প্রতীকী ছবি।
ষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি এসেছেন নতুন জামাই। গাছপাকা আম, ঘরে পাতা টক দই, এলাকার বিখ্যাত মিষ্টি, জমাট ক্ষীর— খাতির-যত্নে কোনও খামতি নেই। কিন্তু সবই যে নিরামিষ!
বাবাজীবনের মনের কথাটা যেন মুহূর্তে পড়ে নিলেন শ্বশুরমশাই। মুচকি হেসে তিনি বলছেন, ‘‘এ গাঁয়ে এমনই নিয়ম বাবা। সেই কবে থেকে চলে আসছে। আমিষের ব্যবস্থাও আছে। তবে তা গাঁয়ের বাইরে। মেয়ে তোমাকে কিছু বলেনি? কই রে, মা...।’’
বাবলা নদীর পাড়ে নিরামিষ গ্রাম কাঞ্চনগড়িয়া। জেলা মুর্শিদাবাদ। এখান থেকে থেকে মেরেকেটে সাতশো মিটার দূরে নারায়ণপুর ও খয়রা গ্রাম। সেখানে অবশ্য আমিষে আপত্তি নেই।
আরও পড়ুন: সঙ্গে চাই শাড়ি, পানু শ্বশুরবাড়ি
ষষ্ঠীর দুপুরে সেই গ্রামের কোনও গাছতলায় টাঙানো হয় শামিয়ানা। জ্বলে ওঠে উনুন। বেশ কয়েক জন শ্বশুর জোট বেঁধে ব্যবস্থা করেন দিশি মুরগি কিংবা কচি পাঁঠার। সন্ধ্যার পরে পোকা ঘেরা হ্যাজাকের আলোয় বাবাজীবনেরা সেখানেই পাত পাড়েন। পোড় খাওয়া জামাইরা অভ্যস্ত হয়ে গেলেও নতুনরা একটু কিন্তু কিন্তু করেন বটে। কিম্তু ওই যে, যস্মিন দেশে যদাচার!
গ্রামের লোকজন জানাচ্ছেন, প্রায় পাঁচশো বছর ধরে কাঞ্চনগড়িয়াতে এই রীতিই চলে আসছে। কথিত আছে, এই গ্রামের দ্বিজহরি দাসের বাড়িতে এসেছিলেন এক বৈষ্ণব। তিনি নিদান দেন, গ্রামে প্রাণিহত্যা নৈব নৈব চ। স্থানীয় শক্তিপুর কেএমসি ইনস্টিটিউশনের ইংরেজির শিক্ষক প্রদীপনারায়ণ রায় বলছেন, ‘‘সেই নির্দেশের আজও কোনও অন্যথা হয়নি।’’
সুরজিৎ ঘোষ, অসীম পাল, অভিজিৎ মণ্ডলদের মতো অনেকেই সোমবার বিকেলে চলে এসেছেন শ্বশুরবাড়ি। আজ, মঙ্গলবার দিনভর নিরামিষ ষষ্ঠী সেরে সন্ধ্যায় বসবেন পাশের গাঁয়ে মাংসের আসরে। বাবাজীবনেরা বলছেন, ‘‘ষষ্ঠী শেষ হবে পিকনিকের মেজাজে। মন্দ কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy