E-Paper

ডেঙ্গিতে মৃত্যু ঠেকাতে যৌথ গবেষণা, নেতৃত্বে বঙ্গসন্তানেরা

গবেষক এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাল সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গি। যাতে বহু ক্ষেত্রে আক্রান্তের অবস্থা অল্প সময়ের মধ্যেই সঙ্কটজনক হয় এবং অনেকে মারাও যান।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৫ ০৯:৩৯

—প্রতীকী চিত্র।

গোটা বিশ্বে এখন চিন্তার কারণ ডেঙ্গি। মশাবাহিত ওই রোগে মৃত্যু কী ভাবে একেবারে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে শুরু হল গবেষণা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে ‘কমব্যাট ডেঙ্গি’-নামের ওই গবেষণা চলবে আগামী পাঁচ বছর। পুরো প্রকল্পে যুক্ত বেশির ভাগ গবেষকই ভারতীয় এবং তাঁদের মধ্যে ‘প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর’ সহ পাঁচজন বঙ্গসন্তান।

গবেষক এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাল সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে ডেঙ্গি। যাতে বহু ক্ষেত্রে আক্রান্তের অবস্থা অল্প সময়ের মধ্যেই সঙ্কটজনক হয় এবং অনেকে মারাও যান। আবহাওয়ারতারতম্যের জন্য ইউরোপেও ডেঙ্গির প্রকোপ ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। দ্রুত গতিতে অতিমারির পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া ডেঙ্গি কী ভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বিশ্বে প্রতি বছর যত সংখ্যক মানুষ মশাবাহিত ওই রোগে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে ভারত উল্লেখযোগ্য। ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বোর্ন ডিজ়িজ় কন্ট্রোল’-র পরিসংখ্যান বলছে ২০১৯ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লক্ষ ৬৩ হাজার ১৯৩ জন। মারা গিয়েছেন ১৬৫৯ জন। এই পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করেই ভারতের সঙ্গে যৌথ ভাবে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। পুরো প্রকল্পটির সমন্বয় ও মুখ্য গবেষকের দায়িত্বে রয়েছেন সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র লেকচারার উজ্বল নিয়োগী। তাঁর বাড়ি কাঁচড়াপাড়ায়। তাঁর সঙ্গে আইসিএমআর-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রামক ব্যাধির প্রাক্তন অধিকর্তা স্বরূপ সরকার, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স-এর ভাইরোলজির গবেষক সৌমিত্র দাস, কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-র গবেষক অরিন্দম মৈত্র এবং কল্যাণী এমস-এর সংক্রামক রোগের শিক্ষক চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিভিন্ন ভাবে যুক্ত রয়েছেন।

উজ্বল জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার পরে রোগীর শারীরিক অবস্থা কতটা গুরুতর হতে পারে তা আগাম জানা খুবই জরুরি। পাশাপাশি ডেঙ্গির প্রতিষেধক এবং নির্দিষ্ট ওষুধেরও প্রয়োজন। যাতে ডেঙ্গিতে ‘জ়িরো ডেথ’ করা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বে ডেঙ্গির প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। অতিমারির সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই দু’টি বিষয়ই মূলত জানার চেষ্টা হচ্ছে।’’ গবেষণার জন্য নিউ দিল্লির আর্টেমিস এবং ম্যাক্স হাসপাতাল এবং কর্ণাটকের কস্তুরবা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডেঙ্গি আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হবে কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এ।

বিভিন্ন পর্যায়ে নমুনা পরীক্ষা প্রক্রিয়ার সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন অরিন্দম। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, জ্বর হওয়ার সাধারণত তিন দিনের মাথায় ধরা পড়ে ডেঙ্গি। কিন্তু তখনই রোগীর মৃত্যু হয় না। মৃত্যু হয় দিন সাতেক পরে। সায়ন্তনের কথায়, ‘‘গবেষণার মাধ্যমে একটি বায়োমার্কার যদি আবিষ্কার করা যায়, তা হলে আগাম বোঝা সম্ভব হবে কোন ডেঙ্গি আক্রান্তের শারীরিক অবস্থা কতটা সঙ্কটজনক হতে পারে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, বহু ক্ষেত্রেই এমন রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাঁদের হয়তো প্রয়োজন নেই। তার ফলে অনেক ক্ষেত্রে অতি সঙ্কটজনক রোগীরা শয্যা পান না। তাতে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ে। সেই জায়গায় আগাম আভাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই ভাবে প্রতিরোধী ওষুধ আবিষ্কার হলে, ‘মৃত্যু শূন্য ডেঙ্গি’ করা সম্ভব।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dengue Death Dengue

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy