Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Citizen Amendment Act

আধার-চিঠির পরে সিএএ, শঙ্কা

প্রশাসনের একটি অংশের দাবি, যাঁরা আধার সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ২০১৪ সালের পরে পড়শি দেশ থেকে এখানে এসেছেন।

CAA

নতুন এই আইন নিয়ে এখনও সব সংশয় কাটেনি। — ফাইল চিত্র।

সৌমেন দত্ত
জামালপুর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪ ০৫:৩৮
Share: Save:

কিছু দিন আগেই তাঁদের কাছে আধার ‘নিষ্ক্রিয়’ করার বার্তা দিয়ে চিঠি এসেছিল। তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটার মধ্যেই সিএএ কার্যকর করেছে কেন্দ্র। নতুন এই আইন নিয়ে এখনও সব সংশয় কাটেনি। উল্টে আতঙ্কের আবহ পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের নানা গ্রামে। বাসিন্দাদের দাবি, সিএএ-র জন্য যে সব নথি চাওয়া হয়েছে, তার সব ক’টি অনেকের কাছেই নেই। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা।

মাসখানেক আগে জামালপুর-সহ কয়েকটি এলাকার কিছু বাসিন্দাকে চিঠি দিয়ে ‘জানানো হয়’, আধার কার্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়েছে। চিঠি প্রাপকদের অনেকে দাবি করেছিলেন, রেশন তোলা বা ব্যাঙ্কের কাজকর্মে তাঁদের আধার-তথ্য কাজ করছে না। কয়েক দিন পরে অবশ্য তা ফের চালু হয়ে যায়। কেন্দ্রের তরফেও আশ্বস্ত করা হয়, কারও আধার বাতিল হচ্ছে না। এর পরেই কেন্দ্র সিএএ চালু করেছে। দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে কি না, সেই প্রশ্নও তৈরি হয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে।

প্রশাসনের একটি অংশের দাবি, যাঁরা আধার সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ২০১৪ সালের পরে পড়শি দেশ থেকে এখানে এসেছেন।

সম্প্রতি জামালপুরের আবুঝহাটির যূথিহাটিতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে এমনই আতঙ্ক, অপরিচিত কারও কাছে নিজেদের নাম-পরিচয়ও বলতে চাইছেন না বাসিন্দাদের অনেকে। এই গ্রামে প্রায় ৭০ জনের কাছে আধার সংক্রান্ত চিঠি এসেছিল। তেমন এক বাসিন্দা বলেন, “বাঁচার তাগিদে প্রায় এক কাপড়ে চলে এসেছিলাম। তখন কি এত কিছু ভেবেছিলাম?” পাশে দাঁড়ানো এক মহিলার প্রশ্ন, “সব কিছু হারিয়েই তো জন্মভিটে ছেড়েছি। তখন প্রাণে বাঁচব, না কি নথি নিয়ে আসব?” একই আতঙ্ক জামালপুরের জৌগ্রামেও।

দুশ্চিন্তার পরিবেশের মধ্যে এমনও রটেছে যে, সিএএ-র ফর্ম পূরণের জন্য কারও কারও কাছে ইতিমধ্যে ফোন এসেছে। আবুঝহাটি ১ পঞ্চায়েতের প্রধান রমজান শেখ বলেন, “সিএএ ফর্ম পূরণ করার কথা বলে ফোন এসেছে বলে কয়েক জন জানিয়েছেন। তবে কোথা থেকে সেই ফোন এসেছে, তা তাঁরা জানাতে পারেননি।” এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ ভরসা রাখছেন রাজ্য প্রশাসনের উপরে। স্থানীয় বাসিন্দা বিপুল বিশ্বাস, সজল ব্যাপারীদের কথায়, “প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। আমরা বেশি চিন্তা করে আর কী করব?”

জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাজির দাবি, “সবার মধ্যেই ভয়, সংশয় কাজ করছে।” বৃহস্পতিবার জামালপুরের জৌগ্রামে মতুয়াদের এক সম্মেলনে আসেন ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, “যে ন’টি তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করার কথা বলা হচ্ছে, তা দেশের কেউ পূরণ করতে পারবেন না।” বাসিন্দাদের তাঁর পরামর্শ, “ফর্ম পূরণ করবেন না। আমরা এ দেশের নাগরিক। কেউ বিতাড়িত করতে পারবে না।”

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা বক্তব্য, “মমতা ঠাকুরেরা রাজনৈতিক দ্বিচারিতা করছেন।” পূর্ব বর্ধমান জেলার বিজেপি নেতাদেরও দাবি, নাগরিকত্বের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার ওই বাসিন্দাদের বড় সুযোগ দিয়েছে। তা তাঁদের গ্রহণ করা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Citizen Amendment Act CAA Amit Shah West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE