Advertisement
E-Paper

ভিক্ষার চাল, পোড়া ইঁদুরই খাদ্য, রসা গ্রামে এই ‘উন্নয়ন’!

খাস বীরভূমে ‘উন্নয়ন’-এর ভিড়ে মিশে আছে এই খয়রাশোলের হজরতপুরে রসা গ্রাম। সরকারি তথ্য বলছে, কয়েক মাস আগে যক্ষ্মায় মৃত্যু হয়েছে এলাকার এক যুবকের।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০৩:৪২
অসহায়: যাযাবর বসতিতে। —নিজস্ব চিত্র।

অসহায়: যাযাবর বসতিতে। —নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলে শিকার করা ইঁদুর, বাদুড়, পাখির পোড়া মাংস আর ভিক্ষার চাল— বেশির ভাগ দিন পাতে পড়ে এটুকুই!

খাস বীরভূমে ‘উন্নয়ন’-এর ভিড়ে মিশে আছে এই খয়রাশোলের হজরতপুরে রসা গ্রাম। সরকারি তথ্য বলছে, কয়েক মাস আগে যক্ষ্মায় মৃত্যু হয়েছে এলাকার এক যুবকের। প্রশাসনের আশঙ্কা, যক্ষ্মায় আক্রান্ত মৃতের ভগ্নীপতিও। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ওই বসতিতে অপুষ্টিতে ভুগছে বেশ কয়েকটি শিশু।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দশক আগে ‘যাযাবর’ বেদ সম্প্রদায়ের অর্জুন বেদ সপরিবার রসা গ্রামে থাকতে শুরু করেন। অর্জুনের চার ছেলেমেয়েও এখন থাকেন সেখানে। বৃদ্ধ অর্জুন ও তাঁর মেয়ে মায়া জানান, আড়াই বছর আগে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড পেয়েছেন। আছে রেশন কার্ডও। কিন্তু তাঁদের মতো হতদরিদ্র পরিবারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে, এপিএল কার্ড! তাই ২ টাকা দরে নয়, চাল কিনতে হয় প্রতি কিলোগ্রাম ১৩ টাকা দরে! অত টাকা দিয়ে চাল কেনার ক্ষমতা নেই তাঁদের।

মায়ার স্বামী যক্ষ্মায় আক্রান্ত। এক রাশ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘‘বনবাদাড়ে ঘুরে ইঁদুর, বাদুড় মেরে পুড়িয়ে খাই। না হলে জঙ্গলে পাওয়া গাছের মূল সেদ্ধ।’’ আরও জানান, গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে পাওয়া চালেই হয় ভাত। খাবারের খোঁজে কখনও কখনও ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ড সীমানার জঙ্গলেও চলে যান।

অর্জুনের অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পে ঘর, বিদ্যুৎ কিছুই পাননি। মেলেনি জব-কার্ডও। শুধু মিলেছে ত্রিপল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, মায়ার তিন সন্তানের দু’জন ভুগছে অপুষ্টিতে। অপুষ্টি রয়েছে ওই পাঁচ পরিবারের অন্য কয়েক জন শিশুরও। সচেতনতার অভাবে ওষুধ না খেয়ে বসতির এক যক্ষ্মারোগীর মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি দফতরের।

স্থানীয় পঞ্চায়েতের দাবি, ওই পরিবারগুলি বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। জব-কার্ড নেওয়া বা ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে শামিল হওয়ার উৎসাহ তাঁরা দেখাননি। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পূর্ণিমা রুইদাসের বক্তব্য, সম্ভবত আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত সমীক্ষায় নাম ওঠেনি, তাই তাঁরা সরকারি আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি। তবে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে তাঁদের বাড়ি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পূর্ণিমা জানান, ভুল তথ্যের জেরেই ওঁদের রেশন কার্ডের নির্দিষ্ট সূচিতে নাম ওঠেনি। তা ঠিক করা হবে।

মহকুমাশাসক (সিউড়ি) কৌশিক সিংহ বলেন, ‘‘পাঁচটি যাযাবর পরিবারে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিহ্নিত করা হবে।’’ খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস জানিয়েছেন, ওই সব পরিবারের প্রত্যেককে সপ্তাহে ১২ কিলোগ্রাম গম দেওয়া হবে।

Poverty Khayrasole Hazratpur Rasa Village
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy