জাক

লক্ষ্য যদি হয় তৃণমূলকে আটকানো, তা হলে জোট বাঁধাই রাস্তা। সিপিএমের মধ্যে আগেই উঠেছিল এই প্রস্তাব। এ বার সেই মতের পক্ষে দাঁড়াতে শুরু করলেন সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পৃথক মঞ্চ গড়ে-ফেলা নেতারাও।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৮

লক্ষ্য যদি হয় তৃণমূলকে আটকানো, তা হলে জোট বাঁধাই রাস্তা। সিপিএমের মধ্যে আগেই উঠেছিল এই প্রস্তাব। এ বার সেই মতের পক্ষে দাঁড়াতে শুরু করলেন সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পৃথক মঞ্চ গড়ে-ফেলা নেতারাও। সচরাচর বহিষ্কৃত নেতারা তাঁদের পুরনো দলের সঙ্গে সংস্রব এড়িয়ে চলতে চান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভিন্ন লক্ষ্যের স্বার্থে সেই তিক্ততাও বাধা হচ্ছে না!

সিপিএম থেকে বহিষ্কারের পরে এখন ‘ভারতীয় ন্যায়বিচার পার্টি’ নামে আলাদা দল গড়েছেন বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। একাধিক মঞ্চে সামিল হয়ে নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নে আন্দোলনে সামিলও হয়েছেন। সেই রেজ্জাকই এ বার এগিয়ে এসেছেন তৃণমূলের মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বৃহৎ মঞ্চ গড়ার চর্চাকে বাস্তবায়িত করার প্রস্তাব দিতে। দু’দিন আগেই হুগলির ফুরফুরা শরিফে গিয়েছিলেন তিনি। সেই দিনই সেখানে হাজির ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু। পুরনো দলের নেতার সঙ্গে দেখা হতেই সৌজন্য বিনিময়ের ফাঁকে বৃহত্তর মঞ্চের প্রস্তাব পেড়েছেন রেজ্জাক। বিমানবাবুও তাঁর কথা ধৈর্য ধরে শুনেছেন। রেজ্জাকের মতে, এক দিকে তৃণমূল এবং অন্য দিকে বিজেপি-র মোকাবিলায় ধর্মনিরপেক্ষ বৃহত্তর মঞ্চই সময়ের চাহিদা।

রেজ্জাক বলছেন, ‘‘বিমানদা’কে বলেছি, ওই মহিলাকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যদি উৎপাটন করতে হয়, তা হলে জোট বাঁধতে হবে। কেউ সিপিএমের পতাকা নিয়ে, কেউ কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে নিজের মতো চলবে— এ ভাবে হবে না। গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে কাছাকাছি আসতে হবে।’’ রেজ্জাকের পরিষ্কার কথা, এ ব্যাপারে তিনি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবের মতের সমর্থক। ঘটনাচক্রে, ফুরফুরা শরিফে বিমান-রেজ্জাক আলোচনার দিন ছিলেন গৌতমবাবুও। যিনি বলছেন, ‘‘আমি বারেবারেই বলছি, রাজ্যকে তৃণমূলের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে এবং তার জন্য আমাদের বাড়তি পথ হাঁটতে হবে।’’ গৌতমবাবুরা চেয়েছিলেন, সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে যেমনই সিদ্ধান্ত হয়ে থাকুক, এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কংগ্রেস-সহ সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির এক জায়গায় আসা নিয়ে চর্চা হোক।

দলের মধ্যে সেই চর্চা শুরু করাতে ইতিমধ্যেই সফল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক। রেজ্জাকদের আগ্রহে স্পষ্ট, সেই চর্চা সিপিএমের বাইরে অন্য মহলেও গতি পাচ্ছে।

বস্তুত, বঙ্গ সিপিএমের একটি বড় অংশ চাইছে, নির্বাচনী কৌশল না হয় পরে ঠিক হবে। তার আগে শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রশ্নে হোক বা আন্দোলনের ক্ষেত্রে আগে ওই বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে উঠুক। তারা রাস্তায় নেমে মানুষের কাছে নিজেদের কার্যকারিতা জাহির করতে পারলে তখন ভোটের আগে ওই মঞ্চকে নির্বাচনী সমঝোতায় বদলে নেওয়ার চাপ স্বাভাবিক ভাবেই আসবে। প্রতিরোধের প্রশ্নেই যেমন গৌতমবাবুর তত্ত্বের পুনরাবৃত্তি করছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী। দুর্গাপুরে সম্প্রতি এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোয় সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামলবাবু-সহ সংগঠনের অন্য নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। একই ‘অপরাধে’ একই ধরনের মামলা হয়েছে নদিয়ায় কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধেও। তার প্রেক্ষিতেই শ্যামলবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রতিদিন বোঝা যাচ্ছে, এই সরকার বিরোধীদের অধিকার দিতে চায় না। এই স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি এবং তার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সবাইকে একজোট হতে হবে।’’

গৌতমবাবুরও আগে অবশ্য এই যৌথ মঞ্চের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল মান্নান। তাঁর ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরাম’ অনেকটা সেই ধাঁচেই কাজ করছে। আবার এই গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ গড়ার প্রয়াসে তাঁদের মতের সমর্থক আর এক প্রাক্তন সিপিএম এবং অধুনা পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ডও। এই লক্ষ্যে নানা দলের সঙ্গে আলোচনাও চালাচ্ছেন সমীরবাবুরা। কিন্তু মান্নানের দলেরই একাংশ বামেদের সঙ্গে সমঝোতার বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে মান্নানের মন্তব্য, ‘‘সিপিএম যখন শাসক দল ছিল, তখন তাদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধার সময়েও কিছু নেতা সিপিএমের পক্ষে দাঁড়াতেন। এখন তাঁরাই তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছেন। এঁরা রাজ্য বা দলের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে বড় করে দেখছেন!’’

নেতারা যখন আলোচনার গতি বাড়াচ্ছেন, তখন বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে চাপ আসছে সিপিএমের নিচু তলা থেকেও। বিহারে আসন্ন বিধানসভা ভোটে জনতা পরিবার বা কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ মঞ্চ নয়, বাম দলগুলি পৃথক জোট বেঁধে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিপিএমের ফেসবুক পেজে সেই সিদ্ধান্ত সম্পর্কেই দলের একাধিক সমর্থক মন্তব্য করেছেন, ‘বিহারে যা হয়েছে, হয়েছে। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তির একজোট হওয়া চাই’।

rejjak mollah biman basu alliance rejjak alliance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy