তিন দশক ধরে এলাকার শেষ কথা হয়ে ওঠা হিম্মত ওরফে জয়প্রকাশ চৌহানকে গ্রেফতারের পর অনেকটাই যেন খোলা হাওয়া শিলিগুড়ির চম্পাসারিতে।
পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের আশঙ্কা ছিল, শনিবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করার পর, চম্পাসারি এলাকার পরিস্থিতি ‘খারাপ’ হতে পারে। সকাল থেকেই বিক্ষোভ, মিছিল হতে পারে বলে এলাকায় খবর চাউর হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, সাধারণ মানুষ ‘সাথ’ না দেওয়ায়, তা আর করেনি হিম্মতের অনুগামীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা জানান, এত দিন ওই নেতার কথাতেই এলাকায় চলতে হত। মিছিল, মিটিং সবেতে যোগ দেওয়ার ফতোয়া থাকত। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। নিজের দলে বিরোধীদের হুমকি দেওয়া, এমনকী মারধর করার অভিযোগও শোনা যেত। শনিবার রাতের পর যেন সব বদলে গিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের সিদ্ধান্তে তাই সবাই খুশি। রবিবার সে কারণেই পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল চম্পাসারি, মিলনমোড়, গুলমা এলাকা।
রবিবার ছুটির দিন হলেও দোকানপাট, বাজারঘাট সব খোলাই ছিল। টোটো, অটোও স্বাভাবিকভাবেই চলছে রাস্তায়। বাসিন্দারা জানান, এলাকার শ্রীগুরু বিদ্যামন্দির হাই স্কুলের পাশে একটি টিনের ঘরে অফিস খুলে তৃণমূলে পতাকা লাগিয়ে নিজের ‘সাম্রাজ্য’ চালাতেন হিম্মত। রবিবার সকাল থেকে সেই পার্টি অফিসে দু’-চারজন অনুগামীর দেখা মিললেও বেলা বাড়তেই ওই অফিস ফাঁকা হতে থাকে। দুপুরের পর তালা মেরে দেওয়া হয় ওই অফিসে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দাদাগিরি, জমি দখল, তোলাবাজি, বালির ব্যবসা, বেআইনি নির্মাণ কি না হয় এলাকায়। সবই হিম্মত সিংহের অঙ্গুলি হেলনে চলত। এবার তা বন্ধ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এলাকার চায়ের দোকান, সাধারণ দোকান, সেলুন সর্বত্র এ দিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন হিম্মত। মিলন মোড়ের দিকে যেতেই হিম্মতের হার্ডওয়ারের দোকান রয়েছে। মালিক গ্রেফতার হওয়ার পর সেই দোকানও বন্ধ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘শাসক দলে থেকে অনেকেই দলকে ব্যবহার করে। এত দিন কেন হিম্মতের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না সেটাই প্রশ্ন। আরও যারা এসব বেআইনি কাজে জড়িত তাদেরও ধরা উচিত।’’
চম্পাসারি এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সরকারি হোক বা বেসরকারি কোনও জমি, দোকান লেনদেন হলেই তা নজর এড়াত না হিম্মতের অনুগামীদের। সন্ধের পর অন্তত গোটা ৫০ জন অনুগামীদের নিয়ে দরবারে বসতেন হিম্মত। কোনও অনুগামীর কাজে খুশি হলে তাকে বখশিশ দিতে কার্পণ্য করতেন না। দিনভর কোথায় কী হচ্ছে তার হালহকিকৎ জেনে কোথায়, কী করতে হবে তার নির্দেশ দিতেন।
নর্মদা বাগান, চম্পাসারি বাজারের কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা জানান, গত পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই এলাকায় হিম্মতের দাপট বাড়তে থাকে। সম্প্রতি, একটি নির্মীয়মাণ বহুতলে অনুগামীদের নিয়ে নানা বিষয়ে ‘ব্লু-প্রিন্ট’ তৈরি হত বলে শোনা যায়। এ দিন মিছিলের প্রস্তুতি নিয়েছিল অনুগামীরা। কিন্তু নেতার জামিন নাকচ হতেই আর সেই রাস্তায় পা বাড়াননি কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy