Advertisement
E-Paper

অরবিন্দের দেহাবশেষ প্রথম এল বঙ্গবাণীতে 

১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯ সাল। সে দিন ছিল সরস্বতী পুজো। চৈতন্যধাম নবদ্বীপ থেকে কয়েকশো মাইল সুদূর দক্ষিণ ভারতের পুদুচেরির অরবিন্দ আশ্রমে এক ঐতিহাসিক যাত্রার সূচনা হচ্ছিল।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৫
ঋষি অরবিন্দ।—ফাইল চিত্র।

ঋষি অরবিন্দ।—ফাইল চিত্র।

১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯ সাল। সে দিন ছিল সরস্বতী পুজো। চৈতন্যধাম নবদ্বীপ থেকে কয়েকশো মাইল সুদূর দক্ষিণ ভারতের পুদুচেরির অরবিন্দ আশ্রমে এক ঐতিহাসিক যাত্রার সূচনা হচ্ছিল। যার পরিসমাপ্তিস্থল হিসাবে আগে থেকেই প্রস্তুত হচ্ছিল নবদ্বীপ।

ঋষি অরবিন্দের স্মৃতিতে নবদ্বীপের একদম শেষপ্রান্তে গঙ্গার তীরে নিদয়া ঘাট সংলগ্ন মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠছে অরবিন্দের ভাবাদর্শে পরিচালিত ‘বঙ্গবাণী’ নামে এক অভিনব আশ্রম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠে তেরোটি বিষয়ে পৃথক পাঠ্যক্রম সম্বলিত এক বিরাট আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

নবদ্বীপের সেই বঙ্গবাণী আশ্রমই প্রথম স্থান যেখানে পুদুচেরির বাইরে শ্রীঅরবিন্দের দেহাবশেষ স্থাপিত হয়েছিল। সেটা ছিল ১৯৫৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেই সময়ে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলে চিহ্নিত হয়েছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পুদুচেরি আশ্রমে শ্রীমা স্বয়ং বঙ্গবাণীর ১২ জন কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন শ্রীঅরবিন্দের দেহাবশেষ। অনুষ্ঠানের প্রত্যক্ষদর্শী, সে কালের হাসির গানের রাজা এবং শ্রীঅরবিন্দের অনুগামী নলিনীকান্ত সরকার তার বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন।

তাঁর রচনা থেকে থেকে জানা যায়, কী ভাবে ওই চিতাভস্ম নিয়ে পরবর্তী ন’দিন ধরে কলকাতা-সহ নবদ্বীপ জুড়ে বিপুল উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছিল। সে কালের মাদ্রাজ মেলের বিশেষ ভাবে সুসজ্জিত একটি কামরা এ জন্য রিজার্ভ করে সেটি কলকাতা হয়ে নবদ্বীপে আনা হয়েছিল। পথে মাদ্রাজ, মেলোর, ওঙ্গোল, বেজওয়ারা, ওয়ালটেয়ার, খুরদারোড, ভুবনেশ্বর, কটক, বালেশ্বর, ভদ্রক, খড়গপুর, বাগনান, সাঁতরাগাছি এবং রামরাজাতলা প্রভৃতি স্টেশনে মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। ট্রেন হাওড়ায় এসে পৌঁছায় ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টের পর। দেহাবশেষ গ্রহণ করার জন্য স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ত্রিগুণা সেন-সহ অনেকে।

সেই দেহাবশেষ বিশেষ রথে রেখে এক বিরাট শোভাযাত্রা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে কলকাতার বুকে প্রায় পনেরো মাইল পথ অতিক্রম করে লেক ময়দানে পৌঁছয়। কলকাতার হাজার হাজার মানুষ সেই শোভাযাত্রায় যোগ দেন। এক দিন সেখানে থাকার পর ১৬ ফেব্রুয়ারি শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর হয়ে নবদ্বীপের পথে যাত্রা করে বিশেষ ট্রেন। নবদ্বীপে যখন দেহাবশেষ এসে পৌঁছয় তখন সন্ধ্যায় নেমে এসেছে।

পরে ২১ ফেব্রুয়ারি নবদ্বীপের নিদয়া ঘাটে নির্মিত সমাধি মন্দিরে স্থাপিত হয় সেই দেহাবশেষ। এখনও নবদ্বীপে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত সেই দেহাবশেষ। সে দিনের বঙ্গবাণীর প্রাণপুরুষ, প্রয়াত গোবিন্দলাল গোস্বামীর পুত্র, বর্তমানে বোর্ড অফ ট্রাস্টির সম্পাদক দিব্যেন্দু গোস্বামী জানান, “সেই উৎসবে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন সারা ভারত থেকে।

বঙ্গবাণীর মাঠে তাঁবু তৈরি করা হয়েছিল বহিরাগতদের জন্য। ১৯৫৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীমায়ের জন্মতিথিতে শ্রীঅরবিন্দের পবিত্র দেহাবশেষ নবদ্বীপের স্মৃতিমন্দিরে স্থাপন করেন শ্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন। তখন তিনি বঙ্গাবাণীর সভাপতি।’’ সেই থেকে ষাট বছর ধরে নবদ্বীপের অরবিন্দ আশ্রমে সংরক্ষিত দেহাবশেষ ঘিরে প্রতি বছর উৎসব হয়। এ বছর উৎসবের হীরকজয়ন্তী। ২০ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি দু’দিন ধরে আয়োজিত হয়েছে নানা উৎসব।

Rishi Aurobindo Bangabani Institute
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy